নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন: হকার-অটোরিকশা চালকদের শঙ্কা-প্রত্যাশা

আজ শুক্রবার (১৪ জানুয়ারি) দিবাগত মধ্যরাত থেকে বন্ধ হচ্ছে নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নির্বাচনের প্রচারণা। ঢাকার অদূরে গুরুত্বপূর্ণ এই সিটি করপোরেশনের ভোট উপলক্ষে অলিগলি থেকে শুরু করে সর্বত্র ছেয়ে গেছে সাদাকালো পোস্টারে। ভোটারদের নাগালে আনতে শেষ চেষ্টা চালাচ্ছেন সবাই। দ্বারে দ্বারে ঘুরছেন কাউন্সিলর থেকে শুরু করে মেয়র প্রার্থীরা। আর শেষ সময়ে ভোটাররাও কষছেন তাদের হিসাব-নিকাশ।

নারায়ণগঞ্জের এই নির্বাচনে ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি সাধারণ শ্রমিকদেরও বড় প্রত্যাশা রয়েছে। শ্রমিকরা বলছেন, মেয়র যেই হোক তাদের কর্মক্ষেত্রে নিরাপত্তা যাতে নিশ্চিত হয়। আর রিকশা ও ব্যাটারি চালিত রিকশার শ্রমিকদের দাবি যাতে তাদের উচ্ছেদ না করা হয়। তারা বলছেন, মেয়র যিনিই হোন; তাদের উচ্ছেদ করা হলে রুটি-রুজির ব্যবস্থা বন্ধ হয়ে যাবে। শ্রমিক, ব্যবসায়ী ও নিম্নআয়ের মানুষের শহর হিসেবে খ্যাত এই শহর থেকে সবপক্ষই যেন জীবিকার নিরাপত্তা পায়, সেদিকে নজর দেওয়ার দাবি তাদের।

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার চালক জমির উদ্দিন বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মেয়র কে হবে না হবে সেদিকে আমাদের কোনও নজর নেই। তবে আমরা যাতে আয় রোজগার করে বৌ-বাচ্চা নিয়ে বাঁচতে পারি, সেই পরিবেশের দাবি রাখছি। আমাদের যাতে বিকল্প কোনও ব্যবস্থা না করে উচ্ছেদ করা না হয়।

হকারদের একই দাবি। তারা বলছেন, নারায়ণগঞ্জের ভোটারদের সিংহভাগই নির্ণয়ের মানুষ তারা ছোটখাটো ব্যবসা বাণিজ্য করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। এর মধ্যে বিশাল একটি অংশ হকার। মাঝেমধ্যে সিটি করপোরেশনের ‘বল্টু ঝড়ের’ আঘাতে তাদের ব্যবসা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। এখনও তারা ব্যতিক্রম দেখছেন না। সমাজের অন্য শ্রেণি-পেশার লোকজন নিয়ে মেয়র প্রার্থীদের বিভিন্ন নির্বাচনি প্রতিশ্রুতি থাকলেও তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে তেমন কোনও প্রতিশ্রুতি পাচ্ছেন না বলে অভিযোগ তাদের। 

বর্তমান মেয়র ও আওয়ামী লীগের প্রার্থী সেলিনা হায়াৎ আইভি ও বিএনপি থেকে অব্যাহতি প্রাপ্ত স্বতন্ত্র প্রার্থী তৈমুর আলমের জয়-পরাজয়ের ওপর রুটি-রুজি ও পরিবারের ভরণপোষণ অনেকটাই নির্ভর করে বলে মনে করেন নিম্নআয়ের এ দুই পেশার মানুষ। 

নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচন

তাদের ভয়, আইভী আবার জয়ী হলে শহর থেকে হকারদের উচ্ছেদ হবে। ব্যাটারিচালিত বা অটোরিকশাচালকরা শহরে প্রবেশ করতে পারবেন না। অন্যদিকে তৈমুর আলম খন্দকার জয়ী হলে তেমন প্রভাবের আশঙ্কা তাদের না থাকলেও সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কর্মকাণ্ড ব্যাহত হতে পারে। সেক্ষেত্রে এর প্রভাবও তাদের জীবনযাপনে পড়তে পারে বলেও মনে করেন এই নিম্নআয়ের মানুষরা।

নিম্নআয়ের এসব মানুষের অভিযোগ, মেয়র সেলিনা হায়াৎ আইভী নির্বাচিত হওয়ার পর বেশ কয়েকবার তাদের উচ্ছেদ করেছেন। কিন্তু এবারের নির্বাচনে তার ইশতেহারে হকারদের বিষয়ে সুনির্দিষ্ট কোনও ঘোষণা নেই। অপরদিকে স্বতন্ত্র প্রার্থীর তৈমুর আলম খন্দকারের ইশতেহারে সে বিষয়ে কোনো নির্দেশনা না থাকলেও তারা মনে করছেন তাদের উচ্ছেদ করা হবে না।

তবে সড়ক অবৈধভাবে দখল করে নাগরিক ভোগান্তি সৃষ্টি করায় এই উচ্ছেদকে স্বাগত জানিয়েছেন স্থানীয় নাগরিকরা। তারা বলছেন, জনগণের চলার পথ উন্মুক্ত এবং ব্যাটারিচালিত অটোরিকশাসহ ঝুঁকিপূর্ণ যানবাহনমুক্ত নারায়ণগঞ্জ দেখতে চান তারা। 

নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের নগর ভবনের সামনেই ভ্যানগাড়িতে করে কলা বিক্রি করছেন নাসির উদ্দিন তিনি বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমার আসলে প্রত্যাশা নেই তবে প্রত্যাশা এটি যাতে এই ছোটখাটো ব্যবসা করে চলতে পারি মেয়র যেই হন যেন আমাদের নিয়ে একটু ভাবেন। বারবার যাতে উচ্ছেদ করা না হয়, সেই প্রতিশ্রুতি যিনি দেবেন আমরা তার সঙ্গে থাকবো।