সংসদীয় কমিটির সুপারিশ নারী জাতির জন্য অসম্মানজনক

মৃত্যুবরণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধাদের গার্ড অফ অনার প্রদানে নারী নির্বাহী অফিসারের বদলে বিকল্প হিসাবে পুরুষ চেয়ে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির সুপারিশকে সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক বলে দাবি করেছেন দেশের নারী সমাজ।তারা বলছেন এই ধরনের সুপারিশ সমগ্র নারী জাতির জন্য অসম্মানজনক।

সংসদীয় কমিটির এই সুপারিশের ঘোর বিরোধিতা করে নারীরা বলেন, দেশটা সর্বনাশের দিকে চলে যাচ্ছে! সংসদের মতো পবিত্র জায়গার পলিসি মেকাররা যখন এরকম চিন্তা করেন তখন নারীর ক্ষমতায়ন প্রকৃত অর্থে কতটুকু এগিয়েছে এদেশ, সেটা সহজেই অনুমান করা যায়। 

এ প্রসঙ্গে খুশী কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,  ‘ স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীতে মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি থেকে এ ধরনের একটি সুপারিশ আমাকে আহত করেছে। এই সুপারিশ মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ও সংবিধান পরিপন্থী।’ খুশী কবির বলেন,  ‘এই মন্ত্রণালয় ৭১ এর চেতনা মুছে দিতে চায় কীনা সেই প্রশ্নও আমার মনে উদিত হয়েছে।’

এই সুপারিশ অযৌক্তিক দাবি করে তিনি বলেন, ‘একজন মুক্তিযোদ্ধাকে গার্ড অফ অনার দেন রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালনকারী কর্মকর্তা, তিনি নারী পুরুষ উভয়ই হতে পারেন। তিনি তো রাষ্ট্রের দায়িত্ব পালন করছেন মাত্র। এখানে নারী-পুরুষের বিষয় আসবে কেন? তাছাড়া রাষ্ট্র যখন মুক্তিযোদ্ধাকে শ্রদ্ধা জানাচ্ছে সেখানে দায়িত্বরত সবচেয়ে সিনিয়র কর্মকর্তাই গার্ড অফ অনার প্রদান করবেন। আমি মনে করি এই সুপারিশ ইউএনওকে হেয় করে এবং ওই মুক্তিযোদ্ধাকেও হেয় প্রতিপন্ন করে। রাষ্ট্রের যেসব পলিসি মেকারদের মাথা থেকে এসেছে, সেসব পলিসি মেকারদের মানসিকতা দেখে আমি ভীত।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের নৃবিজ্ঞানের শিক্ষক জোবাইদা নাসরীন বলেন, ‘এক্ষেত্রে জেন্ডার ইস্যু তুলে নারীর ক্ষমতায়নের ক্ষেত্রে স্পষ্টতই তারা প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করছে’। তিনি বলেন, ‘সংবিধানে নারী সমতার যে কথা বলা হয়েছে২৮ (১) ও ৩২-এ। এই সুপারিশ সংবিধানের সঙ্গে সাংঘর্ষিক। এই সুপারিশ পুরুষতান্ত্রিক ক্ষমতাকে বৈধ ও জোরদার করার ক্ষেত্রে স্পষ্ট ভূমিকা রাখে।’

বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ শ্যামলী নাসরিন চৌধুরী বলেন, এই ধরনের সুপারিশ পুরো নারী জাতিকে অসম্মান করা। তিনি প্রশ্ন রেখে বলেন, ‘দেশটা কী সর্বনাশের দিকেই যাচ্ছে?’