সাবেক বিচারপতি টিএইচ খানের জানাজা সম্পন্ন

সাবেক বিচারপতি টিএইচ খানের নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়েছে। সোমবার (১৭ জানুয়ারি) সুপ্রিম কোর্ট প্রাঙ্গণে তার নামাজে জানাজা সম্পন্ন হয়।

জানাজায় উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীসহ আপিল ও হাইকোর্ট বিভাগের বিচারপতিসহ অসংখ্য আইনজীবী।

জানাজা শেষে তাকে গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহের হালুয়াঘাটে নেওয়া হচ্ছে। সেখানে পারিবারিক কবরস্থানে তাকে দাফন করা হবে।

এর আগে ১৬ জানুয়ারি সুপ্রিম কোর্টের প্রবীণতম আইনজীবী ও বরেণ্য আইনজ্ঞ সাবেক বিচারপতি তাফাজ্জাল হোসেন (টিএইচ) খান ইন্তেকাল করেন। এ দিন বিকাল ৫টায় রাজধানীর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে তিনি চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

টিএইচ খানের মৃত্যুতে তার প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে সুপ্রিম কোর্টের উভয় বিভাগের বিচার কাজ সোমবার (১৭ জানুয়ারি) বন্ধ রাখেন প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী।

১০২ বছরে পা দেওয়া খ্যাতিম্যান এই প্রবীণ আইনজীবীকে গুরুতর অসুস্থ অবস্থায় রবিবার (১৬ জানুয়ারি) ভোরে বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তিনি বার্ধক্যজনিত নানা জটিলতাসহ নিউমোনিয়ায় ভুগছিলেন।

এদিকে বাংলাদেশের প্রধান বিচারপতি জনাব হাসান ফয়েজ সিদ্দিকী টিএইচ খানের মৃত্যুতে গভীর শোক প্রকাশ করেছেন। তিনি মরহুমের বিদেহী আত্মার মাগফিরাত কামনা এবং শোকসন্তপ্ত পরিবারের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

প্রসঙ্গত, দেশ বরেণ্য ও সর্বজন শ্রদ্ধেয় এই আইনবিদ ১৯২০ সালের ২১ অক্টোবর ময়মনসিংহ জেলার হালুয়াঘাট উপজেলার ঔটি গ্রামে জন্ম গ্রহণ করেন। ১৯৪৭ সালে তিনি আইন পেশায় যোগ দেন এবং বর্তমানে তিনি দেশের প্রবীণতম আইনজীবী।

বিচারপতি টিএইচ খান ১৯৬৮ সালে তদানিন্তন পূর্ব পাকিস্তান হাইকোর্টের বিচারপতি হিসেবে যোগদান করেন। ১৯৭১ সালের ২৫ মার্চ তিনি হাইকোর্টের স্থায়ী বিচারপতি হিসেবে নিয়োগ পান। এরপর ১৯৭৩ সালের জুলাই মাস থেকে পুনরায় আইন ব্যবসায় ফিরে আসেন। ১৯৭৪ সালে তিনি প্রথমবারের মতো সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি নির্বাচিত হন। ১৯৭৯ সালে তিনি পার্লামেন্ট নির্বাচনে বিএনপি থেকে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হন। ১৯৮১ সালের ১৫ নভেম্বর আইন, শিক্ষা, ধর্ম, ভূমি ও রাজস্ব এবং ক্রিড়া মন্ত্রী হিসেবে শপথ নেন। এরপর ১৯৮২ সালের ২৪ মার্চ এরশাদের নেতৃত্বে নতুন সামরিক আইন জারি করা হয়। তখন তিনি আবার আইন পেশায় ফিরে যান। ১৯৮৬ সালে এরশাদের নির্বাচনে বিরোধিতা করার জন্য গ্রেফতার হন।

বিচারপতি টিএইচ খান ১৯৯২ সালে জাতিয়তাবাদী আইনজীবী ফোরাম প্রতিষ্ঠা করেন এবং প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি নির্বাচিত হন। এই পদে তিনি ২০১১ সাল পর্যন্ত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি বিএনপির প্রথম ভাইচ চেয়ারম্যান।

১৯৯২ সনে তিনি সুইজারল্যান্ডের জেনেভাস্থ জাতিসংঘের মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যার রাইটস কমিশনের মেম্বার এবং একই বছর জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রতিনিধি হিসেবে যোগ দান করেন। ১৯৯৪ সালে তিনি সুপ্রিম কোর্ট বার অ্যাসোসিয়েশনের দ্বিতীয় বারের মতো সভাপতি নির্বাচিত হন।

১৯৯৫ সালে বিচারপতি টিএইচ খান এশিয়া জোন থেকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আদালত রুয়ান্ডা ট্রাইব্যুনালের বিচারপতি নির্বাচিত হন। ১৯৯৯ সালের ১৯ জুন মাস পর্যন্ত জাতিসংঘের আন্ডার সেক্রেটারি জেনারেল পদে বিচার কার্য পরিচালনা করেন। 

১৯৪০ সালে বিচারপতি টিএইচ খান ম্যাট্রিকুলেশন পাস করেন এবং ১৯৪২ সালে তৎকালিন কলকাতা শিক্ষা বোর্ডের অধীনে ইন্টারমিডিয়েট পাস করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএ অনার্স-এ ভর্তি হন। ১৯৪৫ সালে তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএ অনার্স এবং ১৯৪৬ সালে এমএ পাস করেন। ১৯৫১ সালের ১৪ মার্চ তিনি হাইকোর্টের আইনজীবী হন।

আইন পেশা ছাড়াও বিচারপতি টিএইচ খান প্রথম জীবনে পাবনা এডওয়ার্ড কলেজ, ঢাকার জগন্নাথ কলেজ ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে দর্শন ও আইন বিষয়ে অধ্যাপনা করেন।