সিলেটে বারবার ভূমিকম্প কীসের ইঙ্গিত?

শনিবার (২৯ মে) চার বার ভূকম্পনের পর রবিবার (৩০ মে) আবারও ভূমিকম্পে কেঁপে ওঠে সিলেট। দফায় দফায় ভূমিকম্পে সিলেট নগরীর ৮ নম্বর ওয়ার্ডের পাঠানটুলা এলাকায় দুটি ছয়তলা ভবন একে অপরের ওপর হেলে পড়েছে। এ অবস্থায় দুটি ভবনের বাসিন্দাদের অন্যত্র সরে যাওয়ার নির্দেশ দিয়েছে সিটি করপোরেশন (সিসিক) ও পুলিশ।

এর উৎপত্তিস্থল বাংলাদেশ না হলেও বাংলাদেশে সক্রিয় ভূতাত্ত্বিক ফাটলের কারণে বড় ধরনের ভূমিকম্প হতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন অনেকেই। এদিকে এই কম্পন থেকে বাঁচতে সচেতনতা ও মহড়ার কোনও বিকল্প নেই বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

সিলেটে প্রতিনিধি জানান, রবিবার (৩০ মে) ভোর ৪টা ৩৫ মিনিটে সিলেটে মৃদু ভূকম্পন অনুভূত হয়। সিলেট আবহাওয়া অফিসের প্রধান আবহাওয়াবিদ সাঈদ আহমদ চৌধুরী জানান, রিখটার স্কেলে দুই মাত্রার ভূকম্পন রবিবার ভোরে অনুভূত হয়েছে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটের সীমান্তবর্তী এলাকা।

গতকাল শনিবার (২৯ মে) সিলেটে চার ঘণ্টার ব্যবধানে চারবার ভূমিকম্প হয়। ওই দিন সকাল ১০টা ৩৭ মিনিটে প্রথম ভূকম্পন অনুভূত হয়। এর পর সকাল ১০টা ৫১ মিনিট, সাড়ে ১১টা এবং বেলা ২টায় ফের ভূমিকম্প হয়। আবহাওয়াবিদরা বলছেন, এটা প্রথম ভূকম্পনের আফটার শক।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের দুর্যোগ বিজ্ঞান ও ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক এ কে এম মাকসুদ কামাল বলেন, ‘বাংলাদেশে বড় ভূমিকম্প হওয়ার শঙ্কা তো আগে থেকেই আছে। সিলেটে কম্পন অনুভূত হয়েছে। এর উৎপত্তিস্থল ছিল ভারতের মেঘালয়। সেখানে অসংখ্য ভূতাত্ত্বিক ফাটল রেখা আছে। যার ফলে বড় ভূমিকম্প বা ছোট ভূমিকম্প দুটোই হতে পারে।’

তিন বলেন, ‘১৮৯৭ সালে এই এলাকায় একটি বড় ভূমিকম্প হয়েছিল। বড় ভূমিকম্প হওয়ার জন্য যে শক্তির প্রয়োজন তা হতে আরও দীর্ঘ সময়ের প্রয়োজন আছে।’

মাকসুদ কামাল বলেন, ‘এখনই বড় ভূমিকম্পের আশঙ্কা করি না; যদিও বাংলাদেশে বেশ কিছু সক্রিয় ভূতাত্ত্বিক ফাটল আছে। বাংলাদেশের উত্তর-পশ্চিমে, দক্ষিণ পশ্চিমে এবং পশ্চিমাঞ্চলে এ রকম বেশ কিছু ফাটল আছে। এর যেকোনোটিই যেকোনও সময় সক্রিয় হওয়ার অবস্থা রয়েছে।’

ভূমিকম্পের ঝুঁকি কমাতে তিনি বলেন, ‘প্রথম কাজ হচ্ছে, বিল্ডিং কোড মেনে ভূমিকম্পনরোধী এমন বিল্ডিং তৈরি করা, যেটি হবে কম্পন সহনীয়। উদ্ধার ও অনুসন্ধান করার জন্য যেসব সংস্থা আছে, তাদের দক্ষতা বাড়িয়ে আরও শক্তিশালী করতে হবে। একইসঙ্গে বড় ভূমিকম্প হলে সাধারণ মানুষ কী করবে সে জন্য সচেতনতা বাড়াতে বড় বড় ভবন ও প্রতিটি ওয়ার্ডে মহড়া হওয়া দরকার।’

আবহাওয়া অধিদফতর জানায়, গতকাল বেলা তিনটা পর্যন্ত পাঁচ বার কম্পন অনুভূত হয়েছে। এর মধ্যে চারটি হলো ৪.১, ৪, ৩ ও ২.৮ মাত্রার।

ঢাক বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব বিভাগে অধ্যাপক সৈয়দ হুমায়ুন আখতার বলেন, ‘এই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল ছিল সিলেটেরই জৈন্তা এলাকায়। জৈন্তা এলাকার ডাউকি ফল্টেই ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল। ডাউকি ফল্ট পূর্ব-পশ্চিমে প্রায় তিনশ’ কিলোমিটার বিস্তৃত এবং এটি বাংলাদেশের অভ্যন্তরেই পলিমাটি দিয়ে ঢাকা।’ তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশের অবস্থান ইন্ডিয়ান, ইউরেশিয়ান ও বার্মা তিনটি গতিশীল প্লেটের সংযোগস্থলে। এই সংযোগস্থলে একটি শক্তিশালী ভূমিকম্পের শক্তি জমা হয়েছে। যে শক্তি সঞ্চিত হয়ে আছে তাতে আট মাত্রার পর্যন্ত ভূমিকম্প হতে পারে, যদি একবারে হয়। হলে একবারেও হতে পারে আবার ভেঙে ভেঙে বা দফায় দফায়ও হতে পারে। এতে মাত্রা কমে আসতে পারে। কিন্তু কোন মাত্রার হবে, এটা আগে থেকে অনুধাবন সম্ভব না। তাই আমাদের সতর্ক থাকার পাশাপাশি প্রস্তুতি নিতে হবে। মহড়ার ব্যবস্থা এবং মানুষকে সচেতন করা জরুরি।’