সাত মাসেও চিকিৎসক সাবিরা খুনের রহস্য উদ্ঘাটন করতে পারেনি পুলিশ

রাজধানীর কলাবাগানে চিকিৎসক কাজী সাবিরা রহমান লিপি হত্যাকাণ্ডের সাত মাস পেরিয়ে গেছে। থানা পুলিশের পর ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশ এই রহস্য উদ্ঘাটনে তদন্ত করেছে। গোয়েন্দা পুলিশের হাত ঘুরে মামলাটির তদন্তভার এখন পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশনের (পিবিআই) কাছে। কিন্তু এখনও এই হত্যাকাণ্ডের কারণ বের করা যায়নি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা অবশ্য বলছেন, তারা গুরুত্ব দিয়ে এই মামলা অনুসন্ধান করছেন। প্রযুক্তি ছাড়াও প্রথাগত সোর্স ব্যবহার করেও রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চলছে। কিছু সন্দেহভাজনকে চিহ্নিত করা হয়েছে। কিন্তু কারও বিষয়েই নিশ্চিত কোনও তথ্য-প্রমাণ পাওয়া যাচ্ছে না।

গত বছরের ৩০ মে কলাবাগানের প্রথম লেনের ৫০/১ নম্বর বাসা থেকে কাজী সাবিরা রহমান লিপির লাশ উদ্ধার করে পুলিশ। ভোরে বাসার একটি কক্ষে ধোঁয়া দেখে সাবলেটে থাকা কানিজ নামে এক তরুণী ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন। ফায়ার সার্ভিসের কর্মীরা বাসায় ঢুকে সাবিরার রক্তাক্ত মরদেহ পায়। পরে পুলিশ লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য ঢাকা মেডিক্যাল কলেজ (ঢামেক) হাসপাতাল মর্গে পাঠায়। ময়নাতদন্ত প্রতিবেদনে বলা হয়, ধারালো অস্ত্রের আঘাতে সাবিরার মৃত্যু হয়েছে। তবে হত্যার আগে ধর্ষণের কোনও আলামত পাওয়া যায়নি।

স্বজনরা জানায়, নিহত সাবিরা গ্রিন রোডের গ্রিন লাইফ হাসপাতালে চিকিৎসক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। স্বামী শামসুদ্দীন আজাদের সঙ্গে মনোমালিন্যের কারণে তিনি একাই থাকতেন। চিকিৎসক সাবিরার আগের সংসারে দুই সন্তান আছে। তারা নানির সঙ্গে থাকতো। বাসার একটি কক্ষ কানিজ সুবর্ণা ও নূরজাহান নামে দুই তরুণীকে সাবলেট হিসেবে ভাড়া দিয়েছিলেন তিনি।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার দিন সুবর্ণা একাই বাসায় ছিলেন। নূরজাহান গিয়েছিল নিজের গ্রামের বাড়ি গোপালগঞ্জে। সকাল ৬টার দিকে সুবর্ণা প্রাতঃভ্রমণে বেরিয়ে তিন ঘণ্টা পর বাসায় ফেরেন। এরপর চিকিৎসক সাবিরার কক্ষ থেকে ধোঁয়া বের হতে দেখে ফায়ার সার্ভিসে খবর দেন সুবর্ণা।

সংশ্লিষ্ট পুলিশ কর্মকর্তারা জানান, ঘটনার পর বাসা থেকে অনেক আলামত উদ্ধারের সঙ্গে এক টুকরো সিগারেটের অবশিষ্টাংশও পাওয়া গিয়েছিল। সিগারেটের অবশিষ্টাংশ থেকে নমুনা সংগ্রহের পর ডিএনএ পরীক্ষা করা হয়। এতে একজন ব্যক্তির প্রোফাইল পাওয়া গেছে। কিন্তু সন্দেহভাজন কারও সঙ্গে এটি মেলেনি। তদন্ত সংশ্লিষ্টদের ধারণা, ডিএনএ প্রোফাইল পাওয়া ব্যক্তিই চিকিৎসক সাবিরার খুনি। তিনি সাবিরার পরিচিত। তাকে শনাক্ত করতে বিভিন্নভাবে চেষ্টা চালানো হচ্ছে।

আলোচিত এই হত্যাকাণ্ডের পর থানা পুলিশের সঙ্গে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশও ছায়াতদন্ত করে। গোয়েন্দা পুলিশের একজন কর্মকর্তা জানান, ঘটনার পর তারা বাসার দারোয়ান রমজানসহ সন্দেহভাজন হিসেবে অন্তত অর্ধশত ব্যক্তিকে জিজ্ঞাসাবাদ করেছেন। কিন্তু কোনোভাবেই ক্লু পাওয়া যাচ্ছিল না। তার স্বামী শামসুদ্দীন আজাদকেও একাধিকবার জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়েছে। কিন্তু কারও বিষয়ে সুনির্দিষ্ট তথ্য-উপাত্ত পাওয়া যায়নি।

মামলার তদন্ত কর্মকর্তা পিবিআই ঢাকা মেট্রো উত্তরের পুলিশ সুপার জাহাঙ্গীর আলম বলেন, ‘আমরা হত্যাকাণ্ডের রহস্য উদ্ঘাটনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছি। কয়েকজনকে সন্দেহভাজন হিসেবে তদন্ত করা হচ্ছে। কিন্তু এখনও বলার মতো কোনও তথ্য আমাদের হাতে নেই।’

তদন্ত সংশ্লিষ্ট এক কর্মকর্তা জানান, সাবিরার বাসায় পরিচিত কোনও একজন ব্যক্তির যাতায়াত ছিল। বাসার দারোয়ান রমজানের কাছেও এ বিষয়ে কিছু তথ্য মিলেছে। কিন্তু সেই ব্যক্তির বিষয়ে বিস্তারিত কোনও তথ্য পায়নি পুলিশ।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের ধারণা, সাবিরার পরিচিত ওই ব্যক্তিই তার কক্ষে বসে ধূমপান করেন। তারপর কোনও বিষয়ে মতের অমিলের একপর্যায়ে ধারালো অস্ত্র দিয়ে হত্যা করা হয় চিকিৎসককে। হত্যার পর চিহ্ন মুছে ফেলতে ঘরে আগুন ধরিয়ে খুনি বেরিয়ে যায় বলে ধারণা করা হচ্ছে।