নিম্নচাপ এখন ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’, ২ নম্বর হুঁশিয়ারি সংকেত

সাগরে সৃষ্ট গভীর নিম্নচাপ আরও ঘনীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড়ে পরিণত হয়েছে। এবারের এই ঘূর্ণিঝড়ের নাম রাখা হয়েছে অশনি। নামটি রেখেছে শ্রীলঙ্কা, সিংহলি এই শব্দের বাংলা অর্থ ‘ক্রোধ’। ঘূর্ণিঝড়ের ফলে সাগর উত্তাল থাকায় দেশের চার সমুদ্রবন্দরে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখিয়ে যেতে বলা হয়েছে। 

এই ঝড় আরও শক্তিশালী হয়ে আগামী মঙ্গলবার (১১ মে) নাগাদ ভারতের উপকূলে আঘাত হানতে পারে। তবে এর প্রভাব এখনও বাংলাদেশের উপকূলীয় এলাকায় পড়েনি। এখন পর্যন্ত এর গতিপথ ভারতের দিকে। এর ফলে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে ভারতের উপকূলসহ আশেপাশের এলাকা। তবে ঝড়ের যেকোনও সময় গতিপথ বদলাতে পারে, তাই সবাইকে পূর্বাভাস পর্যবেক্ষণের পরামর্শ দিয়েছে আবহাওয়া অধিদফতর।
 
আবহাওয়ার বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, দক্ষিণপূর্ব বঙ্গোপসাগর ও আশেপাশের এলাকায় অবস্থানরত গভীর নিম্নচাপটি উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর ও ঘণীভূত হয়ে ঘূর্ণিঝড় ‘অশনি’-তে পরিণত হয়ে একই এলাকায় অবস্থান করছিল। এটি মধ্যরাতে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ৩১০ কিলোমিটার দক্ষিণে থাকলেও এখন তা আরও এগিয়ে চট্টগ্রাম সমুদ্রবন্দর থেকে ১ হাজার ২৫৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে অবস্থান করছে। 

একইভাবে কক্সবাজার সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ১ হাজার ২৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে, এখন তা ১ হাজার ১৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণ-দক্ষিণপশ্চিমে আছে, মোংলা সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ১ হাজার ৩৩০ কিলোমিটার দক্ষিণে, এখন তা এগিয়ে ১ হাজার ২৫০ কিলোমিটার দক্ষিণে এবং পায়রা সমুদ্রবন্দর থেকে ছিল ১ হাজার ২৭৫ কিলোমিটার দক্ষিণে, এখন আছে ১ হাজার ২০৫ কিলোমিটার দক্ষিণে। এটি আরো ঘণীভূত হয়ে উত্তরপশ্চিম দিকে অগ্রসর হতে পারে বলেও বিশেষ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে।

ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের গতি ৪৮ থেকে বেড়ে এখন ৫৪ কিলোমিটার, এর মধ্যে বাতাসের একটানা সর্বোচ্চ গতিবেগ ঘণ্টায় ৫০ থেকে বেড়ে এখন ৬২ কিলোমিটার, যা দমকা অথবা ঝড়ো হাওয়ার আকারে ৮৮ কিলোমিটার পর্যন্ত বৃদ্ধি পাচ্ছে। ঘূর্ণিঝড় কেন্দ্রের নিকটবর্তী এলাকায় সাগর বিক্ষুব্ধ রয়েছে।

একারণেই চট্টগ্রাম, কক্সবাজার, মোংলা ও পায়রা সমুদ্র বন্দরগুলোকে ১ নম্বর দূরবর্তী সতর্ক সংকেত নামিয়ে তার পরিবর্তে ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেত দেখাতে বলা হয়েছে।

পাশাপাশি উত্তর বঙ্গোপসাগরে অবস্থানরত সকল মাছ ধরার নৌকা ও ট্রলারকে উপকূলের কাছাকাছি থেকে সাবধানে চলাচল করতে বলা হয়েছে। সেইসাথে তাদের গভীর সাগরে বিচরণ না করতে বলা হয়েছে।

প্রসঙ্গত, ২ নম্বর দূরবর্তী হুঁশিয়ারি সংকেতের অর্থ হচ্ছে, দূরে গভীর সাগরে একটি ঝড় সৃষ্টি হয়েছে। সেখানে বাতাসের একটানা গতিবেগ ঘণ্টায় ৬২ থেকে ৮৮ কিলোমিটার। বন্দর এখনই ঝড়ে কবলিত হবে না, তবে বন্দর ত্যাগকারী জাহাজ পথিমধ্যে বিপদে পড়তে পারে।

এদিকে নদীবন্দরের জন্য দেওয়া সতর্কতা সংকেত উঠিয়ে নেওয়া হয়েছে। 

আবহাওয়াবিদ বজলুর রশিদ বলেন, নিম্নচাপ ঝড়ে পরিণত হয়েছে। এটির গতিপথ এখনো ভারতের দিকে তবে যেকোনো সময় গতিপথ পরিবর্তন করতে পারে। তাই সবাইকে সতর্ক অবস্থায় রাখা হয়েছে। সাগর উত্তাল থাকায় সমুদ্র বন্দরে সংকেত দেয়া হয়েছে। কিন্তু নদী বন্দরগুলোর উপর এর প্রভাব এখনো নেই। তাই সংকেত নামিয়ে ফেলা হয়েছে। এর প্রভাবে দেশের কোথাও আপাতত বৃষ্টির শংকা নেই। তবে উপকূলের দিকে আরও এগিয়ে এলে কিছুটা প্রভাব পড়তে পারে।