স্বাস্থ্যমন্ত্রীর বক্তব্যের জবাবে যা বললো টিআইবি

করোনাভাইরাসের সংকট মোকাবিলা নিয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) গবেষণা প্রতিবেদনকে ‘আগাগোড়া মিথ্যা ও উদ্দেশ্যপ্রণোদিত’ আখ্যা দিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেকের করা মন্তব্যের জবাব দিয়েছে সংস্থাটি। টিআইবি বলছে, এই প্রতিবেদনকে মিথ্যা আখ্যায়িত না করে বরং চিহ্নিত ঘাটতিগুলোকে দূর করা প্রয়োজন। প্রতিবেদনের সুপারিশগুলো নিয়ে পদক্ষেপগ্রহণের মাধ্যমে অতিমারি নিয়ন্ত্রণে অধিকতর কার্যকর ভূমিকা রাখা সম্ভব বলেও মনে করে সংস্থাটি।

সোমবার (১৪ জুন) গণমাধ্যমে পাঠানো এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এ জবাব জানিয়েছে সংস্থাটি।

টিআইবি গত ৮ জুন ‘করোনা ভাইরাস সংকট মোকাবিলা: কোভিড-১৯ টিকা ব্যবস্থাপনায় সুশাসনের চ্যালেঞ্জ’ (তৃতীয় পর্ব) শীর্ষক একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করে। সেই গবেষণা প্রতিবেদনের আলোকে তারা বেশ কিছু সুপারিশও করে। করোনায় মারা যাওয়া হৃদরোগ ইনস্টিটিউট ও হাসপাতালের সহকারী অধ্যাপক ডা. মাহমুদ মনোয়ারের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে আয়োজিত ভার্চুয়াল কর্মসূচিতে এই গবেষণা প্রতিবেদন নিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক কিছু মন্তব্য করেন।

প্রতিবেদনটি ‘আগাগোড়াই ভুল তথ্যসংবলিত’ এবং ‘শীতাতপনিয়ন্ত্রিত ঘরে বসে টিআইবি মনগড়া সমালোচনা করছে’ বলেও স্বাস্থ্যমন্ত্রী মন্তব্য করেন। টিআইবি বলছে, ‘প্রতিবেদনটি ভুল তথ্য সংবলিত’ এবং ‘ঘরে বসে তৈরি করা’ এ কথা বলার কোনও সুযোগ নেই। কারণ আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত গবেষণা পদ্ধতি অনুসরণ করে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ উভয় উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে টিআইবি এ প্রতিবেদন প্রকাশ করে। এ গবেষণায় জাতীয় ও স্থানীয় পর্যায়ের স্বাস্থ্য অধিদফতর ও অন্যান্য দফতরের কর্মকর্তা, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ, টিকা প্রদানে অগ্রাধিকারপ্রাপ্ত প্রতিষ্ঠান ও জনগোষ্ঠীর প্রতিনিধি এবং সাংবাদিকদের কাছ থেকেও তথ্য সংগ্রহ করা হয়েছে।

টিআইবি বলছে, বাংলাদেশে র‌্যাপিড অ্যান্টিজেন ও জিন এক্সপার্ট টেস্টের সম্প্রসারণ হলেও আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার এখনো ৩০টি জেলার মধ্যে সীমিত রয়েছে। ১২৯টি আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগারের মধ্যে ৭৮টি পরীক্ষাগার রাজধানীতেই আছে। এরমধ্যে ৭৭টি বেসরকারি পরীক্ষাগার। ফলে জেলা-উপজেলা পর্যায়ের দরিদ্র মানুষের নমুনা পরীক্ষার সুযোগ খুব বেশি সম্প্রসারিত হয়নি এবং এখনো দেশের ৩৬টি জেলায় আরটি-পিসিআর পরীক্ষাগার না থাকায় প্রতিবেদন পেতে কোথাও কোথাও এখনো চার থেকে পাঁচদিন অপেক্ষা করতে হচ্ছে। সরকারি আইসিইউ শয্যাগুলোর অধিকাংশ শহরকেন্দ্রিক। কোভিড মোকাবিলায় একটি প্রকল্পের আওতায় সারা দেশের প্রতিটি জেলা পর্যায়ের হাসপাতালগুলোতে ১০টি করে আইসিইউ শয্যা প্রস্তুত করার পরিকল্পনা করা হলেও এক বছরের বেশি সময় অতিবাহিত হলেও এখনো তা বাস্তবায়ন করা হয়নি।

স্বাস্থ্য খাতে এখনও অনিয়ম-দুর্নীতি অব্যাহত রয়েছে উল্লেখ করে দুর্নীতি বিরোধী সংগঠনটি বলেছে, সংঘটিত অনিয়ম-দুর্নীতির বিরুদ্ধে বিগত এক বছরেও কোনও ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। দুর্নীতিতে জড়িত ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠানের সংশ্লিষ্ট গুটিকয়েক ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিলেও স্বাস্থ্য বিভাগের কোনো কর্মকর্তা-কর্মচারীকে আইনের আওতায় আনা হয়নি।

ভারতের সঙ্গে ভ্যাকসিন ক্রয় চুক্তি নিয়ে টিআইবি জানায়, যৌক্তিক কারণ না দেখিয়ে টিকা আমদানিতে তৃতীয় পক্ষের অন্তর্ভুক্তির মাধ্যমে তৃতীয় পক্ষের লাভবান হওয়ার সুযোগ তৈরি করে দেওয়া হয়েছে। এই ক্রয় চুক্তির ক্ষেত্রে স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় ও বেক্সিমকো ফার্মার কর্তৃপক্ষের পরস্পরবিরোধী বক্তব্য পাওয়া গেছে। পাবলিক প্রকিউরমেন্ট বিধিমালা-২০০৮ অনুসারে ক্রয় পরিকল্পনা ও ক্রয় চুক্তি সম্পাদন নোটিশ সিপিটিইউ-এর ওয়েবসাইটে প্রকাশ করার কথা হলেও তা প্রকাশ করা হয়নি।

করোনা অতিমারী নিয়ন্ত্রণে সুশাসনের ক্ষেত্রে ঘাটতিসমূহ চিহ্নিত করে এবং প্রয়োজনীয় সুপারিশ তুলে ধরে প্রতিবেদন প্রকাশের মাধ্যমে টিআইবি এই অতিমারি নিয়ন্ত্রণে সরকারের সহযোগী ভূমিকাই পালন করছে বলেও বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়েছে।