বিএডিসিতে অনিয়ম পর্ব-১২

প্রকল্পের টাকা সরে গেলো অন্য অ্যাকাউন্টে!

নানা অনিয়মে চলছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। ফসলের বীজ, সার থেকে শুরু করে কৃষকের টাকাও আত্মসাৎ হয়েছে সংস্থাটিতে। এ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ১২তম পর্ব থাকলো আজ।

আর্থিক শৃঙ্খলা ভেঙে জিওবি ফান্ডের ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রকল্পের নিজস্ব আয়ের বিক্রয়লব্ধ হিসাবে স্থানান্তর করা হয়েছে। বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনের (বিএডিসি) বাস্তবায়নাধীন ডাল ও তৈল বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে টেকসই পুষ্টি নিরাপত্তা জোরদারকরণ প্রকল্প-এর ২০১৮-১৯ অর্থবছরে এ ঘটনা ঘটে।

বিপুল অঙ্কের টাকা আত্মসাতই এ ঘটনার উদ্দেশ্য হতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে সরকারের এক তদন্ত প্রতিবেদনে।

তদন্ত সূত্র জানিয়েছে, ২০১৯ সালের ১১ ডিসেম্বর থেকে ২২ ডিসেম্বর পর্যন্ত তদন্ত করে এ অনিয়ম খুঁজে পায় সংস্থাটি। এ সময়সীমায় প্রতিষ্ঠানটির নগদ বই, ব্যাংক হিসাব বিবরণী ও অন্যান্য নথিপত্র যাচাই করা হয়।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, ২০১৮-১৯ অর্থবছরে প্রকল্পের জিওবি বরাদ্দের অর্থ এসটিডি (জিওবি) হিসাব হতে পত্র নং ৯৪০-এর মাধ্যমে ২০১৯ সালের ১৯ ফেব্রুয়ারি ৬ কোটি ৮০ লাখ টাকা প্রকল্পের নিজস্ব আয়ের (বিক্রয়লব্ধ) হিসাবে স্থানান্তর করা হয়। এতে সরকারের আর্থিক ক্ষতি হয়েছে বলে জানানো হয়। এ আর্থিক শৃঙ্খলা পরিপন্থী কাজের জন্য দায়ীদের বিরুদ্ধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে অনুরোধ করা হয় তদন্ত প্রতিবেদেনে।

উন্নয়ন প্রকল্পগুলোর অর্থ অবমুক্তি ও ব্যবহার নির্দেশিকা-২০১৮ এর প্রকল্পগুলোর অর্থ ব্যবহার পদ্ধতি সংক্রান্ত ছকের ১৯(১৩)-এ বর্ণিত অনুচ্ছেদ অনুযায়ী প্রত্যেক প্রকল্পের জন্য পৃথক ব্যাংক হিসাব রাখতে হবে। সিএও এবং উন্নয়ন সহযোগী সংস্থা থেকে পাওয়া অর্থ ওই হিসাবে জমা নিশ্চিত করতে হবে।

এই হিসাবের অর্থ শুধু সংশিষ্ট প্রকল্পের পিপি অনুযায়ী নির্ধারিত কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য ব্যবহার করা যাবে। কোনও অর্থ অন্য কোনোভাবে বা অন্য উদ্দেশ্যে স্থানান্তর করা যাবে না। কিন্তু এ ক্ষেত্রে ওই আদেশ না মেনে প্রকল্পের নিজস্ব আয়ের হিসাবে অর্থ স্থানান্তর করা হয়।

আর সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা বলছেন প্রকল্পের নথিপত্র পর্যালোচনা করে জবাব দেওয়া হবে।

ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যেহেতু সরকারি অডিটে এই অনিয়মগুলো চিহ্নিত করা হয়েছে, তাহলে নিশ্চয়ই এগুলোর সত্যতা রয়েছে। প্রতিবেদনে জড়িতদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্যও সুপারিশ করা হয়েছে। তাই এতে জড়িতদের বিরুদ্ধে দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে অর্থ উদ্ধার করা উচিৎ।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএডিসি’র চেয়ারম্যান ড. অমিতাভ সরকার বলেন, ‘আমরা এরই মধ্যে সংশ্লিষ্টদের কাছে জবাব চেয়েছি। তারা কী বলে তা পর্যালোচনা করা হবে। অনিয়ম হয়েছে কিনা বা বিষয়টি সমাধানযোগ্য কি-না তা দেখা হবে।’