সর্বজনীন পেনশন চালু করতে তাড়াহুড়ো না করার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের

সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা চালুর ক্ষেত্রে তাড়াহুড়ো না করে সবার মতামত নেওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা। তারা বলেছেন, সরকারের শেষ বছরে সর্বস্তরের মানুষ ও আর্থিক বিষয় জড়িত এমন উদ্যোগ নেওয়া হলে এবং নির্বাচনের পর যদি নতুন কোনো সরকার আসে তাহলে তাদের জন্য সেটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হয়ে যাবে। এসময় সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থার সুবিধা যেনো সবাই পায় সেদিকও গুরুত্ব দেওয়ার কথা বলেন বিশেষজ্ঞরা।

বুধবার (১ জুন) জাতীয় প্রেসক্লাবে ‘সার্বজনীন পেনশন ও কর ন্যায্যতা’ শীর্ষক প্রাক-বাজেট আলোচনায় তারা এসব কথা বলেন। কোস্ট ফাউন্ডেশন এই আয়োজন করে।

আলোচনা সভায় ড. কাজী খলিকুজ্জমান বলেন, আমরা চাই সর্বজনীন পেনশনব্যবস্থা দ্রুত হোক, কিন্তু সুন্দর হোক৷ নির্দিষ্ট একটা সময় নির্ধারণ হোক যে এই সময়ের মধ্যে আইনটি করা হবে, সবার পরামর্শের ভিত্তিতে যা যা করা দরকার তা করা হবে। কারণ আমরা দেখেছি জাতীয় শিক্ষানীতি-২০১০ সালে করা হলেও এটি এখনো শুরু হয়নি।

তিনি বলেন, ১৮ থেকে ৬০ বছরের যারা চাঁদা দেবে তারা পেনশন পাবেন কিন্তু যারা চাঁদা দিতে পারবেন না তাদেরও আওতাভুক্ত কিভাবে করা যায় সেটাও ভাবতে হবে।

সর্বজনীন পেনশন ব্যবস্থায় জবাবদিহি নিশ্চিতের পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, 'আইন এমনভাবে হতে হবে যাতে পি কে হালদার তৈরি না হয়। ব্যবস্থাপনা যাতে সুন্দর হয় সেটা দেখতে হবে।

সভায় জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের সাবেক চেয়ারম্যান মোহাম্মদ আব্দুল মজিদ বলেন, সরকার ২০১২ সালে আইএমএফের চাপে তাড়াহুড়ো করে ভ্যাট আইন করলেও সেটা বাস্তবায়ন করতে সময় লেগেছে। আবার সরকারের শেষ বছরে করলে যদি নতুন সরকার আসে তাদের জন্য এটি বাস্তবায়ন করা কঠিন হবে।

তিনি বলেন, আমাদের ট্যাক্স নেট বাড়াতে হবে। কিন্তু ট্যাক্স দিয়ে নাগরিকরা যেনো সেবা পায় সেটা নিশ্চিত করতে হবে৷ কারণ উন্নত বিশ্বে নাগরিকরা ট্যাক্স দেন, রাষ্ট্র তাদের সেবা দেয়। কিন্তু আমাদের এখানে ট্যাক্স দেওয়ার পর সেবা পাবে কিনা তা নিশ্চিত না। কারণ ট্যাক্সও দিচ্ছে আবার সন্তানের স্কুলের টিউশন ফিও এখানে দিতে হচ্ছে। ট্যাক্স দেওয়ার পর ডাক্তার দেখানোর পর তাকে ক্লিনিকে যাওয়ার জন্য বলা হয়।

কর ব্যবস্থার সঙ্গে পেনশনকে যুক্ত করা হলে দেশে করদাতার সংখ্যা জ্যামিতিকহারে বাড়বে এমন মন্তব্য করে স্থানীয় সরকার বিশেষজ্ঞ ড. তোফায়েল আহমেদ বলেন, এখন দেশে কর প্রদানকারীরা তাদের দেওয়া ট্যাক্সের বিপরীতে সরাসরি কোনো লাভ পান না। পেনশন পাওয়ার গ্যারান্টি থাকলে দেশে করের ভিত্তি শক্তিশালী হবে। প্রত্যেক করদাতার নামে পেনশন হিসাব স্বয়ংক্রিয়ভাবে খোলা যেতে পারে৷ এবং করদাতার প্রদত্ত একটি অংশ (৫-১০ শতাংশ) পেনশন হিসেবে জমা হবে।

তিনি বলেন, আগামী অর্থবছর থেকে করের অর্থ থেকে পেনশন তহবিল গঠন শুরু হোক। প্রতিবছর প্রাপ্ত ভ্যাটের ৫ থেকে ১০ শতাংশ পেনশন তহবিলে জমা দেবে সরকার। এটা এনবিআর সংরক্ষণ করবে। সরকার এই টাকা বিনিয়োগ করবে এবং মুনাফার অর্থ পেনশন তহবিলে জমা হবে।

তোফায়েল আহমেদ আরও বলেন, সার্বজনীন পেনশন একটি জটিল প্রক্রিয়া। তাই সুনির্দিষ্ট কিছু ধাপ স্থির করে অন্তত ৫ বছর সময় নিয়ে একটি রোডম্যাপ করা উচিত। এখানে টেকসই তহবিল, ভালো আইনি কাঠামো ও দক্ষ প্রশাসনিক সংগঠন প্রয়োজন।

আলোচনা সভায় সংসদ সদস্য ব্যারিস্টার শামীম হায়দার পাটোয়ারীসহ বিশিষ্টজনেরা উপস্থিত ছিলেন।