লকডাউনে আটকেপড়া চাকরিজীবীদের কী হবে?

উপ-সচিব বজলুল খন্দকার (ছদ্মনাম) পরিবার নিয়ে থাকেন গাজীপুরের ধীরাশ্রমে নিজবাড়িতে। নিজের গাড়িতে অফিস করতে সচিবালয়ে আসা-যাওয়া করে আসছেন। মঙ্গলবার (২২ জুন) সকালে গাজীপুরের কাছে পুলিশ তার গাড়ি আটকে দেয়। অনেক বুঝিয়ে ও পরিচয় দিয়ে কোনোমতে নির্ধারিত সময়ের ৪০ মিনিট পর সচিবালয়ে পৌঁছান তিনি। চিন্তায় আছেন, এভাবে প্রতিদিন আসা-যাওয়া সম্ভব? মঙ্গলবার (২২ জুন) এই প্রতিবেদকের কাছে দুশ্চিন্তার কথা জানান তিনি।

জানা গেছে, জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়ের এক অতিরিক্ত সচিবও থাকেন ধামরাইতে। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন যুগ্মসচিব, অর্থ ও গণপুর্ত মন্ত্রণালয়ের দুই উপ-সচিব থাকেন নারায়ণগঞ্জের জালকুড়ি। এর বাইরে রাজধানীর আশপাশের এসব জেলা থেকে সরকারি স্টাফ বাসে করেও অনেক কর্মচারী সচিবালয়সহ রাজধানীর বিভিন্ন সরকারি অফিসগুলোতে দায়িত্ব পালন করছেন। বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ও বিভিন্ন করপোরেট হাউস তো আছেই। যারা কোম্পানি বা নিজেদের গাড়িতে রাজধানীতে অফিস করছেন নিয়মিত। তাদেরও একই ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে মঙ্গলবার। তাদেরও প্রশ্ন- আগামী দিনগুলোতে অফিস করবেন কী করে?

আবার রাজধানীতে থাকা অনেক সরকারি-বেসরকারি ও জরুরি সেবাদানকারী দফতরের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা রাজধানীর আশপাশের জেলাগুলোতে অফিস করেন। তারাও মঙ্গলবার একই ঝামেলা পড়েন। একই প্রশ্ন তাদেরও।

রাজধানীর বাইরে প্রতিদিনই করোনা সংক্রমণ বাড়ছে। সেই হারে ভালো অবস্থানে রয়েছে ঢাকা। তাই ঢাকাকে বাঁচাতে আশপাশের সাত জেলা- মুন্সীগঞ্জ, মানিকগঞ্জ, নারায়ণগঞ্জ, গাজীপুর, রাজবাড়ী, মাদারীপুর ও গোপালগঞ্জে কঠোর লকডাউন চলছে ভোর ৬টা থেকে। চলবে ৩০ জুন মধ্যরাত পর্যন্ত। এসব জেলা থেকে ঢাকায় প্রবেশপথে বসানো হয়েছে পুলিশের পাহারা।

এ বিষয়ে কথা বলতে জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় ও মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের একাধিক শীর্ষ পর্যায়ের কর্মকর্তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে কেউই কথা বলতে রাজী হননি। মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ থেকে সোমবার (২১ জুন) জারি করা প্রজ্ঞাপনেও এ নিয়ে নির্দেশনা নেই। পুলিশ কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, আগামীকাল থেকে চেকপোস্টগুলোয় কড়াকড়ি আরও বাড়বে।

এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের ভুক্তভোগী উপসচিব পদমর্যদার এক কর্মকর্তা নাম প্রকাশ না করার শর্তে জানিয়েছেন, মহামারি ঠেকাতে সরকারের উদ্যোগে আমাদেরও সহায়তা করা প্রয়োজন। কিন্তু আমরা যারা ঢাকার বাইরে থেকে এসে সচিবালয়ে অফিস করি, তাদের পাস দেওয়া যায় কিনা তা বিবেচনা করে দেখা দরকার।’

প্রজ্ঞাপনে বলা হয়েছে, লকডাউন চলাকালে শুধু আইন-শৃঙ্খলা এবং জরুরি পরিষেবা যেমন-কৃষি উপকরণ (সার, বীজ, কীটনাশক, কৃষি যন্ত্রপাতি ইত্যাদি), খাদ্যশস্য ও খাদ্যদ্রব্য পরিবহন, ত্রাণ বিতরণ, স্বাস্থ্যসেবা, কোভিড-১৯ টিকা প্রদান, বিদ্যুৎ, পানি, গ্যাস/জ্বালানি, দমকল, নদীবন্দর, টেলিফোন ও ইন্টারনেট, গণমাধ্যম, বেসরকারি নিরাপত্তা ব্যবস্থা, ডাক সেবাসহ অন্যান্য জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয় পণ্য ও সেবার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট কর্মচারী ও যানবাহন এবং পণ্যবাহী ট্রাক/লরি এ নিষেধাজ্ঞার বাইরে থাকবে।