‘দুর্নীতি কমাতে ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটাল নজরদারি করা হচ্ছে’

ভূমি সেবা গ্রহণ প্রক্রিয়ায় দুর্নীতি কমাতে ডিজিটাল নজরদারি করা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান।

শনিবার (২১ মে) রাজধানীর এফডিসিতে ভূমি সেবা সপ্তাহ ২০২২ উপলক্ষে ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি আয়োজিত এক ছায়া সংসদে প্রধান অতিথির বক্তব্যে ভূমি সচিব মো. মোস্তাফিজুর রহমান এ কথা বলেন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র চেয়ারম্যান হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ।

তিনি বলেন, জনগণের ভোগান্তি দূরীকরণ, দুর্নীতি হ্রাস এবং মামলা কমানোর লক্ষে সরকার ভূমি ব্যবস্থাপনায় ডিজিটালাইজেশনের ওপর সর্বাধিক গুরুত্ব আরোপ করছে। ভূমি সেবা গ্রহণ এবং অভিযোগ প্রতিকারের লক্ষে বিদ্যমান হটলাইনের টোল কমানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। জমির মালিকানা সংক্রান্ত মামলা দ্রুত নিষ্পত্তির জন্য বর্তমানে ৪২টি ট্রাইব্যুনাল চালু আছে এবং ল্যান্ড ক্রাইম অ্যাক্ট প্রণয়ন কার্যক্রম শেষ পর্যায়ে। ভূমি প্রশাসনের সক্ষমতা বৃদ্ধির জন্য দক্ষ জনবল নিয়োগসহ মাঠ পর্যায়ে পাবলিক সার্ভিস কমিশনের মাধ্যমে কর্মকর্তা নিয়োগের উদ্যোগ প্রক্রিয়াধীন।

তিনি আরও বলেন,   ভূমির রেজিস্ট্রেশন হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে নামজারি দ্রুত সম্পন্ন করার লক্ষে ডিজিটাল তথ্য বিনিময়ের জন্য আইন ও ভূমি মন্ত্রণালয় যৌথভাবে কাজ করছে। ভূমির মালিককে চূড়ান্ত সনদ প্রদানের বিষয়ে সরকারের নীতিগত সিদ্ধান্ত রয়েছে এবং খুব শিগগিরই এ বিষয়ে ভূমির মালিকানা ও ব্যবহার আইন প্রণয়ন করা হবে। ভূমির মালিকানা স্পষ্টকরণের লক্ষে সারাদেশে ২ লাখ ৭০ হাজার পিলার স্থাপন করা হবে।

সভাপতির বক্তব্যে হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ বলেন, ভূমি ব্যবস্থাপনা অত্যন্ত একটি জটিল প্রক্রিয়া। জমি বেচা-কেনা, রেজিস্ট্রেশন, নামজারি, পর্চা, খতিয়ান, খাজনা, ভূমি জরিপ ইত্যাদি সেবা পেতে প্রায় প্রত্যেকটি স্তরেই ঘুষ, দুর্নীতি ও অনিয়মের অভিযোগ এখনো বিদ্যমান। ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা সেবা কার্যক্রম শুরু হবার পর জনভোগান্তি কিছুটা কমলেও, ভূমি সেবা প্রদানে সুশাসন নিশ্চিত করা এখনো সম্ভব হয়নি। দেশের ভূমি অফিসগুলো এখনো পুরোপুরি দুর্নীতিমুক্ত নয়। তবে ডিজিটাল ভূমি ব্যবস্থাপনা শুরু হওয়ার পর মানুষ ঘরে বসেই অনলাইনে ফি জমা দিয়ে ভূমি উন্নয়ন কর, ই-নামজারি ও খাজনা প্রদান করতে পারছে। অতি সহজেই খতিয়ান বা পর্চা অনলাইনে পেয়ে যাচ্ছে। ডিজিটাল রেকর্ড রুম, প্লটভিত্তিক ডিজিটাল ভূমি জোনিং, ভূমি অফিসগুলোতে সি সি ক্যামেরা স্থাপন করার সুফল সাধারণ মানুষ পেতে শুরু করেছে। ১৬১২২ হটলাইনে ৭ দিনই ২৪ ঘণ্টা ফোনের মাধ্যমে সেবা গ্রহণ করতে পারছে। তবে মাঠ পর্যায়ে প্রশিক্ষিত জনবলের স্বল্পতা ভূমি সেবা প্রদানে এখনো বড় বাধা।

এসময় হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ ভূমি ব্যবস্থাপনায় সুশাসন নিশ্চিত করতে ১০ দফা সুপারিশ পেশ করেন। সুপারিশগুলোর মধ্যে রয়েছে— ভূমি সংক্রান্ত মামলাগুলো দ্রুত নিষ্পত্তি করতে বিশেষ ট্রাইব্যুনাল গঠন, দুর্নীতি ও অনিয়ম প্রতিরোধে ভূমি অফিসের কর্মকর্তা, কর্মচারী ও তাদের পোষ্যদের হালনাগাদ আয় ও সম্পত্তির বিবরণ প্রকাশ, জনগণের ভোগান্তি নীতিনির্ধারকদের জানানোর লক্ষে গণশুনানির ব্যবস্থা করা, জনসাধারণের সেবার চিন্তা-ভাবনা থেকে ভূমি সেবা কল সেন্টারের ১৬১২২ হটলাইনটি টোল ফ্রি করা, সাব-রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত ১৬ হাজারেরও বেশি নকলনবিশদের উপযুক্ত প্রশিক্ষণের মাধ্যমে ক্রমান্বয়ে তাদেরকে মাস্টার রোল থেকে রাজস্ব খাতে অর্ন্তভুক্ত করা। 

ডিবেট ফর ডেমোক্রেসি’র আয়োজনে এই প্রতিযোগিতায় আমেরিকান ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি-বাংলাদেশকে পরাজিত করে প্রাইমএশিয়া ইউনিভার্সিটি’র বিতার্কিকরা বিজয়ী হয়।

ছায়া সংসদে মক স্পিকার হিসেবে সভাপতিত্ব করেন হাসান আহমেদ চৌধুরী কিরণ। প্রতিযোগিতায় বিচারক ছিলেন ড. এস এম মোর্শেদ, সাংবাদিক মাঈনুল আলম, আহাম্মেদ সরোয়ার হোসেন ভূঁঞা ও উম্মুল ওয়ারা সুইটি। প্রতিযোগিতা শেষে অংশগ্রহণকারী দলের মাঝে ট্রফি ও সনদ বিতরণ করা হয়।