সাহিত্যে স্বাধীনতা পুরস্কার পাওয়া কে এই আমির হামজা

জাতীয় পর্যায়ে গৌরবোজ্জ্বল ও কৃতিত্বপূর্ণ অবদানের স্বীকৃতিস্বরূপ দেশের ১০ গুণী ব্যক্তি ও একটি প্রতিষ্ঠানকে ‘স্বাধীনতা পুরস্কার-২০২২’ প্রদানের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। মঙ্গলবার (১৫ মার্চ) মন্ত্রিপরিষদ বিভাগের এক বিজ্ঞপ্তিতে স্বাধীনতা পুরস্কারের জন্য মনোনীতদের তালিকা প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে সাহিত্যে মরহুম মো. আমির হামজার নাম অনেককে কৌতুহলী করেছে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে জানতে চান- একেবারে নাম না জানা কে এই আমির হামজা।

আমির হামজা একজন বীর মুক্তিযোদ্ধা। তার সম্পর্কে তেমন জানাশোনা কাউকে না পাওয়া গেলেও অনলাইন বুকশপ রকমারিতে তার একটি বইয়ের সন্ধান পাওয়া গেছে। যেখানে লেখক পরিচয়ে লেখা রয়েছে, কবি আমির হামজার জন্ম ১৯৩১ সালে মাগুরা জেলার শ্রীপুর থানার বরিশাট গ্রামে। কৈশোরে পিতৃহীন হওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক পড়াশোনা তার খুব বেশি এগোয়নি, পড়াশোনা করেছেন অষ্টম শ্রেণি পর্যন্ত। এরমধ্যে প্রাথমিক শিক্ষা গ্রহণ করেছেন বরিশাট কাজীপাড়া সরকারি বিদ্যালয় থেকে। এরপর ভর্তি হন মহেশচন্দ্র পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ে। তার বাবা ইমারত সরদার মা অবিরন। কবি আমির হামজা একাধারে কবি গীতিকার ও সুরকার। 

তার বিশেষত্ব উল্লেখ করতে গিয়ে পরিচয়ে লেখা— ‘তিনি কেবল গীতিকবি নন, নিজে গাইতেনও। প্রতিযোগিতামূলক কবিগান ও পালাগান করে অনেক খ্যাতি অর্জন করেছিলেন। তার একটা অনন্য বৈশিষ্ট্য ছিল যে, গানের আসরেই গান লিখে ও সুর করে পরিবেশন করতে পারতেন। তার কবি জীবনের আরেকটি বৈশিষ্ট্য হলো, তিনি তাৎক্ষণিক দেশ ও জাতির হয়ে শ্রোতার চাহিদা অনুযায়ী গান লিখে পরিবেশন করতেন।’ 

১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধে শ্রীপুর বাহিনীতে যোগ দিয়ে গৌরবময় ভূমিকা পালন করেন বলেও তার নিজ বইয়ের লেখক পরিচিতিতে লেখা আছে। তাতে আরও বলা হয়েছে, ‘তার প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থ ‘বাঘের থাবা’। জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে নিয়ে লেখা গ্রন্থটি ব্যাপক পাঠকপ্রিয়তা পায়। মুজিববর্ষ উপলক্ষে ’পৃথিবীর মানচিত্রে একটি মুজিব তুমি’ শীর্ষক গানের বইটি কবির প্রকাশিত  দ্বিতীয় গ্রন্থ। বঙ্গবন্ধুর সংগ্রামী জীবন ও তার অবিনাশী রাষ্ট্রদর্শন এখানে উঠে এসেছে। বইটিতে মোট গানের সংখ্যা ৫২টি। কবি ২০১৯ সালের ২৩ জানুয়ারি মারা যান। বাংলা সাহিত্যে অবদানের জন্য কবিকে ২০১৫ সালে সারথি ফাউন্ডেশন সম্মাননা প্রদান করা হয়।’ এছাড়াও ‘একুশের পাঁচালি’ নামে তার আরেকটি বই প্রকাশ হয়েছে বলে জানা গেছে।

 

একটি-মুজিব-তুমি

কবি আমির হামজার ‘একটি মুজিব এনে দাওতো দেখি’ গানটিতে সুর করেছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের কিংবদন্তী সুরকার শেখ সাদী খান। গানটিতে কণ্ঠ দিয়েছেন স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের আরেক কিংবদন্তী শিল্পী রফিকুল আলম। গানের সুরকার শেখ সাদী খান বলেন, ‘এটার কাজটি করেছিলাম ২০২০ সালের শেষে কিংবা ২০২১ সালের শুরুতে। আমির হামজা সাহেব নিভৃতচারী মানুষ ছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে মনেপ্রাণে লালন করতেন। বঙ্গবন্ধুভক্ত ছিলেন তিনি। উনার ছেলে ও ভাতিজা আমার কাছে এসেছিলেন। এটিসহ আরও একটি গানের কাজ করেছিলাম। সবই মুক্তির অপেক্ষায় আছে।’

বঙ্গবন্ধুকে হারিয়ে তিনি লিখেছেন, ‘যে ক্ষতি তুমি করিতে পারো না পূরণ/ কেন সেই মহাপ্রাণ করিলে হরণ/কারে নিয়ে বলো আজ কবিতা লিখি/একটি মুজিব এনে দাওতো দেখি…।’ অথবা ‘এই প্রার্থনা বঙ্গজননী আমার কথা নিও/যুগে যুগে তুমি শেখের মতো দু’একটা ছেলে দিও।’ বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তার এরকম অনেক গান কবিতা রয়েছে, যেগুলো তার নিভৃতে থাকার প্রবণতার কারণে লোকসম্মখে আসেনি।

উল্লেখ্য, ২৬ মার্চ স্বাধীনতা দিবস উপলক্ষে সরকার ১৯৭৭ সাল থেকে প্রতি বছর দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় পুরস্কার দিয়ে আসছে। এটি দেশের সর্বোচ্চ রাষ্ট্রীয় বেসামরিক পুরস্কার। বিভিন্ন ক্ষেত্রে অবদানের জন্য বর্তমানে স্বাধীনতা পুরস্কার, একুশে পদক, বঙ্গবন্ধু জাতীয় কৃষি পুরস্কার, বেগম রোকেয়া পদক, জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার ও জাতীয় ক্রীড়া পুরস্কার দিয়ে থাকে সরকার।