রাজধানীর পুরান ঢাকার সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালের পাশে ফরাশগঞ্জ বাজারে স্মৃতিবিজড়িত ঐতিহ্যবাহী লালকুঠি অবস্থিত। ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ধারক-বাহক এবং সংস্কৃতি চর্চার বিশাল কেন্দ্র ছিল শতবর্ষী লালকুঠি। ১৮৭২ সালে বুড়িগঙ্গা নদীর তীর ঘেঁষে গড়ে উঠেছিল এই লালকুঠি। যার আগের নাম ছিল নর্থব্রুক হল। একসময় ঢাকার অভিজাত পরিবারের সদস্য এবং ধনাঢ্য ব্যক্তিদের আড্ডাস্থল ছিল ঐতিহ্যবাহী লালকুঠি। দেড় শতাধিক বছর ধরে ঢাকার ও তৎকালীন ভারতবর্ষের বিভিন্ন অভিজাত শ্রেণির পদচারণায় কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে লাল রঙের ভবনটি।
১৮৮০ সালে তৎকালীন ভারতীয় উপমহাদেশের গভর্নর জর্জ ব্যরিং নর্থব্রুক এ ভবন উদ্বোধন করেন। পরে তার নাম অনুসারে নর্থব্রুক হল নাম রাখা হয়। পরে লালকুঠি নামে খ্যাতি লাভ করে। ১৮৮২ সালে ভবনটিকে পাঠাগার বানানো হয়। এর সঙ্গে জনসন হল নামে একটি ক্লাবঘরও সংযুক্ত করা হয়। সেই জনসন হল এখনও পাঠাগার হিসেবে লালকুঠিতে আছে। তবে সেখানে জ্ঞানপিপাসুদের পদচারণা নেই বললেই চলে। সাহিত্যিকদের আড্ডাও চোখে পড়ে না।
উল্লেখ্য, বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯২৬ সালের ৭ ফেব্রুয়ারি ঢাকায় আসার পর নিজ ইচ্ছেতেই নর্থব্রুক হলে (লালকুঠি) ওঠেন। সেখানে উপস্থিত ছিলেন দেশ বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ। জমকালো অনুষ্ঠানের মধ্য দিয়ে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে সংবর্ধনা জানানো হয়। শুধু তাই নয়, ঢাকার নতুন রাজস্ব ও ডাক অফিস খোলার জন্য ঢাকার নবাব পরিবারের সদস্য খাজা মোহাম্মদ ইউসুফের উদ্যোগে নর্থব্রুক হলে একটি বড় সভার আয়োজন করা হয়। এই সভায় শহরের গণ্যমান্য মুসলমান ও ইউরোপিয়নরা অতিথি হিসেবে আসেন। এছাড়া সভায় ঢাকাকে রাজধানী করার জন্য ব্রিটিশদের প্রতি সন্তোষ প্রকাশ করা হয়।
লালকুঠির ভেতরে বড় একটি অডিটোরিয়াম আছে, তবে কাঠের মঞ্চটি নড়বড়ে। কিছু জায়গা ভেঙেও পড়েছে। সাজসজ্জার ঘরেরও করুণ দশা। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি বাহিনীর আক্রমণে লালকুঠির জনসন হল ও পাঠাগারের ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়। তারপর থেকে এখন পর্যন্ত সিটি করপোরেশন কিংবা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শন রক্ষণাবেক্ষণ কর্তৃপক্ষ এর সংস্কার করেনি। পরিচর্যার অভাবে লালকুঠি ক্রমান্বয়ে তার সৌন্দর্য ও ঐতিহ্য হারাতে বসেছে।
এখন লালকুঠির ভেতরে এক পাশে সিটি করপোরেশনের ওয়ার্ড কাউন্সিলরের কার্যালয়, অপর পাশে ফরাশগঞ্জ স্পোর্টিং ক্লাব ও ডায়াবেটিক সমিতির কার্যালয়।