‘ব্যাংক কর্মকর্তা জাকির সার্ভার থেকে বড় কোম্পানির তথ্য সংগ্রহ করতো’

ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কাওরান বাজার শাখার এসএমই সেলস ম্যানেজার মো. জাকির হোসেন ব্যাংক কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগে ব্যাংকের সার্ভার থেকে বড় বড় কোম্পানির ডাটা সংগ্রহ করতো। সেসব কোম্পানির অ্যাকাউন্ট ব্যালেন্স জানার পর অনলাইনে বিশেষ পদ্ধতি রিয়েল টাইম গ্রস সেটেলমেন্টের (আরটিজিএস) মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের পরিকল্পনা করেন তিনি। ব্যাংকের কর্মকর্তা জাকিরের পরিকল্পনার ফাঁদে পা দেয় তারই পূর্ব-পরিচিত বেশ কয়েকজন।

বৃহস্পতিবার (২৭ জানুয়ারি) রাজধানীর ভাটারা থেকে ব্যাংক অ্যাকাউন্ট জালিয়াতির মাধ্যমে টাকা ট্রান্সফারের অভিযোগে ব্যাংকের কর্মকর্তাসহ প্রতারক চক্রের ১০ জনকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য জানতে পারে পুলিশ।

পুলিশ বলছে, ব্যাংক কর্মকর্তা হওয়ার সুযোগ নিয়ে বড় বড় কোম্পানির ডাটা সংগ্রহ করে আসছিলেন গ্রেফতারকৃত জাকির। এর আগেও বেশ কয়েকবার টাকা উত্তোলনের ঘটনা ঘটিয়ে থাকতে পারে বলে ধারণা করছে পুলিশ। তবে রিমান্ডে এনে জিজ্ঞাসাবাদে আরও বিস্তারিত তথ্য পাওয়া সম্ভব হবে।

ওয়ালটন গ্রুপের ৬ কোটি এবং ইউনাইটেড গ্রুপের ১২ কোটি টাকা উত্তোলন চেষ্টা ব্যর্থ হয়ে তাদের। বেশ কয়েক ধাপে এই ধরনের জালিয়াতির কাজ করে আসছিল তারা। ব্যাংকের কর্মকর্তা জাকির তার পূর্ব-পরিচিত ইয়াসিন আলীকে ওয়ালটন গ্রুপ আর ইউনাইটেড গ্রুপের টাকা ট্রান্সফারের জন্য এবং স্বাক্ষর নকলের কাজটি দেয়। সার্ভার থেকে ডাটা সংগ্রহের কাজটি দীর্ঘদিন ধরে করে আসছিল জাকির। পরে টাকা উত্তোলনের পরিকল্পনা করে সে।

পুলিশ বলছে, টাকা ট্রান্সফার হয়ে গেলে অনেক সময় বিষয়টি বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলো সঙ্গে সঙ্গে অবগত হতে পারে না। কারণ, তাদের অনেক লেনদেন হয়ে থাকে। একটি সময় যখন কোম্পানিটি বুঝতে পারে কোনও ধরনের জালিয়াতির ঘটনা ঘটেছে কিংবা অস্বাভাবিক লেনদেনের ঘটনা ঘটেছে, তখন তারা টাকা খোয়া যাওয়ার বিষয়টি অনুধাবন করতে পারে। এর চেয়েও বড় কথা–বড় বড় প্রতিষ্ঠানের টাকা ট্রান্সফার হয়ে গেলে অনেক সময় ব্যাংকও এসব বিষয় হাইড করে রাখে।

পুলিশের গুলশান বিভাগের উপ-কমিশনার মো. আসাদুজ্জামান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বড় বড় প্রতিষ্ঠান কিংবা ব্যাংকের লেনদেনের বিষয়ে আরও সতর্ক হতে হবে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে। সেই সঙ্গে বড় বড় প্রতিষ্ঠানগুলোর বিভিন্ন লেনদেনের ক্ষেত্রে ব্যাংক থেকে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোর সঙ্গে যোগাযোগ করে তারপর টাকা ছাড় দেওয়া দরকার। কোনও ধরনের অস্বাভাবিক ঘটনা আঁচ করতে পারলে আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পরামর্শ নেওয়ার কথা বলেন তিনি।

ভাটারা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুর রহমান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আটককৃতদের সাত দিনের রিমান্ড আবেদন করা হয়েছে। রিমান্ডে এনে আসামিদের জিজ্ঞাসাবাদে এ ঘটনার সঙ্গে আর কারা জড়িত এসব বিষয়ে জানতে পারবো। এই ঘটনার সঙ্গে যাদের সম্পৃক্ততা পাওয়া যাবে তাদের আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে।

যেভাবে কাজ করতো তারা

প্রতারক চক্রের সদস্যরা দুটি ভাগে ভাগ হয়ে কাজ করতো। যে ব্যক্তি বা গ্রুপের টাকা তারা ট্রান্সফার করবে সেই নির্দিষ্ট কর্মকর্তার স্বাক্ষর জালিয়াতি করতো একটি গ্রুপ। আরেকটি গ্রুপ যে শাখা থেকে টাকা ট্রান্সফারের আবেদন করা হতো সেই শাখার ব্যবস্থাপককে নানা প্রলোভন দেখিয়ে ম্যানেজ করতো।

যেভাবে ধরা পড়লো চক্রটি

গত ২৫ জানুয়ারি রাজধানীর বসুন্ধরায় ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেড শাখায় ওয়ালটন গ্রুপের অ্যাকাউন্ট থেকে ৬ কোটি টাকা বিডি লিমিটেড নামে একটি কোম্পানির এবি ব্যাংকের মতিঝিল শাখায় থাকা অ্যাকাউন্টে ট্রান্সফারের জন্য দুটি ইলেকট্রিক ফান্ড ট্রান্সফারের ফরম জমা দেওয়া হয়। ডাচ-বাংলা ব্যাংক লিমিটেডের বসুন্ধরা শাখা ম্যানেজার ওয়ালটন গ্রুপে যোগাযোগ করলে ওয়ালটনের কর্মকর্তারা ব্যাংকে গিয়ে বিষয়টি যাচাই করে জানতে পারে প্রতারক একটি চক্র এ ধরনের ঘটনা ঘটিয়েছে‌। টাকা ট্রান্সফারের আবেদনটি স্থগিত করা হয়‌। পরে বিভিন্ন তথ্যের ভিত্তিতে ডাচ-বাংলা ব্যাংকের কাওরান বাজার শাখার এসএমই সেলস ম্যানেজার মো. জাকির হোসেনসহ (৩৫) প্রতারক চক্রের সদস্য ইয়াসিন আলী (৩৪), মাহবুব ইশতিয়াক ভূইয়া (৩৫), আনিছুর রহমান ওরফে সোহান (৪২), মো. দুলাল হোসাইন (৩৫), মো. আসলাম (৫৩), আব্দুর রাজ্জাক (৪৮), জাকির হোসেন (৪৪), মো. আনোয়ার হোসেন ভুইয়া (৫৬) ও মো. নজরুল ইসলামকে (৫০) গ্রেফতার করে গুলশান বিভাগের ভাটারা থানা পুলিশ।

আরও পড়ুন: