ষষ্ঠী পূজার মধ্য দিয়ে দুর্গোৎসব শুরু

আজ সোমবার (১১ অক্টোবর) শারদীয় দুর্গোৎসবের প্রথমদিন, মহাষষ্ঠী। কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার মাধ্যমে অধিষ্ঠিত হচ্ছেন দেবী দুর্গা। এবছর ভক্তদের কাছে দেবী আসছেন ঘোড়ায় চড়ে। ১৫ অক্টোবর বিজয়া দশমীতে প্রতিমা বিসর্জনের মধ্যদিয়ে শেষ হবে বাঙালি সনাতন ধর্মালম্বীদের সবচেয়ে বড় এই উৎসব।

আজ সকাল থেকেই মন্দিরে মন্দিরে শোনা যাচ্ছে উলুধ্বনি, শঙ্খ, কাঁসর আর ঢাকের বাদ্য, চণ্ডিপাঠে মুখরিত হয়ে ওঠে মণ্ডপ এলাকা।

দুর্গোৎসব উপলক্ষে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা পৃথক বাণীতে দেশবাসীকে শুভেচ্ছা ও অভিনন্দন জানিয়েছেন।

বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের দেওয়া তথ্য মতে, এ বছর সারাদেশে ৩২ হাজার ১১৮টি মণ্ডপে হবে দুর্গা পূজা। গত বছরের চেয়ে এবার পূজার সংখ্যা বেড়েছে ১ হাজার ৯০৫টি। ঢাকা মহানগরে এ বছর পূজা হবে ২৩৮টি মণ্ডপে, যা গত বছরের চেয়ে ৪টি বেশি। 

রাজধানীর ঢাকেশ্বরী জাতীয় মন্দির থেকে বাংলা ট্রিবিউনের ফটো সাংবাদিক সাজ্জাদ হোসেন জানিয়েছেন, ভোর থেকেই ঢাকেশ্বরীতে শুরু হয়েছে পূজার কার্যক্রম। সকালে মন্দিরের বেলতলায় জবা, শিউলিসহ বিভিন্ন ফুল দিয়ে কল্পারম্ভ ও বিহিত পূজার মাধ্যমে দেবী দূর্গাকে আমন্ত্রণ জানান পুরোহিতরা। এসময় অঞ্জলি দিতে উপস্থিত হয়েছেন দেবী ভক্তরা। অঞ্জলি শেষে প্রসাদ বিতরণ করা হয়েছে।

পূজা করছেন পুরোহিতরা

 

হিন্দু পুরাণ মতে, দুর্গাপূজার সঠিক সময় বসন্তকাল; কিন্তু বিপাকে পড়ে রামচন্দ্র, রাজা সুরথ ও বৈশ্য সমাধি সে পর্যন্ত অপেক্ষা না করে শরতেই দেবীকে অসময়ে জাগিয়ে পূজা করেন। সেই থেকে অকালবোধন হওয়া সত্ত্বেও শরৎকালেই দুর্গাপূজা প্রচলন হয়ে যায়।

সনাতন ধর্ম মতে, যা কিছু দুঃখ-কষ্টের বিষয়, যেমন বাধাবিঘ্ন, ভয়, দুঃখ-শোক, জ্বালা-যন্ত্রণা এসব থেকে ভক্তকে রক্ষা করেন দেবী দুর্গা। শাস্ত্রকাররা দুর্গা নামের অর্থ করেছেন ‘খের দ্বারা যাকে লাভ করা যায় তিনিই দুর্গা’। দেবী দুঃখ দিয়ে মানুষের সহ্যক্ষমতা পরীক্ষা করেন। তখন মানুষ অস্থির না হয়ে তাকে ডাকলেই তিনি তার কষ্ট দূর করেন। মহালয়াতেই দেবী আগমনের ঘণ্টা বাজে আর বিজয়া দশমী দেবী দুর্গাকে বিদায় জানানোর দিন। এই দিনটি শেষ হয় মহা-আরতির মাধ্যমে। এর মধ্য দিয়ে দুর্গাপূজার সব কার্যক্রম সম্পন্ন হয়। এবার দেবী আসবেন ঘোড়ায় চড়ে এবং বিদায় নিবেন দোলায় চড়ে।

চলছে পূজা-আর্চনা
 
দুর্গোত্সব উপলক্ষ্যে রাজধানীসহ সারাদেশের পূজামণ্ডপগুলোর পুরোহিত বা ঠাকুর এবং পূজামণ্ডপে আগতদের জন্য মাস্ক পরিধান অপরিহার্য করা হয়েছে। এছাড়া, অন্যান্য স্বাস্থ্যবিধি মেনে পূজা উদযাপনের জন্য হিন্দু সম্প্রদায়ের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে ধর্ম মন্ত্রণালয়। আর করোনা মহামারির কারণে উৎসব সংশ্লিষ্ট বিষয়গুলো পরিহার করে সাত্ত্বিক পূজায় সীমাবদ্ধ থাকতে ভক্তদের প্রতি অনুরোধ জানিয়েছে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ।

গত ৩ অক্টোবর স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খাঁন কামালের সঙ্গে বৈঠকের পর ১৮ দফা নির্দেশনা জারি করেছে পূজা উদযাপন পরিষদ। নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, মণ্ডপে আগত পূজারি, দর্শনার্থী ও ভক্তদের সবাইকে বাধ্যতামূলকভাবে মাস্ক পরতে হবে। নারী-পুরুষের জন্য পৃথক যাতায়াত ব্যবস্থা রাখতে হবে। পূজা মণ্ডপে জনসমাগম পরিহার করতে মেলা, আলোকসজ্জা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান, আরতি প্রতিযোগিতা করা যাবে না। প্রতিমা বিসর্জনের সময় শোভাযাত্রা পরিহার করতে হবে। এছাড়া দেশি-বিদেশি গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিরা মন্দিরে বা মণ্ডপে এলে সংশ্লিষ্ট থানাকে আগেই অবহিত করতে হবে।

ঢাকেশ্বরী মন্দির মেলাঙ্গনে মহানগর সার্বজনীন পূজা কমিটির উদ্যোগে খোলা হয়েছে কেন্দ্রীয় নিয়ন্ত্রণ কক্ষ। রাজধানী ঢাকাসহ সারাদেশের প্রতিটি পূজামণ্ডপের নিরাপত্তা রক্ষায় পুলিশ, আনসার, র‌্যাব ও বিডিআর সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবেন। পুলিশ এবং র‌্যাবের পাশাপাশি প্রায় প্রতিটি মন্ডপে স্বেচ্ছাসেবক বাহিনী দায়িত্ব পালন করবে।

আরও পড়ুন:

দেবী আসবেন ঘোড়ায় চড়ে