বিমানবন্দরে ল্যাব স্থাপনের ‘৩-৪ দিন’ শেষ হবে কবে, প্রশ্ন প্রবাসীদের

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা গত ৬ সেপ্টেম্বর মন্ত্রিসভার বৈঠকে ৭ দিনের মধ্যে দেশের আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরগুলোতে করোনার র‍্যাপিড পিসিআর টেস্টের ব্যবস্থা করার নির্দেশনা দেন। যদিও সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলো গত আগস্ট থেকেই ৩-৪ দিনের মধ্যে ল্যাব স্থাপনের কথা বলে আসছে। বিমানবন্দরের ল্যাব স্থাপনের কাজ শুরু এই ‘৩-৪ দিন’ কবে শেষ হবে তা জানতে চান আটকে পড়া সংযুক্ত আরব আমিরাত প্রবাসীরা।

সোমবার (২০ সেপ্টেম্বর) বিমানবন্দরে ল্যাব স্থাপনের কাজ আসলেই শুরু হয়েছে কিনা দেখতে এসেছিলেন ৬-৭ জন আরব আমিরাত প্রবাসী। এ সময় তারা বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মফিদুর রহমানের সঙ্গে কথা বলেন। দ্রুত ল্যাব স্থাপন না হলে অনেকেই কাজ হারাবেন জানিয়ে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব ল্যাব স্থাপনের জন্য অনুরোধ করেন তারা।

কুমিল্লা থেকে ঢাকায় এসেছেন মিল্লাত হোসেন। বিমানবন্দরে আদৌ ল্যাব স্থাপনের কাজ শুরু হয়েছে কিনা তা দেখতে এসেছেন তিনি। দুবাইয়ে ১২ বছর ধরে কাজ করেন মিল্লাত হোসেন। তিনি বলেন, ‘এখনও ল্যাব স্থাপন শুরু হয়নি। গত ১২ মার্চ দেশে আসছি। দুই মাস পরে ফিরে যাওয়ার কথা ছিল, কিন্তু এখনও যেতে পারিনি। কবে যাবো তার কোনও নিশ্চয়তা পাইনি।’

মিল্লাত হোসেন বলেন, ‘আগস্ট থেকেই শুনে আসছি ৩-৪ দিনের মধ্যে বিমানবন্দরে ল্যাব স্থাপন হবে। কিন্তু এই ৩-৪ দিন আর শেষ হচ্ছে না।’

সাখাওয়াত হোসেন রাসেল ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়েছেন ৭ মাস ধরে। ১২ বছর ধরে দুবাইয়ে কাজ করছেন তিনি। সাখাওয়াত হোসেন বলেন, ‘আমি যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করি, সেখান থেকে বলা হয়েছে অক্টোবরের ১ তারিখের মধ্যে আমাকে যেতে, না হলে আমাকে টার্মিনেট করবে। আমি এখন কী করবো। বেকার হয়ে পড়লে কে আমার দায়িত্ব নেবে।’

এদিকে সকালে বিমানবন্দরে এক অনুষ্ঠানে বেসামরিক বিমান চলাচল কর্তৃপক্ষের চেয়ারম্যান এয়ার ভাইস মফিদুর রহমান সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে করোনা পরীক্ষার ল্যাবের এসওপি নিয়ে সংযুক্ত আরব আমিরাতের সম্মতি আজ আসতে পারে। নির্বাচিত ৭টি প্রতিষ্ঠানের মধ্যে ছয়টি প্রতিষ্ঠান (এসওপি) স্ট্যান্ডার্ড অপারেটিং প্রসিকিউর জমা দিয়েছে।

তবে কোনও আশ্বাসেই আস্থা রাখতে পারছেন না ছুটিতে দেশে এসে আটকা পড়া আরব আমিরাত প্রবাসীরা। স্বাস্থ্য অধিদফতর, স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এবং প্রবাসী কল্যাণ ও বৈদেশিক কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয় থেকে পিসিআর ল্যাব দ্রুত চালুর কথা বললেও বাস্তবায়নের দীর্ঘসূত্রতায় ক্ষুব্ধ প্রবাসীরা।

আরব আমিরাত প্রবাসী রবিন দাস বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশের পরও ল্যাব স্থাপন হয়নি। এখন আমরা কাজ শুরু না হলে কোনও কিছুতেই বিশ্বাস করতে পারছি না। আমরা কয়েক দফায় আন্দোলন করেছি। আমাদের কেন আন্দোলন করতে হবে। কেন বিক্ষোভে করতে হবে।’

রবিন দাস বলেন, ‘দেশে এসেছি মার্চে মাসে। মে মাসে ফেরত যাওয়ার কথা ছিল। এখন আমার অফিস বলছে, এ মাসের মধ্যে না গেলে আর যাওয়ার দরকার নেই। এখন আমার মরা ছাড়া কোনও উপায় নেই।’

গিয়াসউদ্দিন নামের আরেক প্রবাসী বলেন, ‘আগস্টে আরব আমিরাত জানিয়েছে বিমানবন্দরে ল্যাব না থাকলে সেদেশে যাওয়া যাবে না। এত দিনেও একটা ল্যাব স্থাপন করতে পারলো না সরকার। অথচ নেপাল, শ্রীলঙ্কা, পাকিস্তানের মতো দেশ ল্যাব স্থাপন করেছে আরও ১ মাস আগে। আমরা আন্দোলন করলাম, প্রধানমন্ত্রীর নজরে আসলে তিনি নির্দেশনা দিলেন, তাতেও কোনও কাজ হচ্ছে না। এর চেয়ে দুঃখজনক কিছু নেই।’

প্রায় ৫০ হাজার প্রবাসী আরব আমিরাত থেকে ছুটিতে এসে আটকা পড়ে আছেন বলে জানান সালাউদ্দিন নামে একজন প্রবাসী। তিনি প্রবাসীদের আন্দোলনের নেতৃত্বের একজন। সালাউদ্দিন বলেন,‘আমি দুবাইয়ের সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করি। আমি না গেলে তারা তো আমার জন্য বসে থাকবে না। এখন দুশ্চিন্তায় আছি। বারবার শুনলাম ৩-৪ দিনের মধ্যে কাজ শুরু হবে। কিন্তু এই ৩-৪ দিন কবে আসবে।’