অনিয়ম-অভিযোগ নিয়ে যা বললেন শিল্পকলার ডিজি

আর্থিক দুর্নীতি, পেশাগত অসদাচরণসহ নানা অভিযোগে অভিযুক্ত কর্মকর্তাদের অপরাধে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমির মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী সময় মতো ব্যবস্থা না নেওয়ায় পরিষদের সিদ্ধান্তে মন্ত্রণালয়কে বিভিন্ন সময় দায়িত্ব নিতে দেখা গেছে। আর সেই দায়িত্ব পালন করতে গিয়ে ‘এখতিয়ার বহির্ভূত’ ও ‘হস্তক্ষেপ’ জাতীয় অপবাদ নিতে হয়েছে মন্ত্রণালয়কে। যদিও  মন্ত্রণালয় বলছে, পরিষদ একাডেমির সবচেয়ে শক্তিশালী জায়গা। তাদের সভা থেকে কোনও কাজ মন্ত্রণালয়কে দেওয়া হলে সেই কাজ ‘এখতিয়ার বহির্ভূত’ নয়।

এ পরিস্থিতিতে বাংলাদেশ শিল্পকলা একাডেমি ও সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের মধ্যে দিন দিন দূরত্ব  বাড়ছে। একাডেমির মহাপরিচালকের (ডিজি) ‘স্বেচ্ছাচারী’ আচরণে পরিষদের অনুরোধে বারবার মন্ত্রণালয়কে যুক্ত হতে হলেও সেসব অস্বীকার করছেন খোদ ডিজি। তিনি বলছেন, কয়েকজন ব্যক্তির অসৎ উদ্দেশ্যের কারণে মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে একাডেমির দূরত্ব সৃষ্টি হয়েছে।

সর্বশেষ ৮ জন কর্মকর্তাকে মন্ত্রণালয় কর্তৃক বদলির অদেশের পর ডিজি লিয়াকত আলী লাকী একাডেমির অফিস আদেশের মাধ্যমে  তা রোধ করার পর মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে ‍দূরত্ব আরও স্পষ্ট হয়। একাডেমির কালচারাল অফিসারকে ঢাকার বাইরে বদলি সংক্রান্ত মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার নিয়েও প্রশ্ন তোলেন তিনি। যদিও মন্ত্রণালয় বলছে, মহাপরিচালক নিজে থেকে কাজটি করলে মন্ত্রণালয়কে হস্তক্ষেপ করতে হতো না। পরিষদের একাধিক সদস্য বলছেন, স্বায়ত্তশাসনের নামে শিল্পকলায় যে স্বেচ্ছাচারিতা চলছে, তা কারোর জন্য ভালো ফল বয়ে আনবে না। আর ডিজি বলছেন, পরিষদের ১২০তম সভায় এমন কোনও সিদ্ধান্ত হয়নি।

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের দেওয়া চিঠি উল্লেখ্য, পরিষদের ১২০তম সভায় সিদ্ধান্ত হয়, ঢাকায় যে কয়জন কালচারাল অফিসার রয়েছেন, তাদের জেলাশহরগুলোতে পাঠানো হবে এবং ২৬ জুনের রেজ্যুলেশন থেকে জানা যায়, সেখানে ৬ নম্বর বিবিধ সেকশনে স্পষ্ট উল্লেখ আছে, ‘ঢাকায় পদায়নকৃত ১৫ জন কালচারাল অফিসারদের মধ্য থেকে ১০ জন কালচারাল অফিসারকে অনতিবিলম্বে জেলায় পদায়ন করার সর্বসম্মত সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।’

মন্ত্রণালয়ের বিরদ্ধে নানা ইস্যুতে একাডেমিতে ‘নাক গলানোর’ প্রশ্ন ওঠায় সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বিব্রত বোধ করছেন। তারা বলছেন, উনি (ডিজি) উনার দায়িত্ব পালন করলে, আমাদের কোনও কাজ করতেই হতো না।

শিল্পকলার নানা অনিয়ম ও এক কর্মকর্তার বিরুদ্ধে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ার পরেও ব্যবস্থা না নেওয়া বিষয়ে বাংলা ট্রিবিউনে প্রতিবেদন প্রকাশের পর রবিবার (১৮ জুলাই) রাতে এক্ত্তর টিভির ‘একাত্তর জার্নালে’ যুক্ত হয়ে ব্যাখ্যা দেন মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। প্রথমে শিল্পকলা একাডেমির উপ-পরিচালক শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ তদন্ত হয়েছে ‘ভুয়া স্বাক্ষরের’ একটি অভিযোগকে আমলে নিয়ে উল্লেখ করলেও কিছুক্ষণের মধ্যে তিনি জানান, যৌন হয়রানির কোনও অভিযোগ তার কাছে আসেনি এবং তিনি এ বিষয়ে এই প্রতিবেদনের (বাংলা ট্রিবিউনের) আগে অবগত ছিলেন না।  পরস্পরবিরোধী আচরণ নিয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি বলেন, অসদাচরণসহ বেশকিছু অভিযোগে ভুয়া অভিযোগ দাখিল হয়েছে বলে জানতাম, সেখানে যৌন হয়রানি ছিল কিনা তার জানা ছিল না।

217844638_312507697239130_4501624354265825972_nঅথচ গত ২৭ জুন সেই অভিযুক্ত উপপরিচালকের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের তদন্ত প্রতিবেদন মন্ত্রণালয় থেকে শিল্পকলা একাডেমিতে পাঠানো হয়। একাডেমির সচিবের দফতর সেটি গ্রহণও করে। শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে অভিযোগ ‘তদন্ত দলে’ ছিলেন সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব ফাহিমুল ইসলাম। তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘তদন্তে মহাপরিচালকের কোনও অফিসিয়াল জবানবন্দি নেওয়া হয়নি। কিন্তু পুরো বিষয়টি ও প্রক্রিয়ার সব ধাপের বিষয়ে তিনি অবগত। আমরা একাডেমিতে একাধিকবার গিয়েছি এবং যখনই যাওয়া হয়েছে, সেই নোটিশের অনুলিপি অবশ্যই তাকে দেওয়া হয়েছে।’

কালচারাল কর্মকর্তাদের জেলায় পাঠানোর নির্দেশ দেওয়ার এখতিয়ার মন্ত্রণালয়ের নেই বলে একাডেমির মহাপরিচালকের দাবির বিষয়ে সংস্কৃতি বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের যুগ্মসচিব অসিম কুমার দে বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘পরিষদ যদি মনে করে, দায়িত্বটি মন্ত্রণালয়ের পালন করা উচিত, তাহলে অবশ্যই সেটি মন্ত্রণালয় করবে। এই কাজটি করার কথা ছিল মহাপরিচালকের। তিনি কাজটি করছেন না বলেইতো মন্ত্রণালয়কে করতে হলো। মহাপরিচালক বারবার আইনের ভেতরে থেকে কাজ করার কথা বলছেন— জানানো হলে এই কর্মকর্তা বলেন, ‘কোথাও আইনের ব্যত্যয় ঘটেনি। ঢাকায় কালচারাল কর্মকর্তার কোনও পোস্ট নেই। তিনি কীভাবে বছরের পর বছর এই মানুষগুলোকে ঢাকায় রেখে বেতন দিচ্ছেন। শিল্পকলা স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠান, কিন্তু এ ধরনের প্রতিষ্ঠানে প্রয়োজনে সরকার ব্যবস্থা নিতে পারে।’