‘অনুকরণীয় সাংবাদিক ছিলেন মিজানুর রহমান খান’ 

মিজানুর রহমান খান অনুকরণীয় সাংবাদিক ছিলেন বলে মন্তব্য করেছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহ উদ্দিন আহমেদ। তিনি বলেন, ‘মিজানুর রহমান খান ছিলেন বাংলাদেশের একজন উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত, নক্ষত্র ও অনুকরণীয় সাংবাদিক। দেশে তার সমতুল্য সাংবাদিক এখন আর নেই। আমি এখন পর্যন্ত তার লেখনির সমতুল্য কোনও সাংবাদিকের লেখা পাইনি।’

মঙ্গলবার (১১ জানুয়ারি) জাতীয় প্রেস ক্লাবের তফাজ্জল হোসেন মানিক মিয়া হলে মানবাধিকার সংগঠন হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশন আয়োজিত ‘আমাদের একজন মিজানুর রহমান খান ছিলেন’ শীর্ষক স্মরণ সভার তিনি এসব কথা বলেন। স্মরণ সভায় মিজানুর রহমান খানের স্মৃতিচারণ করে বক্তব্য রাখেন মিজানুর রহমান খানের সহকর্মী ও বন্ধুজনেরা। 

আপিল বিভাগের সাবেক বিচারপতি মো. আব্দুল মতিন এ সময় বলেন, ‘মৃত্যুর ১৩ দিনে আগে মিজানুর রহমান খানের সঙ্গে আমার আদালতে কথা হয়। এ সময় তিনি বলেন, স্যার, আমি আর সাংবাদিকতা করতে চাই না। যদি জীবনে অন্য কোনও কিছু শিখতাম, তাহলে সাংবাদিকতা ছেড়ে দিতাম। কারণ ইদানিং আমি যা দেখছি, শিখেছি তা লিখতে পারি না। আমি ভয়ের মধ্যে আছি। আমি মনে করি, তিনি আর বেশি দিন বাঁচতে চাননি।’

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের অধ্যাপক আসিফ নজরুল বলেন, ‘মিজান ছিলেন বাংলাদেশের একজন শ্রেষ্ঠ মানুষ। তার শূন্যস্থান পূরণ হবার নয়। আজকে আর কেউ মিজানুর রহমান খানের মতো বিচার অঙ্গন নিয়ে আর লেখেন না। তিনি ছিলেন সৎ, নির্ভিক ও সাহসী সাংবাদিক।’

সাংবাদিক ও কলামিস্ট ফারুক ওয়াসিফ বলেন, ‘মিজানুর রহমান খান একজন সামাজিক বুদ্ধিজীবী ছিলেন। তিনি চিন্তাশীল, বিচক্ষণ ব্যক্তি ছিলেন। বর্ণাঢ্য কর্মময় জীবনের মধ্যে দিয়ে তিনি আজীবন এ দেশে সাংবাদিকতার মহানায়ক হিসেবে থেকে যাবেন।’ 

মানবাধিকার কর্মী নূর খান লিটন বলেন, ‘মিজানুর রহমান খান সবসময় মানবাধিকার বিষয়ে সজাগ ছিলেন। তিনি নিয়মিত তার লেখনি দিয়ে গুম, খুন ও অপহরণ নিয়ে সোচ্চার ছিলেন।’ 

পরিবেশবাদী সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ‘মিজান ভাই বুদ্ধিজীবী, সাংবাদিক নাকি অ্যাক্টিভিস্ট ছিলেন, তা বোধগম্য নই। কারণ তার সব গুণই বিরাজমান ছিল। তার কাজ-কর্ম ও লেখনি আমাদের মতো অ্যাক্টিভিস্টদের অনেক শক্তিশালী করেছে।’ 

চিত্রনায়ক ইলিয়াস কাঞ্চন বলেন, ‘মিজান ভাই নিরাপদ সড়ক বিষয়ক আইনগুলো এত সহজ করে গণমাধ্যমে তুলে ধরতেন, যা দ্বারা আমরা অনেক দূর এগিয়ে যেতে পারতাম।’ 
সাবেক বিচারপতি মাজদার বলেন, ‘আইন অঙ্গনের মানুষ না হয়েও মিজানুর রহমান খানের জানাজা হয়েছে আদালত প্রাঙ্গণে। এ পর্যন্ত আমি বাংলাদেশের কোনও গণমাধ্যমে মিজান ভাইয়ের লেখার মতো মানসম্মত লেখা পাই না।’ 

জাতীয় প্রেস ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক ইলিয়াস খান বলেন, ‘মিজানুর রহমান খান সাংবাদিক মহলসহ এ দেশের মানুষের কাছে এত ভালোবাসার পাত্র ছিলেন যে, জাতীয় প্রেস ক্লাবের কোনও সাংবাদিকের জানাজায় এত মানুষ হয়নি। তার মৃত্যু জাতির জন্য অপূরণীয় ক্ষতি।’ 

হিউম্যানিটি ফাউন্ডেশনের চেয়ারম্যান অ্যাডভোকেট মুহাম্মদ শফিকুর রহমানের সভাপতিত্বে ও বাংলাদেশ ব্যাংকের সাবেক গভর্নর ড. সালেহউদ্দিন আহমেদের সঞ্চালনায় স্মরণসভায় আরও উপস্থিত ছিলেন, মিজানুর রহমান খানের স্ত্রী, ছেলে সাদমান হোসেন ও ছোট ভাই সাংবাদিক মশিউর রহমান খান প্রমুখ।