সব তলার কলাপসিবল গেটে তালা থাকায় বেড়েছে মৃত্যু

নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের সজীব গ্রুপের সেজান জুসের ছয়তলা ভবনটির পেছনে সিঁড়ি থাকলেও প্রতিটি তলার সিঁড়ির সামনে কলাপসিবল গেটে নেট দিয়ে বাইরে থেকে তালা লাগানো ছিল। এ জন্য নিচতলায় আগুনের ঘটনা ঘটলেও শ্রমিকরা কোনও তলা থেকে বের হতে পারেননি। পঞ্চম ও ষষ্ঠতলার তালা ভেঙে ২৫ শ্রমিক ছাদে উঠতে পারলেও দ্বিতীয়, তৃতীয় ও চতুর্থ তলার শ্রমিকরা আর বের হতে পারেননি। এ কারণে হতাহতের ঘটনা বেশি ঘটেছে। এছাড়া কারখানার অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থাও ছিল নাজুক।

ফায়ার সার্ভিস জানিয়েছে, ভবনটির ছাদে ওঠার আগে সিঁড়ি নেট দিয়ে বন্ধ ছিল। নেট থাকায় ছাদে উঠতে পারেনি শ্রমিকরা। এ কারণে আগুনে মৃত্যু বেড়েছে বলে জানিয়েছেন কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ। ঘটনাস্থল পরিদর্শন শেষে সাংবাদিকদের এ কথা বলেন তিনি।

পর্যাপ্ত নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছিল কিনা, কারখানা পরিচালনার জন্য যা যা করণীয় তা অনুসরণ করা হয়েছিল কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের কোনও গাফিলতি নেই। তদন্ত করলেই বেরিয়ে আসবে কী কারণে আগুনের ঘটনা ঘটেছে। তবে প্রাথমিকভাবে ফায়ার সার্ভিস আমাদের এমনটিই জানিয়েছে।’

কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের মহাপরিদর্শক মো. নাসির উদ্দিন আহমেদ বলেন, ‘এখানে নথিপত্র ঠিক আছে কিনা সেটা খতিয়ে দেখা হবে। এখানে আমিসহ আমার দফতরের অনেক কর্মকর্তাই আছেন। পুরো ঘটনা তদন্ত করে দেখবো। জেলা প্রশাসন থেকে ৯ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি হয়েছে। ফায়ার সার্ভিস থেকে পাঁচ সদস্যের কমিটি হয়েছে। আমাদের দফতর থেকেও তদন্ত করা হবে।’

ঘটনাস্থলে উপস্থিত কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদফতরের নারায়ণগঞ্জ জেলার প্রধান উপ-মহাপরিদর্শক সৌমেন বড়ুয়া বলেন, ‘আমাদের দফতর থেকে সেফটি বিষয়টি তদন্ত করছি। ডিআইজি, সেফটিকে প্রধান করে পাঁচ সদস্যের কমিটি হয়েছে। কমিটি ইতোমধ্যে কাজ শুরু করেছে।’

ফায়ার সার্ভিস কর্মী আশরাফুল আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রতিটি ফ্লোরে প্লাস্টিকের বোতল, কর্ক, পলিথিন, কার্টন, রঙ, ড্রামসহ বিভিন্ন কেমিক্যাল দেখা গেছে। এ কারণে আগুন নেভাতে দেরি হয়েছে।’

প্রসঙ্গত, রূপগঞ্জে সজীব গ্রুপের অঙ্গ প্রতিষ্ঠান হাসেম ফুড অ্যান্ড বেভারেজের সেজান জুস কারখানায় বৃহস্পতিবার (৮ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৫টায় আগুনের সূত্রপাত হয়। কারখানার ছয়তলা ভবনটিতে তখন প্রায় চারশ’র বেশি কর্মী কাজ করছিলেন। কারখানায় প্লাস্টিক, কাগজসহ মোড়ক তৈরির প্রচুর সরঞ্জাম থাকায় আগুন মুহূর্তে ছড়িয়ে পড়ে সব ফ্লোরে।

প্রচুর দাহ্য পদার্থ থাকায় কয়েকটি ফ্লোরের আগুন নিয়ন্ত্রণে আনতে ফায়ার সার্ভিসের ১৮টি ইউনিটের ২০ ঘণ্টার বেশি সময় লাগে। শুক্রবার (৯ জুলাই) দুপুরে কারখানার ভেতর থেকে ৪৯ জনের লাশ উদ্ধার করা হয়। এর আগে, আগুনে পুড়ে তিন জনের মৃত্যু হয়। সব মিলে এখন পর্যন্ত ৫২ জনের লাশ উদ্ধার হয়েছে। কারখানায় আগুনের ঘটনায় প্রায় অর্ধশতাধিক ব্যক্তি নিখোঁজ রয়েছেন। ঘটনা তদন্তে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে কমিটি গঠন করা হয়েছে।

আরও পড়ুন:

ফায়ার সার্ভিসের গাড়িতে ৪৯ লাশ 

আগুনে পোড়া লাশের সারি, স্বজনদের আহাজারি

দীর্ঘ সময়েও আগুন নেভাতে না পারায় স্থানীয়দের হামলা

যে কারণে দীর্ঘ সময়েও নিয়ন্ত্রণে আসেনি জুস ফ্যাক্টরির আগুন

১৭ ঘণ্টায় নেভেনি জুস কারখানার আগুন, নিহত ৩

কান্না চোখে স্বজনের খোঁজ (ফটো স্টোরি)

নারায়ণগঞ্জে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে ৭ সদস্যের কমিটি