পহেলা বৈশাখে রাজধানীর বিনোদন কেন্দ্রগুলো ফাঁকা

করোনা মহামারির কারণে দীর্ঘ দুই বছর পর রমনা বটমূলে অনুষ্ঠিত হয়েছে ছায়ানট আয়োজিত বর্ষবরণ। দুপুরের দিকে এ আনুষ্ঠানিকতা শেষ হলেও নগরীর অন্যান্য বিনোদন কেন্দ্রে বর্ষবরণের তেমন কোনও আমেজ চোখে পড়েনি। সরেজমিন দেখা গেছে, বেশিরভাগ বিনোদন কেন্দ্র ফাঁকা। কোথাও কোথাও অল্প কিছু মানুষের উপস্থিতি লক্ষ করা গেছে। অনেকেই বলেছেন, অর্থনৈতিক কারণে মানুষ বাড়তি ব্যয় করতে আগ্রহী হচ্ছেন না। তাছাড়া গ্রীষ্মের তীব্র গরমের প্রভাব তো আছেই।

দুপুর থেকে বিকাল সাড়ে তিনটা পর্যন্ত নগরীর হাতিরঝিলে গিয়ে দেখা যায়, আগেকার পহেলা বৈশাখের মতো লোকজনের ভিড় তো ছিলই না, এমনকি সাধারণ দিনের মতো মানুষের আনাগোনা নেই।  প্রতিটি উন্মুক্ত স্থান খাঁ খাঁ করছে। ঝিলের পাড়ে বসার বেঞ্চগুলোও খালি পড়ে আছে।  ওয়াটার টেক্সিগুলোতেও নেই মানুষের উপস্থিতি।

রমনা পার্কের সামনের সড়কহাতিরঝিলের এক নিরাপত্তাকর্মী জানান, গত চার বছর ধরে এখানে ডিউটি পালন করছি। প্রতিবছর পহেলা বৈশাখে মানুষের যে পরিমাণ উপস্থিতি দেখেছি, এবছর তা একেবারেই ভিন্ন। করোনার দুটি বছর যেভাবে কেটেছে, ঠিক একই রকম মনে হচ্ছে এই বছরও। এখন পর্যন্ত মানুষের কোনও উপস্থিতি দেখতে পাচ্ছি না। যেটা মনে হচ্ছে—মধ্যবিত্ত মানুষগুলো অর্থনৈতিকভাবে অনেকটা কষ্টে আছে। ঘুরতে বের হলেই তো রিকশা বা সিএনজি ভাড়াসহ অন্যান্য বাড়তি খরচ রয়েছে। এই ব্যয়টি এখন অনেকেই করতে চায় না।

একই সময়ে রমনা বটমূলে আয়োজিত বর্ষবরণের অনুষ্ঠান শেষে পার্কে মানুষের ভিড় কম দেখা গেছে। তবে অন্যান্য পার্কগুলোর তুলনায় এই পার্কে কিছু মানুষকে দেখা গেছে বর্ষবরণের সাজে  ঘুরে বেড়াচ্ছেন।

পার্কে ঘুরতে আসা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী সুমি আক্তার বলেন, ‘পহেলা বৈশাখ বা নববর্ষ আমাদের বাঙালি জাতির গর্ব। সে কারণেই প্রতিবছরের মতো এ বছরও ঘুরতে বের হয়েছি। তবে অন্যান্য বছরের চেয়ে এ বছর মানুষের উপস্থিতি অনেক কম। এটা আমাদের সংস্কৃতির জন্য একটি বড় বার্তা হতে পারে। মানুষকে আরও কীভাবে উৎসবমুখর করা যায়, সেদিকে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আরও দায়িত্বশীল হতে হবে।’

রমনা পার্কের গেটের সামনের দৃশ্যনগরীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যান ও ধানমন্ডি লেকের চিত্রও একই। পার্কের ভেতরের প্রতিটি ওয়াকওয়ে ফাঁকা দেখা গেছে। লেকের প্রবেশপথগুলোতেও নেই মানুষের ভিড়।

প্রতি বছর স্ত্রী ও সন্তানদের নিয়ে পহেলা বৈশাখে ঘুরতে বের হন নগরীর মালিবাগের বাসিন্দা সিরাজ উদ্দিন। এ বছর তার দিনটি একটু ভিন্নভাবে যাচ্ছে। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘অর্থনৈতিক অবস্থা আগের মতো নেই। পরিবার পরিজন নিয়ে ঘুরতে বের হলে তো কিছু টাকা পয়সাও লাগে। সবকিছুর দাম বাড়তি। সে কারণে এখন খরচ  কিছুটা কমিয়ে ফেলেছি। তাই এ বছর পহেলা বৈশাখে বের হচ্ছি না।’