তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে  শিগগিরই সংসদে উপস্থাপন

প্রধানমন্ত্রী ঘোষিত ২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধন করে খুব শিগগিরই সংসদে উপস্থাপন করা হবে বলে জানিয়েছেন স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক।

সোমবার (৬ ডিসেম্বর) জাতীয় সংসদের শপথকক্ষে ‘বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম ফর হেলথ অ্যান্ড ওয়েলবিং’ আয়োজিত ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন' শীর্ষক জাতীয় সেমিনারে তিনি এ কথা জানান।

বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করতে সেমিনারে পার্লামেন্টারি ফোরামের পক্ষ থেকে ৭টি প্রস্তাবনা দেওয়া হয়। এর মধ্যে রয়েছে— সকল পাবলিক প্লেস, পাবলিক ট্রান্সপোর্টসহ সকল ‘ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান’ বিলুপ্ত করা, বিক্রয়স্থলেও তামাকজাত পণ্য প্রদর্শন বন্ধ করা, তামাক কোম্পানির সকল স্পন্সরশিপ ও করপোরেট সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, তামাকজাত পণ্যের মোড়কে সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৯০% এর বেশি রাখা, খুচরা ও কম সংখ্যক সিগারেট বা বিড়ি বিক্রি বন্ধ করা, ই-সিগারেটসহ সকল ধরনের হিটেড ট্যোবাকোর বিক্রি, আমদানি বন্ধ করা এবং ১৯৫৬ সালের নিত্যপ্রয়োজনীয় দ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইন সংশোধন করে তামাক পণ্যকে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের তালিকা থেকে বাদ দেয়া।

স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেন,  ‘আমাদের সকলকে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা বাস্তবায়নে কাজ করতে হবে। তামাক থেকে আমরা যে রেভিনিউ পাই তার চেয়েও অনেক বেশি খরচ হয় আমাদের চিকিৎসা খাতে। তাই তামাকমুক্তির কোনও বিকল্প নেই। তবে একদিনে এগুলো বন্ধ করার উপায় নেই। অনেকে বলেন, তামাক সংশ্লিষ্টরা অনেক শক্তিশালী। তবে তারা সরকারের চেয়ে শক্তিশালী নয়। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কর্মসূচির মাধ্যমে আমরা তামাকের ব্যবহার অনেকটা কমিয়ে আনতে পেরেছি।  আরও কমাতে হবে। আমরা খুব দ্রুত আপনাদের প্রস্তাবনা মোতাবেক আইনটি সংশোধন করে সংসদে আনবো। সংসদ সদস্যদের মাধ্যমেই তা পাস হবে।’

বাংলাদেশ পার্লামেন্টারি ফোরাম জনস্বাস্থ্য উন্নয়নের নানান দিক নিয়ে কাজ করে। তার মধ্যে তামাক নিয়ন্ত্রণ অন্যতম। ফোরামের চেয়ারম্যান অধ্যাপক ডা. মো. হাবিবে মিল্লাত এমপি সে বিষয়ে উল্লেখ করে বলেন, ‘পার্লামেন্টারি ফোরামের পক্ষ থেকে স্বাস্থ্যমন্ত্রীর কাছে তামাক আইন সংশোধনের দাবি জানিয়ে ১৫২ জন  সংসদ সদস্যের সই করা একটি চিঠি দেওয়া হয়েছে। সর্বশেষ জাতীয় বাজেটে তামাকপণ্যের মূল্য বৃদ্ধির দাবি জানিয়েছিলাম আমরা। সেখানেও  অর্থমন্ত্রীকে বরাবর চিঠি দিয়েছি, সেখানে আমাদের সঙ্গে ছিলেন ৫২ জন সংসদ সদস্য। আমাদের অন্যতম অর্জন— আমরা প্রধানমন্ত্রীর বরাবর টেকসই উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা অর্জনে তামাক নিয়ন্ত্রণের গুরুত্ব ও ই-সিগারেট নিষিদ্ধের বিষয়ে ১৫৩ জন সংসদ সদস্যের সই করা চিঠি দিয়েছি।’

 অধ্যাপক ডা. হাবিবে মিল্লাতের সভাপতিত্বে সভায় আরও বক্তব্য রাখেন— সাবেক স্বাস্থ্যমন্ত্রী অধ্যাপক ডা. আ ফ ম রুহুল হক, ডা. প্রাণ গোপাল দত্ত, অ্যাডভোকেট পীর ফজলুর রহমান এবং জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেলের পরিচালক কাজী জেবুন্নেছা বেগম। সেমিনারে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপনা করেন ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারী এমপি।

বক্তারা ছাড়াও সেমিনারে সংসদ সদস্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন— হোসনে আরা, আদিবা আনজুম মিতা, বাসন্তী চাকমা, আফতাব উদ্দিন সরকার, ডা. সামিল উদ্দিন আহমেদ শিমুল, পীর ফজলুর রহমান, কাজী কানিজ সুলতানা, হাবিবা রহমান খান, সৈয়দা রুবিনা আক্তার, উম্মে ফাতেমা নাজমা বেগম, মমতা হেনা লাভলী, নাদিরা ইয়াসমিন জলি, আরমা দত্ত, শবনম জাহান, অ্যাডভোকেট খোদেজা নাসরীন ও অধ্যাপক ডা. মো. আব্দুল আজিজ। আরও উপস্থিত ছিলেন— স্বাস্থ্য সেবা বিভাগের জ্যেষ্ঠ সচিব মো. লোকমান হোসেন মিয়া, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল, ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি-কিডস (সিটিএফকে) এবং স্বাস্থ্য সুরক্ষা ফাউন্ডেশনের পরিচালক ও কর্মকর্তারা।