নৌপ্রধানের ভারত সফরে যে বিষয়গুলো চূড়ান্ত হলো

প্রায় সপ্তাহব্যাপী ভারত সফরের পর আজ শুক্রবার (২৯ অক্টোবর) ঢাকায় ফিরছেন বাংলাদেশের নৌবাহিনীর প্রধান চিফ অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল। দুদেশের মধ্যে শীর্ষ সামরিক পর্যায়ে ইদানিং ঘন ঘন সফর হলেও নৌপ্রধানের এই সফরে যে সব সিদ্ধান্ত চূড়ান্ত হয়েছে তার অনেকগুলোই গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে করা হচ্ছে। 

গত সোমবার (২৫ অক্টোবর) দিল্লির রাইসিনা হিলসে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের সদর দফতর সাউথ ব্লকে ভারতীয় নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল করমবীর সিংয়ের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন চিফ অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল।

দুই নৌপ্রধানের মধ্যে এই বৈঠকেই স্থির হয়— দেড় মাস পর যখন ১৬ ডিসেম্বর বাংলাদেশে বিজয়ের সুবর্ণজয়ন্তী উদযাপন করা হবে, তখন ভারতীয় সেনাবাহিনীর একটি প্রতিনিধিদল ও সামরিক ব্যান্ড তাতে অংশ নেবে।

এর আগে চলতি বছরের ২৬ জানুয়ারি ভারতের প্রজাতন্ত্র দিবসে প্রথমবারের মতো বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর ১২২ সদস্যের একটি প্রতিনিধিদল অংশ নিয়েছিল। দিল্লির রাজপথে সেদিনের কুচকাওয়াজের পুরোভাগে ছিলেন তারা।

স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তীর বছরে বাংলাদেশের সেই পদক্ষেপকেই যথাযোগ্য মর্যাদায় ‘রেসিপ্রোকেট’ করতে চাইছে ভারত। তাই এবারের বিজয় দিবসে ঢাকাতেও মার্চ পাস্ট করবে ভারতীয় ফৌজিরা।

দিল্লিতে প্রতিরক্ষা বিশেষজ্ঞ সাবেক কমোডোর উদয় ভাস্করের কথায়, ‘ভারত এটা এখন ধীরে ধীরে উপলব্ধি করেছে যে বাংলাদেশ প্রতিরক্ষা বাহিনী চীন ও ভারত—উভয়কে নিয়েই ভারসাম্য রক্ষা করে চলবে। এই দুটোর কোনও একটা দেশকে পুরোপুরি বাদ দিয়ে তাদের চলবে না। ফলে সেই বাস্তবতার মধ্যেই দিল্লি চেষ্টা করছে বাংলাদেশের সঙ্গে প্রতিরক্ষা সহযোগিতার পরিধি যতটা বাড়ানো সম্ভব।’

এই পটভূমিতে নৌপ্রধান চিফ এম শাহীন ইকবাল ভারত সফরে বেশ কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত হয়েছে।

ঠিক হয়েছে, আন্তর্জাতিক স্থল-সীমানায় এখন দুদেশের সীমান্তরক্ষীরা (বিজিবি ও বিএসএফ) যেভাবে বিভিন্ন স্থানে যৌথ টহল দিয়ে থাকে, তেমনি বঙ্গোপসাগরেও আন্তর্জাতিক সমুদ্র সীমানায় দুদেশের নৌবাহিনী যৌথ টহল দেবে। 

বছরকয়েক আগেও দুদেশের সমুদ্রসীমা নিয়ে বিরোধ ছিল। কিন্তু জাতিসংঘের সালিশি আদালতের রায়ে সে বিরোধের নিষ্পত্তি হয়েছে। দুদেশই সেই রায় মেনে নিয়েছে। এ কারণে যৌথ টহলদারি অনায়াসেই সম্ভব এবং এতে এক দেশের মৎস্যজীবীদের অন্য দেশের সীমানায় ঢুকে পড়া কিংবা সমুদ্রপথে চোরাকারবারের ঘটনাও অনেক কমবে বলে আশা করা হচ্ছে।

এ ছাড়া, বাংলাদেশের নৌপ্রধান চিফ অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল প্রস্তাব দিয়েছেন, দুদেশের মধ্যে যৌথ সামরিক মহড়া আরও ঘন ঘন আয়োজন করতে। মহড়ার ব্যাপকতা বাড়ানোর বিষয়েও বলেছেন তিনি। ভারত সে প্রস্তাবে সানন্দ সম্মতি দিয়েছে।

বঙ্গোপসাগরে দুদেশের নৌবাহিনী এখন যে মহড়া করে, তার নাম ‘বঙ্গসাগর’। নৌপ্রধানের ভারত সফরের পর ‘বঙ্গসাগর’ বছরে দুবারও আয়োজিত হতে পারে বলে আভাস দেওয়া হচ্ছে।

চিফ অ্যাডমিরাল এম শাহীন ইকবাল তার ভারত সফরে বৈঠক করেছেন ভারতের চিফ অব ডিফেন্স স্টাফ জেনারেল বিপিন রাওয়াতের সঙ্গেও।

দিল্লির পর মুম্বাইতে গিয়ে তিনি পরিদর্শন করেছেন ওয়েস্টার্ন ন্যাভাল কমান্ডের ফ্ল্যাগশিপ রণতরী। আলাদা বৈঠক করেছেন পশ্চিমাঞ্চলীয় কমান্ডার, ভাইস অ্যাডমিরাল আর হরিকুমারের সঙ্গেও।

সফরের শেষপর্বে তামিলনাড়ুর নীলগিরি পাহাড়ে অবস্থিত শৈলশহর ওয়েলিংটনে ভারতের যে ডিফেন্স সার্ভিসেস স্টাফ কলেজ রয়েছে, সেখানেও প্রশিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের সঙ্গে মতবিনিময় করেছেন বাংলাদেশের নৌপ্রধান। 

ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে শীর্ষ সামরিক পর্যায়ে এত ফলপ্রসূ সফর যে সাম্প্রতিক কালে হয়নি বললেই চলে, প্রতিরক্ষা বিষয়ক পর্যবেক্ষকরা তা একবাক্যে স্বীকার করছেন।