প্রশাসনের সঙ্গে লুকোচুরি খেলছে পুরান ঢাকার রাসায়নিক মজুতদাররা

পুরান ঢাকার কোথাও আগুন লাগলে পাওয়া যায় না অবৈধ রাসায়নিক মজুতদারদের নাম কিংবা দাহ্য বস্তুর তথ্য। আগুন লাগার পর কিছু দিন অভিযান চললেও পরে তা থেমে যায়। ট্রেড লাইসেন্স না থাকায় অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে দেওয়া হলেও ফের চালু হয় এসব কারখানা। প্রশাসনের সঙ্গে প্রতিনিয়ত চলছে অসাধু ব্যবসায়ীদের লুকোচুরি খেলা।

সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, পুরান ঢাকার অসাধু বাড়িওয়ালারা আর্থিক লাভের কারণেই কেমিক্যাল ও দাহ্য পদার্থের গোডাউন ভাড়া দিচ্ছেন। রাতেই চলে লোড-আনলোডের কাজ।

ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন বলছে, ২০১৮ সালের পর থেকে আর এ ধরনের ব্যবসার লাইসেন্সই দেওয়া হচ্ছে না। যাদের আগের লাইসেন্স ছিল তাদেরটাও নবায়ন করা হচ্ছে না। তাই এখন এ ধরনের রাসায়নিক মজুত ও গোডাউন পুরোপুরি অবৈধ।

পুরান ঢাকায় এমন এক হাজার ৯২৪টি গোডাউন চিহ্নিত করে মন্ত্রিপরিষদ গতবছরের এপ্রিলের শেষের দিকে একটি তালিকা করে। সে তালিকার পরিপ্রেক্ষিতে এখনও কোনও নির্দেশনা পায়নি সিটি করপোরেশন। নির্দেশনা পেলে ব্যবস্থা নেবে বলে জানিয়েছে সংস্থাটি।IMG_20220606_140322

এ বিষয়ে সরেজমিনে খোঁজ নিতে সোমবার (৬ জুন) ইসলামবাগ লালবাগ ওয়াটার ওয়ার্কস রোড ঘুরে দেখা গেছে, বিভিন্ন দাহ্য পদার্থের পণ্যে ঠাসা বিভিন্ন গোডাউন। কেমিক্যাল জাতীয় পণ্য আনা-নেওয়া হচ্ছে জারে করে। বৈধ-অবৈধ বিষয় নিয়ে নেই কোনও উত্তর। বিশেষ করে প্লাস্টিক কারখানাগুলোয় যে যার কাজে ব্যস্ত। 

মন্ত্রিপরিষদে পাঠানো ডিএসসিসির তালিকা বিশ্লেষণে দেখা যায়, কর অঞ্চল ৩-এ ১৩০১টি, কর অঞ্চল ৪-এ ৫৮৫টি এবং কর অঞ্চল ৫-এ ৩৮টি কেমিক্যাল গোডাউন রয়েছে। এর মধ্যে কর অঞ্চল ৩ ইসলামবাগে পাঁচশ’র মতো গোডাউন রয়েছে। কেমিক্যালের ধরন ও ঝুঁকির মাত্রা বিবেচনায় মাঝারি আকারের ঝুঁকিতে থাকা গোডাউন ৯৮ শতাংশ। অতি ঝুঁকিপূর্ণ ০.৫ শতাংশ, নিম্ন ঝুঁকিপূর্ণ ১.৫ শতাংশ।

ফায়ার সার্ভিসের নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, যারা অবৈধভাবে রাসায়নিক গোডাউন পরিচালনা করছেন তারা গোপনেই করছেন। দিনের বেলা বন্ধ থাকে। দেখে বোঝার উপায় থাকে না। সরকারিভাবে টঙ্গী ও শ্যামপুরে গোডাউন আছে। কেরানীগঞ্জে এখনও কার্যক্রম শুরু হয়নি।

তিনি আরও জানান, করোনার আগে বিভিন্ন টাস্কফোর্সের মাধ্যমে আমরা অভিযান চালিয়েছিলাম। ফায়ার সার্ভিস কোনও লাইসেন্স দিচ্ছে না, নবায়নও করছে না। অবৈধ গোডাউন নিয়ে বিষয়ে আমাদের নজরদারি রয়েছে। তথ্য পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

পুরান ঢাকার স্থানীয়রা বলছেন, কাদের প্রভাবে পুরান ঢাকায় এখনও রাসায়নিকের গুদাম রয়েছে তা খতিয়ে দেখা দরকার। বড় কিছু ঘটলে আমরা লাশের পর লাশ দেখি। যখনই এ ধরনের গোডাউনের খবর পাওয়া যাবে তখনই যেন স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের বিষয়টি অবহিত করা হয়।

ডিএসসিসির ৩১ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর শেখ আলমগীর বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অনেক বাড়িওয়ালা এখনও গোডাউন ভাড়া দিচ্ছে। তারা বলে পাউডার কারখানার জন্য ভাড়া দিচ্ছেন। আমরা বাইরে থেকে বুঝতে পারি না সেগুলো কীসের। যদি একজন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটের মাধ্যমে অভিযান চালানোর টিম করে দেওয়া হয় তবে সুফল পাওয়া সম্ভব।

তিনি আরও বলেন, এলাকাবাসীর সহায়তাও দরকার। জনপ্রতিনিধি কিংবা সরকারের পক্ষে রাতারাতি এ ধরনের গোডাউন উচ্ছেদ সম্ভব নয়। স্থানীয়রা তথ্য দিলেও এ ধরনের কেমিক্যাল গোডাউন স্থাপন করা সম্ভব হবে না।

পরিদফতরে ৫৪টি রাসায়নিক দ্রব্যের যে তালিকা রয়েছে সেগুলোর কোনোটি পুরান ঢাকায় মজুত রাখা হয় না উল্লেখ করে বিস্ফোরক পরিদফদতরের উপপ্রধান বিস্ফোরক কর্মকর্তা ড. মো. আব্দুল হান্নান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, লাইসেন্স ছাড়া যারা এ কাজ করে যাচ্ছেন তারা অবৈধ কাজই করছেন।

নগর পরিকল্পনাবিদ ইকবাল হাবিব বলেন, সেবা সংস্থাগুলোর সমন্বয়হীনতাতেই পুরান ঢাকা থেকে রাসায়নিক দ্রব্যের গোডাউন সরানো যাচ্ছে না। যারা দায়িত্বে রয়েছেন তারা দায়িত্বশীল আচরণ করছেন না।

ডিএসসিসির জনসংযোগ কর্মকর্তা আবু নাসের বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অবৈধ গোডাউন এবং মজুতদারদের তালিকা মন্ত্রিপরিষদে পাঠিয়েছি। বিভাগ যে নির্দেশনা দেবে সে অনুযায়ী কাজ করবো।