গার্মেন্টসের কাভার্ডভ্যানে গাঁজা সরবরাহ করতো চালক-হেলপার

গার্মেন্টসের কাঁচামাল সরবরাহে ব্যবহৃত সায়হাম গ্রুপের কাভার্ডভ্যানে সিলেট থেকে গাঁজা এনে রাজধানীসহ বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিতো চালক শাহিন মিয়া (২৫) ও হেলপার মো. তোফাজ্জল (২০)। প্রতি চালানে তাদের লাভ থাকতো ৩০-৪০ হাজার টাকা। কয়েক মাস ধরে গাঁজার এমন ১০-১২টি চালান সরবরাহ করেছে তারা। শনিবার (২৯ জানুয়ারি) রাজধানীর মেরাদিয়া নতুন বাজারের সামনে থেকে দুই জনকে গ্রেফতারের পর জিজ্ঞাসাবাদে এসব তথ্য পায় মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা। এ সময় কাভার্ডভ্যানের ভেতর থেকে দুটি কাপড়ের ব্যাগে রাখা ১৬ কেজি গাঁজা উদ্ধার করা হয়।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের একজন কর্মকর্তা বলেন, ‘প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে আমরা জানতে পেরেছি কাভার্ড ভ্যানটি সিলেটের প্রতিষ্ঠান সায়হাম গ্রুপের। তাদের কারখানা হবিগঞ্জের মাধবপুরে অবস্থিত। সেখান থেকে গার্মেন্টসের বিভিন্ন কাঁচামাল ও সুতা রাজধানী, গাজীপুর ও নারায়ণগঞ্জে পৌঁছে দেওয়া হতো। কাভার্ডভ্যানের চালক ও হেলপার এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে মাদক ব্যবসায়ীদের প্রলোভনে পড়ে গাঁজা সরবরাহের কাজ করে আসছিল। এসব গাঁজা মূলত ভারত থেকে সিলেট সীমান্ত পেরিয়ে বাংলাদেশে ঢুকেছে। পরবর্তী সময়ে মাদক ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন পন্থার অংশ হিসেবে সায়হাম গ্রুপের কাভার্ডভ্যান চালক ও হেলপারকে অনেক লাভের প্রলোভন দেখিয়ে বিভিন্ন জায়গায় গাঁজা সরবরাহ করিয়ে আসছিল।’

অধিদফতরের কর্মকর্তারা আরও উল্লেখ করেন, ‘সিলেটের কারখানা থেকে ভোররাতের দিকে কাভার্ডভ্যানগুলো বের হতো। পরবর্তী সময়ে রাস্তায় মাদক ব্যবসায়ীরা কাভার্ডভ্যানে মাদক উঠিয়ে দিতো। চালক শাহিন ও হেলপার তোফাজ্জল নির্ধারিত জায়গায় মাদক ব্যবসায়ী এবং ডিলারদের কাছে সেসব গাঁজা পৌঁছে দিতো।

সায়হাম গ্রুপের কাভার্ডভ্যান

সিলেটে যারা গাঁজার ব্যবসার সঙ্গে জড়িত তাদের ব্যাপারে তথ্য পেয়েছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর। এছাড়া ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ ও গাজীপুরে যেসব ব্যবসায়ীর কাছে গাঁজার চালান পৌঁছে দেওয়া হতো তাদের বিষয়েও তথ্য পেয়েছেন অধিদফতরের কর্মকর্তারা।

গ্রেফতার দুই জন জিজ্ঞাসাবাদে আরও জানিয়েছে, কাভার্ডভ্যানে একেকবার সর্বোচ্চ ৩০ কেজি গাঁজা বিভিন্ন জায়গায় পৌঁছে দিয়েছে তারা। সায়হাম গ্রুপে দুই বছর ধরে চালক ও হেলপার পদে চাকরি করলেও কয়েক মাস ধরে গাঁজা সরবরাহের কাজে জড়িয়ে পড়েছে বলে প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে জানায় শাহিন ও তোফাজ্জল।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের সহকারী পরিচালক (ঢাকা মেট্রো উত্তর) মেহেদী হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘নিজেদের অপকর্ম যেন সায়হাম গ্রুপের কেউ টের না পায় সেজন্য মাদক ব্যবসায়ীদের সঙ্গে যোগাযোগ রেখে হবিগঞ্জের বিভিন্ন রাস্তায় গাড়ি থামিয়ে কাভার্ডভ্যানে গাঁজা তুলতো চালক ও হেলপার। জিজ্ঞাসাবাদে তাদের কাছ থেকে এসব বিষয়ে আরও গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পেয়েছি। সেগুলোর ভিত্তিতে আমরা অভিযান পরিচালনা করছি। আরও কয়েকজন মাদক ব্যবসায়ীর নাম জানা গেছে, এখন তাদের শনাক্তে কাজ চলছে।’

গ্রেফতার দুই জনের বিরুদ্ধে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ আইনে খিলগাঁও থানায় মামলা করা হয়েছে।