মধ্যরাতে নুর-রাশেদের বিবাদ, পরদিন ঠিকঠাক

এবার অভ্যন্তরীণ বাগবিতণ্ডায় জড়ালেন বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের সমন্বয়ক ও ডাকসুর সাবেক ভিপি নুরুল হক নুর এবং বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান। তারই প্রেক্ষিতে শৃঙ্খলাভঙ্গের অভিযোগে মুহাম্মদ রাশেদ খানকে দায়িত্ব থেকে সাময়িক অব্যাহতি দেন নুরুল হক নুর। যদিও তিনি সমন্বয়ক এবং রাশেদ ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক। নুরের এমন সিদ্ধান্তকে চরম অসাংগঠনিক উল্লেখ করে অপর এক নোটিশ জারি করেন রাশেদ। সেখানে নুরুল হক নুরকে কারণ দর্শাতে বলা হয়। তবে রবিবার (৪ জুলাই) সকাল থেকে করা বৈঠকে তা মিটমাট হয়ে গেছে বলে নিশ্চিত করেছে একটি সূত্র। বিষয়টি সামাজিক মাধ্যমে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে পরিষ্কার করা হবে বলে জানায় সূত্রটি।         

শনিবার (৩ জুলাই) দিবাগত রাতে এই পাল্টাপাল্টি কোন্দলের বিষয়টি আসে সামাজিক মাধ্যমে। শনিবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে নুরুল হক নুর একটি চিঠি পোস্ট করেন তার ফেসবুকে। সেখানে উল্লেখ করা হয়, বাংলাদেশ ছাত্র, যুব, শ্রমিক অধিকার পরিষদের কেন্দ্রীয় নির্বাহী পরিষদের যৌথ আলোচনা সভায় বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদের বর্তমান কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার সিদ্ধান্ত হয়েছে। একইসঙ্গে গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে নতুন নেতৃত্ব বাছাই ও কমিটি গঠনে ছয় সদস্যের নির্বাচন কমিশন গঠন করা হয়েছে। এছাড়া দলীয় শৃঙ্খলা রক্ষায় ২১ সদস্যের ডিসিপ্লিনারি বোর্ড গঠন করা হয়েছে।

এই দুই কমিটির কোথাও মুহাম্মদ রাশেদ খানের নাম নেই এবং সেই মিটিংয়ে তিনি উপস্থিত ছিলেন না বলেও দাবি করেন।

নুরুল হক নুরের স্বাক্ষরিত কমিটি বিলুপ্তের চিঠির পরিপ্রেক্ষিতে রাত প্রায় সাড়ে ৩টার দিকে মুহাম্মদ রাশেদ খান ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়কের সিল এবং স্বাক্ষরে নুরুল হক নুরকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেন। সেখানে বলা হয়, বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের যৌথ 'অনলাইন' আলোচনা সভায় ছাত্র অধিকার পরিষদের বর্তমানে কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে - মর্মে একটি প্রেস বিজ্ঞপ্তি আমাদের নজরে এসেছে। সেই প্রেক্ষিতে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ, কেন্দ্রীয় কমিটির পক্ষ থেকে জানাতে চাই, এমন যৌথ আলোচনা সভায় ভারপ্রাপ্ত আহ্বায়ক রাশেদ খান, যুগ্ম-আহ্বায়ক ফারুক হাসান, মশিউর রহমান,   সোহরাব হোসেন, মাহফুজুর রহমান খান, তারিকুল ইসলাম এবং সদস্য আরিফুল ইসলামসহ অনেকেই উপস্থিত ছিলেন না। এমতাবস্থায় কেন্দ্রীয় নেতাদের অনুপস্থিতিতে খোদ কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার এখতিয়ার কারও নেই।

রাশেদ খান সেই নোটিশে এও উল্লেখ করেন,  ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের যেখানে কোনও  ‘সমন্বয়ক’ পদবি নেই, সেখানে ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ নামে কেন্দ্রীয় কমিটি বিলুপ্ত করার ঘোষণা চরম অসাংগঠনিক কার্যকলাপ। ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের ‘সমন্বয়ক’ পদবি ব্যবহারকারী অভিযুক্তের বিরুদ্ধে কেন সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে না মর্মে ৭ কর্মদিবসের মধ্যে কারণ দর্শানোর নির্দেশ দেওয়া হলো। পাশাপাশি, ছাত্র অধিকার পরিষদের সকল বিশ্ববিদ্যালয়-জেলা-মহানগর ও উপজেলা কমিটিকে বিভ্রান্ত না হয়ে সাংগঠনিক কার্যক্রম চালিয়ে যেতে আহ্বান জানানো হলো।

রাশেদের চিঠির প্রেক্ষিতে তার ১০ মিনিট পর রাশেদ এবং যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাবকে অব্যাহতি দিয়ে আরেকটি চিঠি পোস্ট করেন নুর। সেখানে উল্লেখ করা হয়, ২ জুলাই বাংলাদেশ ছাত্র, যুব ও শ্রমিক অধিকার পরিষদের এক যৌথ মিটিংয়ে সংগঠনের শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজে যুক্ত থাকার অভিযোগে ‘বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ’ এর আহ্বায়ক মুহাম্মদ রাশেদ খান ও যুগ্ম আহ্বায়ক সোহরাব হোসেনকে সাময়িক দায়িত্ব থেকে অব্যাহতি প্রদান করা হলো। একইসঙ্গে কেন তাদেরকে স্থায়ী বহিষ্কার করা হবে না, তার কারণ দর্শাতে তদন্ত কমিটির কাছে যথাযথ ব্যাখ্যা প্রদান করার অনুরোধ করা হলো।

চিঠিতে চার সদস্যের তদন্ত কমিটির কথা বলা হয়, তাদের সবাই নুরের ঘোষিত নতুন নেতৃত্ব নির্বাচনে গঠিত নির্বাচন কমিশনের সদস্য।

এ প্রসঙ্গে নুরুল হক নূর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, রাজনীতি করতে গেলে একটু সমস্যা হয়। যাই হোক এটা একটু মতবিরোধ তৈরি হয়েছিল। আমরা বৈঠক করেছি। সব ভুল বোঝাবুঝি দূর হয়ে গেছে। বিষয়টি সম্পর্কে জানতে রাশেদ খানকে একাধিকার ফোন দেওয়া হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

২০১৮ সালের ৮ এপ্রিল কোটা সংস্কার আন্দোলন করে পরিচিতি পায় বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ। এর নেতৃত্বে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী হাসান আল মামুন, নুরুল হক নুর, মুহাম্মদ রাশেদ খান ও ফারুক হাসান। পরিষদটির আহ্বায়ক কমিটিতেও ছিলেন তারা।২০২০ সালের ফেব্রুয়ারিতে এই সংগঠনের নাম পরিবর্তন করে বাংলাদেশ ছাত্র অধিকার পরিষদ করা হয়। প্রথম দিকের নেতৃত্বের সবার মতেই এই নামকরণ করা হয়। এরপর যুব অধিকার পরিষদ, শ্রমিক অধিকার পরিষদ নামেও আলাদা আলাদা অঙ্গসংগঠন তৈরি করা হয়। ছাত্র যুব শ্রমিক অধিকার পরিষদের মুখ্য সমন্বয়কের দায়িত্ব দেওয়া হয় নুরুল হক নুরকে।