বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক

ভূ-রাজনৈতিক কারণে সহযোগিতা আরও বৃদ্ধি পাবে

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে সম্পর্ক দ্বিপক্ষীয় এবং বলতে গেলে কিছু ক্ষেত্রে আঞ্চলিক বিষয়ের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে। কিন্তু বর্তমান জটিল ভূ-রাজনীতি; যেমন— রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ, কোভিড সমস্যা, আফগানিস্থান সংকট, খাদ্য ও জ্বালানি মূল্য বৃদ্ধিসহ অন্যান্য বৈশ্বিক সমস্যার ভুক্তভোগী সবাই। পরিবর্তিত এই পরিস্থিতি মোকবিলার জন্য প্রতিবেশী দেশ দুটিকে পরস্পর সহযোগিতা বাড়াতে হচ্ছে।

অস্থিতিশীল এবং অনিশ্চিত ভবিষ্যৎ মোকাবিলায় দুই প্রতিবেশীর সহযোগিতা সামনের দিনগুলোতে কীভাবে বৃদ্ধি করা যায় সেটি নিয়ে ঢাকায় সফরে ভারতের পররাষ্ট্রমন্ত্রী এস জয়শংকর পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেনের সঙ্গে প্রাথমিক আলোচনা করেছেন। বিষয়টি আরও বড় আকারে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রী পর্যায়ের জয়েন্ট কনসালটেটিভ কমিশনের বৈঠকেও আলোচনার সুযোগ আছে।

এ বিষয়ে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের একজন কর্মকর্তা বলেন, এস জয়শংকর সাংবাদিকদের সাপ্লাই চেইন এবং ভ্যালু চেইনের কথা বলেছেন। যেহেতু বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে একটি অস্থিরতা বিরাজ করছে, সেজন্য তিনি আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির উপর আরও বেশি জোর দিয়েছেন আলোচনায়।

জ্বালানি ও খাদ্য পণ্যের দাম বৃদ্ধির প্রভাব পড়েছে প্রতিটি দেশের উপর এবং যেহেতু উপ-আঞ্চলিক দেশগুলোতে (বাংলাদেশ, ভুটান, ভারত, নেপাল) স্থিতিশীলতা আছে, সেজন্য এখানে সহযোগিতা বৃদ্ধি করলে সবাই উপকৃত হবে বলে জানান তিনি।

ভূ-রাজনৈতিক ধাক্কার কারণে আঞ্চলিক সহযোগিতা থাকলে দেশগুলো উপকৃত হবে উল্লেখ করে ওই কর্মকর্তা আরও বলেন, এটি নিয়ে সবদেশ মোটামুটিভাবে একমত। সামনের দিনগুলোতে এ বিষয়টি আরও বড় আকারে আসবে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

উল্লেখ্য, জয়শংকর বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আব্দুল মোমেনের সঙ্গে বৈঠকের পরে সাংবাদিকদের বলেন, কভিড আমাদের শিখিয়েছে আঞ্চলিকভাবে সাপ্লাই চেইন এবং ভ্যালু চেইন বজায় রাখা কতটুকু জরুরি।

জ্বালানি সহযোগিতা

জ্বালানি খাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতার বিষয়ে অনেকদিন ধরে কাজ করছে বাংলাদেশ। এর অধীনে নেপাল ও ভুটানের জলবিদ্যুৎ প্রকল্প থেকে বিদ্যুৎ আমদানিতে আগ্রহী বাংলাদেশ। কিন্তু উভয়ক্ষেত্রে ওই বিদ্যুৎ আনতে হবে ভারতের ওপর দিয়ে। ফলে তিন বা চার দেশীয় সহযোগিতা চায় বাংলাদেশ। ভারতীয়রাও এ বিষয়ে এগিয়ে এসেছে।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, ভারত দ্বিপক্ষীয়ভাবে কাজ করতে বেশি স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করলেও জ্বালানি খাতে উপ-আঞ্চলিক সহযোগিতা বৃদ্ধির বিষয়ে কাজ করতে ইচ্ছুক।

তিনি বলেন, জয়শংকর এ বিষয়ে আলোচনা করেছেন। কারণ ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে জ্বালানি বাজার অস্থিতিশীল হয়ে পড়েছে এবং সামনের দিনগুলোতে কী হবে সেটি সম্পর্কে ধারণা পাওয়া মুশকিল হয়ে পড়ছে।

ধারণা করা হচ্ছে এ বিষয়ে আরও বিস্তারিত আলোচনা হবে বলেও জানান তিনি।

জয়শংকর সাংবাদিকদের জানিয়েছেন, বিদ্যুৎ ও জ্বালানি খাতে অনেকগুলো নতুন প্রকল্প শুরু করার বিষয়ে চিন্তা হচ্ছে। জলবিদ্যুৎ খাতে দুইদেশের জন্য এবং আঞ্চলিকভাবে সহযোগিতার অনেক সুযোগ রয়েছে। এই খাতে বিবিআইএন কাঠামোতে আমরা কাজ করতে চাই। এখাতে উৎপাদন ও বাণিজ্য করার জন্য ভারত এ অঞ্চলে কাজ করে যাবে।

প্রধানমন্ত্রীর সফর

প্রধানমন্ত্রীকে দিল্লি সফরের আমন্ত্রণ আগেই দেওয়া হয়েছিল এবং এবারও জয়শংকর সেটি পুনর্ব্যক্ত করেছেন। দুই পক্ষের মধ্যে আলোচনায় ধারণা করা হচ্ছে, আগামী জুলাই মাসে এ বৈঠক হতে পারে।

এ বিষয়ে মন্ত্রণালয়ের এক কর্মকর্তা বলেছেন, শীর্ষ বৈঠকের আগে দুই দেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর মধ্যে জয়েন্ট কনসালটেটিভ বৈঠক হবে এবং আশা করছি, সেটি হবে মে মাসের মাঝামাঝি বা শেষের দিকে।

তিনি বলেন, আশা করা হচ্ছে, প্রধানমন্ত্রীর সফরের মূল বিষয়বস্তু ওই বৈঠকে বড় আকারে আলোচনা হবে।