সুন্দরবন যেমন আছে তেমনই থাকতে দিন: সুলতানা কামাল

বাঘ রক্ষায় সরকারসহ সবাইকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি সুলতানা কামাল। তিনি বলেন, ‘কথা ছিল ১০ বছরে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করবো। তা হয়নি। নানা অজুহাত দেওয়া হয়েছে। শুভংকরের ফাঁকি দেওয়া হয়েছে। সরকারের পক্ষ থেকে বরাবর অবহেলার শিকার হয়ে আসছে বাঘ। এ জন্য সাংস্কৃতিক, সামাজিক উন্নয়নের প্রয়োজন হয়।’

বৃহস্পতিবার (২৯ জুলাই) বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা)’র উদ্যোগে ‘বাঘ দিবসে বাঘের গল্প’ শীর্ষক এক বিশেষ ওয়েবিনারে সুলতানা কামাল এসব কথা বলেন।

সুন্দরবন রক্ষা জাতীয় কমিটির সভাপতি বলেন, ‘আগে আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো আমাদের কথা শুনতো। এখন এসব সংস্থা আর আগের মতো নেই। সরকারের পক্ষে কথা বলতে থাকে। তবে এখন একটি প্রজন্ম সচেতন হয়েছে, সংবেদনশীল হয়েছে। এটাও একটি ভালো দিক।’

তিনি বলেন, ‘সুন্দরবনকে যেভাবে আছে সেভাবেই থাকতে দেন। বাংলাদেশের শুরুই হয়েছিল সম্পদ, সংস্কৃতি রক্ষার জন্য। এখনও সেই দায়িত্ব পালন করে যেতে হবে। বাঘ রক্ষায় শুধু সরকার নয়, আমাদেরও ভূমিকা পালন করতে হবে।’

বাপার সাধারণ সম্পাদক শরীফ জামিলের সঞ্চালনায় ওয়েবিনারে অন্যদের মধ্যে বাপা’র বন, জীববৈচিত্র্য, প্রাকৃতিক সম্পদ ও জ্বালানি বিষয়ক কমিটির সহ-আহ্বায়ক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. মনিরুল হাসান খান ও অধ্যাপক ড. এম এ আজিজ, মোংলার স্থানীয় বনজীবী বেলায়েত সরদার, মোংলার জয়মনির ভিলেজ টাইগার রেসপন্স টিমের নান্টু গাজী, পশুর রিভার ওয়াটারকিপার নূর আলম শেখ উপস্থিত ছিলেন।

ওয়েবিনারে সংযুক্ত অন্য আলোচকরাপশুর রিভার ওয়াটারকিপার নূর আলম শেখ স্বাগত বক্তব্যে বলেন, ‘২০১০ সালে রাশিয়ার বাঘ সম্মেলনের মধ্য দিয়ে এই দিবসটির সূচনা হয়। সেই সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাও ছিলেন। সে সম্মেলনে ২০২২ সালের মধ্যে বাঘের সংখ্যা দ্বিগুণ করার অঙ্গীকার করা হয়। কিন্তু বাস্তবে তা হয়নি। ২০০৪ সালে বাঘ ছিল ৪৪০টি। এখন ২০১৫ সালে এসে ১০৬টি, ২০১৮ সালে বলা হলো ১১৪টি। এতে দেখা যায়, মাত্র ৮টি বাঘ বেড়েছে। এর মধ্যে আবার ৩টি বাঘ মারাও গিয়েছে। এছাড়া ভারত থেকে একটি বাঘ এসেছে বলে জানা যায়।’ তিনি বলেন, ‘বাঘের যে খাদ্য তা এখন সংকটে সুন্দরবনে। সুন্দরবনে এখন অনুকূল পরিবেশ নেই বাঘের জন্য। নানা কারণে আজ সুন্দরবন বিপদে আছে। এখন বলা হচ্ছে সুন্দরবন বাঁচলে বাঘ বাঁচবে। তাই বাঘ বাঁচাতে হলে সুন্দরবনকে বাঁচাতেই হবে।’

ফরিদ উদ্দিন বলেন, ‘তাদের আবসস্থল রক্ষা করতে হবে। হরিণ মেরে ফেললে ওরা কী খাবে। সুন্দরবনকে সুন্দরবনের মতো রাখতেই দিন। বরং যারা এই বনের ওপর জীবীকা নির্বাহ করেন, তাদের অন্য উপায়ে জীবীকার ব্যবস্থা করতে হবে। অত্যাচারটা না করি।’