শিল্পকলার কালচারাল অফিসাররা এবার কী করবেন?

বদলি আদেশের ছয় মাস পেরিয়ে গেলেও আট জন কালচারাল অফিসারের মধ্যে ঢাকায় থেকে যাওয়া ছয় জনকে তাদের কর্মস্থলে ফেরার সিদ্ধান্ত জানিয়ে দিয়েছে শিল্পকলা একাডেমির পরিষদ। গত ছয় মাসে মন্ত্রণালয়ের বদলি আদেশের বিপরীতে আদালতে রিট ও মহাপরিচালকের পাল্টা আদেশ জারির মাধ্যমে ঢাকায় বহাল থাকার মতো নানা সিদ্ধান্ত নিয়ে সমালোচনা হয়েছে।

রবিবার নতুন করে আবারও তাদের বদলিস্থলে যেতে বলার সিদ্ধান্তের পর এবার কালচারাল অফিসাররা কী করবেন সেটাই ভাবছেন। জানলে চাইলে তাদের কেউ বলেন, আদালতের রিটটি নিষ্পত্তির অপেক্ষা করবেন। কেউ জানালেন কর্তৃপক্ষ ‘ফাইনালি’ যা করতে বলবে সেটাই করবেন। আবারও অন্যরা কী করেন সেটা দেখে পরে সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা ভাবছেন কেউ কেউ।

২৪ জুন আট কালচারাল অফিসারকে জেলায় বদলির আদেশ দেয় মন্ত্রণালয়। স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানে মন্ত্রণালয় থেকে বদলির আদেশ দিতে পারে না দাবি করে আট কর্মকর্তার পক্ষে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। মন্ত্রণালয়ের বদলির আদেশ বাতিল করে গত ৩০ জুন আট কর্মকর্তাকে নিজ নিজ পদে বহাল থাকার পাল্টা আদেশ দেন শিল্পকলার মহাপরিচালক লিয়াকত আলী লাকী। ১৯ ডিসেম্বরের পরিষদের সভায় তাদের নিজ নিজ জেলায় যোগদানের বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। এতে যদি একাডেমিতে জনবল সংকট হয় তবে সেটি মন্ত্রণালয়কে বিবেচনায় নেওয়ার কথাও জানানো হয়।

কালচারাল অফিসার হিসেবে নিয়োগ পেলেও ঢাকায় থেকে জনসংযোগ বিভাগের কাজ করছেন হাসান মাহমুদ। রবিবারের পরিষদের সভায় তাদের নিজ কর্মস্থল দিনাজপুরে ফেরার সিদ্ধান্তের পর তারা কী করবেন জানতে চাইলে তিনি বলেন, এ জবাব আমার কাছে নেই। কর্তৃপক্ষ যে সিদ্ধান্ত দেবে সেভাবেই হবে। রেজ্যুলেশন চূড়ান্ত স্বাক্ষরের পর এলে বিষয়টি জানা যাবে।

চুয়াডাঙায় বদলি হওয়া চাকলাদার মোস্তফা আল মাসউদ এখন ঢাকা অফিসে। তিনি চলচ্চিত্র বিভাগের সহকারী পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এখন করণীয় কী জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘২৪ জুন মন্ত্রণালয় কর্তৃক আমাদের যে বদলির অর্ডার, সেটা চ্যালেঞ্জ করে আদালতের শরণাপন্ন হয়েছিলাম এই বলে যে, এটা মন্ত্রণালয়ের এখতিয়ার বহির্ভূত। আদালতের রুলও জারি হয়েছে। সেটা মীমাংসা হওয়া জরুরি। রবিবারের সভায় আমাদের বদলি হওয়া জায়গায় স্বপ্রণোদিত হয়ে যেতে হবে বলা হয়েছে বলে শুনেছি। কিন্তু যে বিষয় নিয়ে আদালতে গিয়েছি, সেটা নিয়ে স্বপ্রণোদিত হওয়ার কতটুকু সুযোগ আছে?’

কালচারাল অফিসারদের দিয়ে শিল্পকলার বেশ কয়েকটি বিভাগের গুরুত্বপূর্ণ কাজ করিয়ে নেওয়া হচ্ছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, ‘শিল্পকলার ঢাকা অফিসে চুক্তিভিত্তিকসহ প্রথম শ্রেণির পদের সংখ্যা ৭১টি। এরমধ্যে ২৮ জন চুক্তিভিত্তিক। প্রকৃত নিয়োগপ্রাপ্ত ২১ জন। ১৩-১৪ জন টেকনিক্যাল পোস্টে আর সাত বিভাগের প্রশাসনিক পদে ৩-৪ জন আছেন। আমরা যদি মেনে নিয়ে চলে যাই তাহলে শিল্পকলা পরিচালনায় সমস্যা হবে।’

আরেক কালচারাল অফিসার আসফ উদ দৌলা জানান রেজুলেশন হাতে না আসা পর্যন্ত কী সিদ্ধান্ত হয়েছে আর কী হয়নি তা নিয়ে কথা বলা যাবে না। আমরা যে প্রবিধানমালা মেনে চলি সে অনুযায়ী ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার অনুমতি ছাড়া সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলতে পারি না।

অর্থ হিসাব ও পরিচালক একাউন্ট অফিসার হিসেবে কাজ করছেন কালচারাল অফিসার হিসেবে নিয়োগপ্রাপ্ত মোহম্মদ আল হেলাল। গত জুনের আদেশে তাকে মন্ত্রণালয় নওগাঁ বদলি করলেও তিনি যাননি। বিষয়টি নিয়ে রিট চলমান। এখন কী করবেন প্রশ্নে তিনি বলেন, মামলাতো আমি একা করিনি, অনেকে মিলে করা। সবাই যে সিদ্ধান্ত নেবে সেটাই করা হবে।

২৪ জুন সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সহকারী সচিব নাজমা বেগম স্বাক্ষরিত বদলির আদেশে বলা হয়, ‘শিল্পকলা একাডেমির অনুমোদিত অর্গানোগ্রামে সদর দফতরে জেলা কালচারাল অফিসারের পদ না থাকায় গত ৭ এপ্রিল একাডেমির ১২০তম পরিষদ সভার অনুচ্ছেদ ৬-এর সিদ্ধান্ত-২ মোতাবেক বদলির নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। নির্দেশনা অনুযায়ী আফসানা খান রুনাকে মুন্সীগঞ্জ, শহিদুল ইসলামকে সাতক্ষীরা, ফারহানা রহমানকে শেরপুর, চাকলাদার মোস্তফা আল মাসউদকে চুয়াডাঙ্গা, এরশাদ হাসানকে টাঙ্গাইল, আল হেলালকে নওগাঁ, আসাফ-উদ-দৌলাকে বরগুনা এবং হাসান মাহমুদকে দিনাজপুরে বদলি করা হয়। ৩০ জুনের মধ্যে তাদেরকে কর্মস্থলে যোগদানের নির্দেশ দেওয়া হয়।