বিএডিসিতে অনিয়ম পর্ব-৫

প্রয়োজন ছাড়াই কেনা হয় ৫০ লাখ টাকার যন্ত্র

নানা অনিয়মে চলছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। এ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের পঞ্চম পর্ব থাকছে আজ।

প্রয়োজন ছাড়াই প্রায় অর্ধকোটি টাকার যন্ত্রপাতি কিনেছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। এসব যন্ত্রপাতি ফেলে রাখায় পুরো টাকাটাই যেতে পারে সরকারের ক্ষতির হিসাবে। প্রতিষ্ঠানটির এক নিরীক্ষা প্রতিবেদনে বেরিয়ে এসেছে এ তথ্য।

অয়োজনীয় এসব মেশিন বিক্রি বা এর ক্রয় প্রক্রিয়ায় জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে সুপারিশ করা হয়েছে প্রতিবেদনে।

জানা গেছে, বিএডিসি’র আওতাধীন হবিগঞ্জের ইটাখোলা প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্র, ঝিনাইদহের দত্তনগর বীজ উৎপাদন খামার ও একই জেলার করিঞ্চা বীজ উৎপাদন খামারের ২০১৬-২০১৭ হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছরে হিসাব নিরীক্ষায় দেখা যায়, প্রয়োজন না থাকা সত্ত্বেও বিএডিসি’র প্রধান কার্যালয় হতে সিড ড্রায়ার মেশিন কেনা হয়েছে।

ইটাখোলা বীজ প্রক্রিয়াজাতকরণ কেন্দ্রটির অফিসে বিএডিসির প্রধান কার্যালয় থেকে ২০১৫ সালের ১০ নভেম্বর নতুন সিড ড্রায়ার মেশিন সরবরাহ করা হয়। কিন্তু ওই অফিসে এ যন্ত্র আগেই চারটি ছিল। নতুন ড্রায়ারটির দাম ১৮ লাখ ৩১ হাজার টাকা। লগবইতে দেখা যায় মেশিনটি ২০১৮ সালের অক্টোবর পর্যন্ত ব্যবহারই করা হয়নি।

২০২০ সালের ১৩ জানুয়ারি হতে ১৯ জানুয়ারি পর্যন্ত ঝিনেইদহের দত্তনগর বীজ উৎপাদন খামারের রেকর্ডপত্র ঘেঁটে দেখা যায়, চাষাবাদের জন্য খুবই ছোট আকারের প্ল্যান্টার মেশিন খামারে পাঠানো হয়। যার দাম ১৩ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। এই মেশিন দিয়ে ৫০০ একরের খামারটির পাঁচ একরও চাষাবাদ করা যাবে না। এ ছাড়া মেশিনটি চালানোর মতো টেকনিশিয়ানও নেই সেখানে।

মেশিনটি খামারে বুঝিয়ে দেওয়ার সময় একজন মেকানিক সেটা চালু করেছিলেন। পরে তিনি নিজেও সেটা চাষাবাদের কাজে লাগাতে পারেননি।

একই সময়ে বস্তা সেলাই করার বিদ্যুৎচালিত একটি মেশিন ওই খামারে পাঠানো হয়। ওটাও ছিল অপ্রয়োজনীয়।

এসব অপ্রয়োজনীয় মেশিনারিজ যেখানে প্রয়োজন সেখানে স্থানান্তর বা ক্রয়ের সঙ্গে জড়িতদের দায় দায়িত্ব নির্ধারণ করে অর্থ উদ্ধারের ব্যবস্থা নিতে বলা হয়েছে প্রতিবেদনে।

স্বাক্ষর ছাড়াই ১১ লাখ টাকার জ্বালানি!
ইটাখোলা বীজ উৎপাদন খামারে ২০১৬-২০১৭ হতে ২০১৮-১৯ অর্থবছর পর্যন্ত বিভিন্ন বিলের মাধ্যমে প্রায় ১১ লাখ টাকার জ্বালানি তেল কেনা হয়েছে। খামার কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, এসব জ্বালানি খামারটির উৎপাদন কাজে ব্যবহৃত পাওয়ার টিলার, টাফি, সোনালিকা ও বেলারুশ ট্রাক্টরে ব্যবহার করা হয়েছে।

অফিস সহকারী লগবইতে তেলের বরাদ্দ লিপিবদ্ধ থাকলেও সেখানে পাওয়ার টিলার, ট্রাক্টর ড্রাইভার ও দায়িত্বপ্রাপ্ত কারও স্বাক্ষর নেই। জ্বালানি মজুদ রেজিস্ট্রারও হালনাগাদ করা নেই। আদৌ এ জ্বালানি ব্যবহার হয়েছে কি-না তা নিয়ে প্রতিবেদনে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে।

এসব বিষয়ে জানতে চাইলে বিএডিসি’র চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অনেক সময় দেখা যায় বিভিন্ন প্রকল্প থেকে যন্ত্রপাতি দেওয়া হয়। তখন প্রয়োজন না হলেও ধরে নেওয়া হয় কয়েক বছর পর যদি কোনও মেশিন অকেজো হয় তখন নতুনটা ব্যবহার করা হবে। কিন্তু এটাও আমি সমর্থন করি না। অপ্রয়োজনীয় যন্ত্র কিনে অর্থের অপচয় কোনোভাবেই কাম্য নয়। আমি বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।’