বগুড়ার আজিজুল হক কলেজে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ নীতিমালা ঘোষণা

বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ নীতিমালা কার্যকরের আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

শনিবার (৬ নভেম্বর) আমরাই পারি’র উদ্যোগে এবং ইউএন ওমেন ও গ্লোবাল অ্যাফেয়ার্স কানাডার সহযোগিতায় কলেজের শিক্ষক মিলনায়তনে এ নীতিমালার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেওয়া হয়।

২০০৯ সালে হাইকোর্টের এক নির্দেশনা অনুযায়ী প্রতিটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়ন বিরোধী নীতিমালা এবং কমিটি গড়ে তোলার কথা থাকলেও প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতা এবং তদারকির অভাবে এখনও বাংলাদেশে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে এই নীতিমালা কার্যকরীভাবে প্রতিষ্ঠিত হয়নি। ইউএন ওমেনের সহযোগিতায় “কম্ব্যাটিং জেন্ডার বেসড ভায়োলেন্স” প্রজেক্টের অধীনে আমরাই পারি জোট বগুড়া, কুমিল্লা ও পটুয়াখালী এই তিনটি জেলায় মোট ছয়টি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নির্যাতন প্রতিরোধ নীতিমালা এবং কমিটি গড়ে তোলার কাজ করছে। আর তারই পথ ধরে আজ বগুড়ার সরকারি আজিজুল হক কলেজ এই যুগান্তকারী পদক্ষেপ গ্রহণ করল।

অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন আমরাই পারি জোটের চেয়ারপারসন এবং মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল। এছাড়াও উপস্থিত ছিলেন সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ শাহজাহান আলী, উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবদুল কাদের, আমরাই পারি জোটের নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক, সরকারি আজিজুল হক কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞানের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর উম্মল খায়ের মোছা. গুলশান আরা বানু, গণিতের বিভাগীয় প্রধান প্রফেসর মো. মাহতাব হোসেন মণ্ডল এবং দর্শন বিভাগের সহকারী অধ্যাপক মো. সফির আহম্মদ। পুরো আয়োজনটি সঞ্চালনা করেছেন ইংরেজি বিভাগের প্রভাষক মোহাম্মদ মরিয়ার রহমান সাজু। 

শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালার প্রয়োজনীয়তা বিষয়ে শিক্ষার্থীদের মাঝে বক্তব্য প্রদানের সময় আমরাই পারি’র নির্বাহী সমন্বয়কারী জিনাত আরা হক বলেন, “নীতিমালা শুধু কাগজে থাকবে না, মগজে থাকবে। এই নীতিমালা শিক্ষার্থীদেরকে পরিপূর্ণভাবে সহায়তা করবে তাদের নিজস্ব ধারণাগত উন্নয়নের জন্য। একজন শিক্ষার্থী যেন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে অনিরাপদ বোধ না করে সেজন্য এই নীতিমালা কার্যকরী ভূমিকা পালন করবে”।

সরকারি আজিজুল হক কলেজের উপাধ্যক্ষ প্রফেসর মো. আবদুল কাদের বলেন, “যুগ যুগ ধরে পুরুষতান্ত্রিকতার মধ্য দিয়ে এই সমাজ চলে আসছে। ওভারনাইট তা ভাঙ্গবে না, কিন্তু অবশ্যই ভাঙ্গবে। সেজন্য আমাদের শিক্ষার্থীদের হতে হবে অসাম্প্রদায়িক, উদার মানবচেতনায় বিশ্বাসী, অগ্রমুখী, বিজ্ঞানমনস্ক এবং মননশীল”।

মানবাধিকারকর্মী সুলতানা কামাল বলেন, “একটা সমাজের সভ্যতার স্তর নির্মিত হয় সেই সমাজে মানুষেরা কতটুকু অধিকার, নিরাপত্তাবোধ এবং মর্যাদা নিয়ে বাস করতে পারে তার ওপর”। তিনি আরও বলেন যে, কেউ যদি লিঙ্গীয় পরিচয়ের কারণে হয়রানির শিকার হয়ে থাকে, সেইটিই যৌন হয়রানি। আমরা এমন পারিবারিক আবহে বেড়ে ওঠি যে, বুঝতেও পারি না আমাদের বিভিন্ন আচরণ অন্যকে কষ্ট এবং অস্বস্তি দিয়ে থাকতে পারে। এই নীতিমালাটি আমাদের দিকনির্দেশনা দিবে, আমাদের আদর্শিকতার মাত্রা নির্মাণে সহায়ক হয়ে ওঠবে’।

অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে সরকারি আজিজুল হক কলেজের অধ্যক্ষ প্রফেসর মোহাম্মদ শাজাহান আলী সমাপনী বক্তব্য পেশ করেন এবং প্রধান অতিথির মাধ্যমে সরকারি আজিজুল হক কলেজের যৌন নিপীড়নবিরোধী নীতিমালার আনুষ্ঠানিক ঘোষণা করেন। প্রতিটি বিভাগে শিক্ষার্থীদের কাছে এই নীতিমালা অতিসত্বর পৌঁছে দেওয়া হবে বলে অধ্যক্ষ আশ্বাস দেন।