বিএডিসিতে অনিয়ম পর্ব-১৩

১২টি গাড়িতেই দেড় কোটি টাকা গায়েব!

নানা অনিয়মে চলছে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশন (বিএডিসি)। ফসলের বীজ থেকে শুরু করে কৃষকের ঘামের টাকাও আত্মসাৎ হয় সংস্থাটিতে। এ নিয়ে বাংলা ট্রিবিউন-এর ধারাবাহিক প্রতিবেদনের ১৩তম পর্ব থাকছে আজ।

প্রকল্পের নির্ধারিত বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ খরচ করে বাংলাদেশ কৃষি উন্নয়ন করপোরেশনে (বিএডিসি) কেনা হয়েছে গাড়ি। এতে সরকারের দেড় কোটি টাকারও বেশি ক্ষতি হয়েছে। সরকারের একটি সংস্থার প্রতিবেদনে এ তথ্য বেরিয়ে এসেছে।

অনুসন্ধানে দেখা গেছে, বিএডিসির বাস্তবায়নাধীন বীজ উৎপাদন, প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ এবং উন্নয়ন (১ম সংশোধিত) শীর্ষক প্রকল্প এবং বিএডিসির অফিস ভবন ও অবকাঠামোসমূহ সংস্কার, আধুনিকীকরণ ও নির্মাণ প্রকল্পে অত্যাধুনিক কিছু গাড়ি কেনা হয়েছে। এতে অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা উপেক্ষা করে বরাদ্দের চেয়ে অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় করা হয়েছে। এতে সংস্থাটির মোট ক্ষতি হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকারও বেশি।

সংস্থাটির ২০১৮-১৯ অর্থবছরের হিসাব, গাড়ি সরবরাহের টেন্ডার নথি, বিল-ভাউচার, রেজিস্টার ও অন্যান্য রেকর্ড যাচাইয়ে এ অনিয়ম ধরা পড়ে।

এতে দেখা গেছে, ২০১৮ সালের ৬ ডিসেম্বর এক কার্যাদেশে নাভানা লিমিটেড থেকে ৭টি ডাবল কেবিন পিকআপ এবং ৫টি ৩ মেট্রিক টন ধারণক্ষমতাসম্পন্ন ট্রাক কেনা হয়। ডাবল কেবিন পিকআপগুলোর জন্য ৪ কোটি ১৯ লাখ টাকা ও ট্রাকের জন্য ২ কোটি ১৯ লাখ টাকা পরিশোধ দেখানো হয়। রেজিস্ট্রেশন, ট্যাক্স ও ভ্যাটসহ পরিশোধ করা হয় ৬ কোটি ৩৮ লাখ টাকারও বেশি।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগের এক পরিপত্র অনুযায়ী রেজিস্ট্রেশন এবং সরকারের সকল করসহ ডাবল কেবিন পিকআপের মূল্য ৪৮ লাখ টাকা এবং ৩ মেট্রিক টন ধারণ ক্ষমতাসম্পন্ন ট্রাকের মূল্য ৩০ লাখ টাকা হওয়ার কথা। এক্ষেত্রে অতিরিক্ত পরিশোধ করা হয়েছে ১ কোটি ৫২ লাখ টাকারও বেশি। যা আদায়যোগ্য বলে উল্লেখ করা হয়েছে তদন্ত প্রতিবেদনে।

২০১৮ সালের ২৫ নভেম্বর অপর এক কার্যাদেশে প্রগতি ইন্ডাস্ট্রিজ লিমিটেড থেকে ১টি ডাবল কেবিন পিকআপ কেনা হয়। যার নম্বর- ঢাকা মেট্রো-ঠ-১৩-৫৯৮৬। এতেও সার্বিক ব্যয় ধরা হয় ৫১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। অথচ অর্থ বিভাগের পত্র অনুযায়ী ব্যয় হওয়ার কথা ৪৮ লাখ টাকা। এখানেও অতিরিক্ত ব্যয় দেখানো হয়েছে প্রায় ৩ লাখ ৭৫ হাজার টাকা। সব মিলিয়ে ১৩টি গাড়িতে অতিরিক্ত পরিশোধ করা হয়েছে ১ কোটি ৫৬ লাখ টাকারও বেশি।

বিএডিসির সংশ্লিষ্ট প্রকল্প পরিচালক রিপন কুমান মন্ডল তদন্তের এ ফলাফল মানতে রাজি নন। তার দাবি তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনা অনুসরণ করে যথাযথ প্রক্রিয়ায় গাড়িগুলো কিনেছেন।

বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘প্রকল্পের মাধ্যমে যত কেনাকাটা হয়েছে সবই অর্থমন্ত্রণালয় ও কৃষি মন্ত্রণালয়ের অনুমোদন নিয়ে হয়েছে। সব কেনাকাটা বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠান থেকেই করা করা হয়েছে। এখানে অনিয়মের সুযোগ নেই।’

প্রকল্প পরিচালকের জবাব মানতে নারাজ নিরীক্ষা দফতর। এ অবস্থায় সংস্থাটি অতিরিক্ত ব্যয় করা অর্থ আদায় করে সরকারি কোষাগারে জমা করার জন্য প্রতিবেদনে সুপারিশ করেছে।