অসাধু মজুতদারের শাস্তি মৃত্যুদণ্ড

দেশে এখন আলোচিত বিষয় হচ্ছে সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি ও সংকট। মজুতদারদের কারসাজিতে ভোজ্যতেলের সংকট দূর করতে দেশজুড়ে চলছে ভ্রাম্যমাণ আদালতের কার্যক্রম। বিদ্যমান আইন অনুযায়ী, দুই বছরের সাজা ও জরিমানাতেও অসাধু ব্যবসায়ীদের লাগাম টানা যাচ্ছে না। অথচ জনস্বার্থ-সংশ্লিষ্ট এমন পরিস্থিতিতে প্রয়োগ নেই বিশেষ ক্ষমতা আইনের। আইনবিদদের মতে, বিশেষ এই আইনের প্রয়োগের মাধ্যমে অসাধু মজুতদারদের মৃত্যুদণ্ডের সাজা পর্যন্ত হতে পারে। এটা করা হলে তাদের মনে ভীতির সৃষ্টি হবে এবং কমে যাবে তাদের অসাধু মনোভাব।

অবৈধ মজুতদারি এবং কালোবাজারির শাস্তি সম্পর্কে বিশেষ ক্ষমতা আইন ১৯৭৪-এর  ২৫(১) ধারায় বলা হয়েছে—‘মজুতদারি বা কালোবাজারির অপরাধে দোষী সাব্যস্ত হলে সেই ব্যক্তি মৃত্যুদণ্ডে, যাবজ্জীবন কারাদণ্ডে বা ১৪ বছর পর্যন্ত মেয়াদের কারাদণ্ডে ও তদুপরি জরিমানা দণ্ডেও দণ্ডিত হবে। তবে শর্ত থাকে যে মজুতদারির অভিযোগে অভিযুক্ত ব্যক্তি যদি প্রমাণ করে যে আর্থিক বা অন্যবিধ লাভ করার উদ্দেশ্যে নয়, বরং সে অন্য কোনও উদ্দেশ্যে মজুত করেছিল, তবে সে তিন মাস পর্যন্ত কারাদণ্ডে ও তদুপরি জরিমানা দণ্ডে দণ্ডিত হবে।’

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবির বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘অসাধু ব্যবসায়ীদের বিরুদ্ধে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালিত হচ্ছে। কিন্তু ভ্রাম্যমাণ আদালতের মাধ্যমে অসাধু ব্যবসায়ীদের স্বল্প সাজা দিয়ে অপরাধকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে। এত বড় ঘৃণিত অপরাধের বিরুদ্ধে সুযোগ থাকা সত্ত্বেও বিশেষ ক্ষমতা আইন প্রয়োগ করা হচ্ছে না।’ এ বিষয়টি শিগগিরই হাইকোর্টকে অবহিত করা হবে বলেও জানান তিনি।

বিশেষ ক্ষমতা আইনে মৃত্যুদণ্ডের সাজা হলে দোষী ব্যক্তিকে ৩৪ (ক) ধারা অনুসারে, ফাঁসি দিয়ে বা নির্ধারিত পদ্ধতি অনুসারে গুলি করে দণ্ড কার্যকর করারও বিধান রয়েছে।

ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইনে নয়, অসাধু মজুতদারদের বিরুদ্ধে ফৌজদারি আইনে মামলা করার পক্ষে মত দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মো. খুরশীদ আলম খান। তিনি বলেন, ‘নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যেটিই হোক না কেন, শুধু জরিমানা করে ছেড়ে দিলে দ্রব্যমূল্য কমবে না। স্বল্প সাজা পাওয়ায় অনেকেই অপরাধ কর্মকাণ্ডে নিরুৎসাহিত হচ্ছে না। এজন্য তাদের বিরুদ্ধে বিশেষ ক্ষমতা আইন বা দণ্ডবিধির প্রয়োগ করতে হবে।’

এদিকে সময়ে সময়ে সয়াবিন তেলের মূল্যবৃদ্ধি নিয়ন্ত্রণে মনিটরিং সেল গঠন ও নীতিমালা প্রণয়নের নির্দেশনা চেয়ে গত ৬ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের তিন আইনজীবী রিট দায়ের করেন। রিটকারীরা হলেন— অ্যাডভোকেট মনির হোসেন, সৈয়দ মহিদুল কবীর ও মোহাম্মদ উল্লাহ।

ওই রিটের শুনানিকালে সয়াবিন তেলসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যারা কুক্ষিগত করেন এবং জনগণের ভোগান্তি সৃষ্টিকারীদের সিন্ডিকেট ভেঙে দিতে হবে বলে মন্তব্য করেন হাইকোর্ট।

রিটকারীদের অন্যতম আইনজীবী সৈয়দ মহিদুল কবীর বলেন, ‘ঈদের আগে রিটের শুনানিকালে রাষ্ট্রপক্ষকে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দিয়েছিলেন হাইকোর্ট। অতি দ্রুত আমরা রিটটি শুনানির উদ্যোগ নেবো।’