আগেও দেড়শ’ যাত্রীর প্রাণ বাঁচিয়েছিলেন নওশাদ

যেকোন চ্যালেঞ্জিং পেশায় প্রতিদিন নতুন করে দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিতে হয়। এর পুরোটাই পালন করেছেন ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম। শুক্রবার (২৭ আগস্ট) স্থানীয় সময় ভোর সাড়ে ৬টায় ওমানের মাস্কাট থেকে ঢাকার উদ্দেশে ছেড়ে আসা বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের বিজি-২২ ফ্লাইটের ক্যাপ্টেন নওশাদ অসুস্থ হয়ে ভারতের নাগপুরে জরুরি অবতরণ করেন।

হার্ট অ্যাটাকেরও পরও মানসিক দৃঢ়তায় বিমানটিকে নিরাপদে অবতরণ করানোয় প্রশংসায় ভাসছে তিনি। তবে এই প্রথম নয়। ২০১৭ সালেও এমন বীরত্ব দেখিয়েছিলেন তিনি। সেবার বাঁচিয়েছিলেন দেড়শ যাত্রীর প্রাণ।

ক্যাপ্টেন (প্রধান পাইলট), ফার্স্ট অফিসার (পাইলট) আর পাঁচজন কেবিন ক্রু। আর যাত্রী ১৪৯ জন। ২২ ডিসেম্বর ওমানের স্থানীয় সময়  রাত তিনটায় দেড় শতাধিক আরোহী নিয়ে মাস্কাট আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে চট্টগ্রামের উদ্দেশে আকাশে উড়াল দিতে যাচ্ছিল বাংলাদেশ বিমানের বোয়িং। কিন্তু মাসকট বিমানবন্দরে রানওয়ে থেকে উড়াল দেওয়ার ঠিক আগমুহূর্তে উড়োজাহাজটিতে বিস্ফোরণের শব্দ শোনা যায়।

ক্যাপ্টেন নওশাদ আতাউল কাইয়ুম ও ফার্স্ট অফিসার মেহেদী হাসান বুঝতেও পারছিলেন কী ঘটেছে। ১৮ টন জ্বালানি আর উড়োজাহাজটির ওজন ৬০ টন। সব মিলিয়ে ৭৮ টন ওজনের বিশাল উড়োজাহাজের ওমানে জরুরি অবতরণ করাও অসম্ভব। একটু এদিক-সেদিক হলেই পুরোপুরি বিস্ফোরিত হতো উড়োজাহাজটি। তবে পাঁচ ঘণ্টা পথ পাড়ি দিয়ে ঢাকায় জরুরি অবতরণ করান ক্যাপ্টেন নওশাদ।

সেবারের ঘটনায় অনবদ্য অবদানের জন্য স্বীকৃতিও পেয়েছিলেন ক্যাপ্টেন নওশাদ। বৈমানিকদের আন্তর্জাতিক সংস্থা ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব এয়ারলাইনস পাইলট অ্যাসোসিয়েশনের (আইএফএএলপিএ) প্রশংসাপত্র পেয়েছেন ৪৪ বছর বয়সী এই বৈমানিক। সেই অভিজ্ঞতা নিয়ে দেশে-বিদেশে কথাও বলেছিলেন। নওশাদ বলেছিলেন, যখন আপনি উড়তে যাবেন সে মুহূর্তে ইট-পাথর যা–ই সামনে আসুক না কেন, উড়তেই হবে। উড়ার পরপরই ক্রুরা এসে জানিয়েছিল পেছনে বিকট শব্দ হচ্ছে। এটা স্বাভাবিক। পেছনে যাত্রীরা শব্দ বেশি শুনতে পান। সবার আগে দরকার মাথা ঠান্ডা রাখা। ৬০০ ফুট উঁচুতে উড়োজাহাজটি উড়লে মাসকট এয়ারপোর্টের নিয়ন্ত্রণ কক্ষের সঙ্গে যোগাযোগ করে জানতে পারি রানওয়েতে টায়ারের অসংখ্য টুকরো কিন্তু উড়োজাহাজের কোনও টায়ারের ক্ষতি হয়েছে কিনা কেউ জানাতে পারেনি। এরপর পুরো পথ কেবল সম্ভাব্য কী কী ভাবে নামতে পারি সেইসব গবেষণা করতে শুরু করি।

সেবার চট্টগ্রাম যাওয়ার কথা থাকলেও যেতে পারেননি। হিসেব নিকেশ তাদের বলেছিল ঢাকায় নামতে। নওশাদ তার অভিজ্ঞতা বর্ণনায় বলেছিলেন, সিদ্ধান্ত নেই যেভাবেই হোক ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে জরুরি অবতরণ করাতে হবে। কেননা টায়ার যদি ফাটে তাহলে উড়োজাহাজে আগুন ধরার আশঙ্কা থাকে, ঢাকায় সেটা সামলানো সহজ। এই জটিল সব হিসাব-নিকাশের সিদ্ধান্ত যখন নিচ্ছেন তখনও যাত্রীদের কিছু জানতে দেননি তিনি। কিন্তু বিপাকে পড়েন যখন তাদের জানানো হয় চট্টগ্রাম নয়, নামবেন ঢাকায়। এই কথা শুনেই যাত্রীরা ভয় পান কিছুটা। নওশাদ তার স্বভাবসুলভ তীক্ষ্নতায় যাত্রীদের জানান, চাকার সমস্যা ও কুয়াশার কারণে ঢাকায় ল্যান্ডিং, অন্য কিছু নয়।

এ বিষয়ে বেসামরিক বিমান পরিবহন ও পর্যটন  প্রতিমন্ত্রী মো. মাহবুব আলী বলেন, ক্যাপ্টেন  নওশাদ আতাউল কাইউম দক্ষ পাইলট, হঠাৎ করে তার অসুস্থতায়  আমরা সবাই উদ্বিগ্ন। তার দ্রুত সুস্থতা কামনা করি।