গেজেটভুক্তির জটিলতায় অনিয়ম-দুর্নীতির শিকার বীরাঙ্গনারা: টিআইবি

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকিস্তানি হানাদার ও তাদের এ দেশীয় দোসরদের দ্বারা নির্যাতনের শিকার নারীদের ২০১৫ সালে ‘নারী মুক্তিযোদ্ধা বা বীরাঙ্গনা’ হিসেবে স্বীকৃতি দেয় সরকার। তবে স্বাধীনতার ৫০ বছর পরও তাদের গেজেটভুক্তির জটিলতায় অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হতে হচ্ছে বলে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশ-টিআইবির এক প্রতিবেদনে উঠে আসে। রয়েছে জালিয়াতির মাধ্যমে বিতর্কিত ব্যক্তিদের গেজেটভুক্ত হওয়ার অভিযোগও।

বৃহস্পতিবার (১৬ জুন) টিআইবির এক ভার্চুয়াল সংবাদ সম্মেলনে ‘বীরাঙ্গনাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও অধিকার: সুশাসনের চ্যালেঞ্জ এবং উত্তরণের উপায়’ শীর্ষক গবেষণা প্রতিবেদনটি তুলে ধরা হয়। গবেষণা কাজে নেতৃত্ব দিয়েছেন টিআইবির রিসার্চ অ্যান্ড পলিসির পরিচালক মোহাম্মদ রফিকুল হাসান। অন্য দুই টিম সদস্য হলেন সিনিয়র রিসার্চ ফেলো শাহজাদা এম আকরাম ও রাবেয়া আক্তার কনিকা।

সংবাদ সম্মেলনে গবেষণার বিস্তারিত উপস্থাপন করতে গিয়ে রাবেয়া আক্তার কনিকা বলেন, ‘নারী মুক্তিযোদ্ধারা গেজেটভুক্ত করা এবং আবাসন সুবিধা পাওয়ার ক্ষেত্রে বিভিন্ন ধরনের অনিয়ম ও দুর্নীতির শিকার হন। নানা কারণে এ নিয়ে অভিযোগ করতেও আগ্রহ দেখান না তারা। এ ক্ষেত্রে শাস্তির ব্যবস্থা থাকলেও অনিয়ম চিহ্নিত করার ব্যবস্থা নেই।’

এ ছাড়া সামাজিকভাবে নেতিবাচক মনোভাব থেকে বীরাঙ্গনাদের রক্ষায় তেমন কোনও পদক্ষেপ নেই। স্বীকৃতি প্রাপ্তি এবং সুযোগ-সুবিধার ক্ষেত্রে সমস্যা আছে। সরকারি স্বীকৃতির পরেও পরিবার ও সমাজে প্রতিকূল পরিবেশ ও পরিস্থিতির সম্মুখীন হচ্ছেন তারা—এমন প্রমাণও মিলেছে বলে উল্লেখ করা হয় গবেষণা প্রতিবেদনে।

এ বিষয়ে টিআইবির নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘বীরাঙ্গনাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি ও সুযোগ-সুবিধা দেওয়া একটি ভালো পদক্ষেপ। তবে এ ক্ষেত্রে পুরো প্রক্রিয়ায় বিভিন্ন ধরনের ঘাটতি লক্ষ্য করা যাচ্ছে। বীরাঙ্গনাদের স্বীকৃতি ও অধিকার প্রাপ্তির প্রক্রিয়া বাস্তবায়নের বেলায় পরিকল্পনাহীনতা, প্রাতিষ্ঠানিক সক্ষমতার অভাব, কাঠামোগত জটিলতা, অনিয়ম ও দুর্নীতির সুযোগ, জবাবদিহি ব্যবস্থা ও সংবেদনশীলতা এবং সামাজিক সচেতনতায় ঘাটতি লক্ষণীয়। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্টদের নজর দেওয়া জরুরি।’

টিআইবির তথ্য মতে, মুক্তিযুদ্ধ-বিষয়ক মন্ত্রণালয়ের এমআইএসে এখন পর্যন্ত ৪৪৮ জন বীরাঙ্গনা মুক্তিযোদ্ধা গেজেটভুক্ত হয়েছেন। সংখ্যাটি হালনাগাদ নয়, অনেকের নাম-ঠিকানায় ভুল আছে। সরকারি বা এলাকাভিত্তিক তালিকা না থাকা এবং পরিবারের অসহযোগিতায় বীরাঙ্গনাদের খুঁজে পাওয়াও এখন কঠিন হয়ে পড়েছে।