দেবীকে বরণের প্রস্তুতি প্রায় শেষের দিকে। মণ্ডপে মণ্ডপে এখন চলছে শুধু শেষ মুহূর্তের সাজসজ্জা। সোমবার (১১ অক্টোবর) ষষ্ঠী পুজার মধ্য দিয়ে দেবী দুর্গার আগমন ঘটবে। এবার দেবী আসবেন ঘোড়ায় চড়ে এবং বিদায় নেবেন দোলায় চড়ে। করোনা পরিস্থিতির কারণে স্বাস্থ্যবিধির কথা মাথায় রেখেই চলছে মণ্ডপের কাজ। রাজধানীতে এবার ২৩৮টি মণ্ডপে পূজা অনুষ্ঠিত হবে।
হিন্দু পুরাণ মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় বসন্তকাল। কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধি সে পর্যন্ত অপেক্ষা না করে, শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগিয়ে পূজা করেন। সেই থেকে অকালবোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালেই দুর্গাপূজার প্রচলন হয়ে যায়। সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন- বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন ‘খের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা’। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তাদের কষ্ট দূর করেন। মহালয়াতেই দেবী আগমনের ঘণ্টা বাজে, আর বিজয়া দশমি দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর দিন। এই দিনটি শেষ হয় মহা-আরতির মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে দুর্গা পূজার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়।
রাজধানীর মণ্ডপগুলোতে ঘুরে দেখা যায়, পূজামণ্ডপের কাজ প্রায় শেষ। এখন চলছে সাজসজ্জা, সাউন্ড চেক এবং লাইটিংয়ের কাজ। রবিবার (১০ অক্টোবর) মণ্ডপগুলো উদ্বোধন করা হবে এবং তারপর জনসাধারণের জন্য উন্মুক্ত করা হবে। মণ্ডপগুলোতে দেখা যায়, প্রবেশের এবং বের হওয়ার দু’টি আলাদা রাস্তা করা হয়েছে। এছাড়া আমন্ত্রিত অতিথিদের জন্য সীমিত আকারে বসার ব্যবস্থা করা হয়েছে, কিন্তু তা সংখ্যায় অনেক কম। এছাড়া পূজা মণ্ডপের পরিধি এবার কমিয়ে আনা হয়েছে। অর্থাৎ আকার ছোট হয়েছে পূজা মণ্ডপের। রাজধানীর তেজগাঁও, মোহাম্মদপুর, গুলশান, বনানী, বসুন্ধরা এলাকার পাশাপাশি সবচেয়ে বেশি পূজা উদযাপিত হয় পুরান ঢাকায়। পুরান ঢাকার শাখারিবাজার, তাঁতীবাজার, লক্ষ্মীবাজার, সূত্রাপুর, শ্যামবাজার, প্যারীদাস রোড, কলতাবাজার, মুরগিটোলা, মদনমোহন দাস লেন, বাংলাবাজার গোয়ালনগর, জমিদারবাড়ী, গেন্ডারিয়া, ডালপট্টি এলাকার অলিগলিতে চলছে পূজার আয়োজন। ছোট-বড় বিভিন্ন মণ্ডপে শুরু চলছে মঞ্চ, প্যান্ডেল, তোরণ ও প্রতিমা নির্মাণের কাজ।
কল্যাণ সংঘের সভাপতি এবং বাংলাদেশ কৃষক লীগের সভাপতি কৃষিবিদ সমীর চন্দ্র বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘দুর্গা পূজাকে সামনে রেখে আমাদের সব প্রস্তুতি চূড়ান্ত পর্যায়ে আছে। এখন শুধু আমরা স্বাস্থ্য সুরক্ষা এবং সামাজিক দূরত্বসহ নিরাপত্তার বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করছি। যাতে স্বাস্থ্য সুরক্ষার বিষয়টি অগ্রাধিকার পায় এবং নিরাপত্তা নিশ্চিত থাকে। পাশপাশি আমাদের সাউন্ড সিস্টেমের কাজ চলছে। আগামীকাল সন্ধ্যা ছয়টার পর ভক্তদের জন্য মণ্ডপ উন্মুক্ত করে দেবো।