সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার বলে ছড়ানো হচ্ছে ভুয়া ছবি

সিলেট ও সুনামগঞ্জে বন্যায় জনসাধারণের আবেগকে পুঁজি করে বেশ কিছু ছবি ও ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিচ্ছে একটি মহল। সাধারণ মানুষের ইমোশনকে টার্গেট করে তারা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভুয়া ছবি পোস্ট করছে। যারা ইচ্ছাকৃত কিংবা না বুঝে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে এ ধরনের অপপ্রচারমূলক ছবি পোস্ট করছে তাদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় আনবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী।

আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ কিছু বিভ্রান্তিমূলক ছবি ছড়িয়ে পড়েছে। বিশেষ করে একটি পাতিলের মধ্যে দুই শিশুর বসে থাকার ছবি এবং বাঁধ খুলে দেওয়ার পর পানি ঢুকছে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শেয়ার করেছেন। এসব ছবি ও ভিডিও এরইমধ্যে ভাইরাল হয়ে গেছে।

ফরেনসিক রিপোর্টে দেখা গেছে, পাতিলের মধ্যে বসে থাকা দুই শিশুর ছবিটি ২০ থেকে ২৫ মে সময়ের মধ্যে পোস্ট করা। যা গতকাল থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অনেকেই শেয়ার করছেন। ছবি এবং ভিডিওগুলো বাংলাদেশের কোনও জায়গার কিনা; সেটার উৎস খোঁজা হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা বলছেন, স্বভাবত বোঝা যাচ্ছে এগুলো এডিট করে ইচ্ছাকৃত একটি মহল জনগণের আবেগ নিয়ে খেলছে। তারা এসব ছবি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে দিয়ে ফায়দা নেওয়ার চেষ্টা করছে। কারা এসব ছবি এবং ভিডিও প্রথমে শেয়ার বা আপলোড করেছে তা খতিয়ে দেখছেন সাইবার বিশেষজ্ঞরা। এসব ছবির কোনোটাই সিলেটের বন্যার নয়।

এছাড়া বাঁধ দিয়ে পানি আসছে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাও প্রাথমিকভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে এ ধরনের কোনও বাঁধ বাংলাদেশে নেই।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, পাতিলের যে ছবিটি ভাইরাল হয়েছে তা বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, পাতিলে বসে থাকা শিশুদের অভিব্যক্তি বলে দিচ্ছে সে উচ্ছ্বসিত। এমন একটি পাতিলের ভেতর দুজন শিশুকে ঢোকানো সম্ভব নয়। বাস্তবিক অর্থে ছবিটি এডিট করা। এছাড়া বাঁধ দিয়ে পানি আসছে এমন একটি ভিডিও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ঘুরপাক খাচ্ছে। তাও প্রাথমিকভাবে বিশ্লেষণ করে দেখা যাচ্ছে, এ ধরনের কোনও বাঁধ বাংলাদেশে নেই।

এছাড়া বন্যায় সহায়তার নামে অনেক ফেসবুক পেজ থেকে বন্যাদুর্গতদের পাশে দাঁড়ানোর কথা বলে তারা তাদের মোবাইল ব্যাংকিংয়ে টাকা সহায়তা চাচ্ছেন। এতে অসাধু চক্রগুলো সক্রিয় হয়ে উঠেছে। যারা সহায়তা করতে চান তাদের জেনে-বুঝে সরকারের অনুমোদিত প্রতিষ্ঠানগুলোতে সহায়তা দেওয়ার পরামর্শ বিশেষজ্ঞদের।

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ-ডিএমপির সাইবার ও স্পেশাল ক্রাইম বিভাগের উপ-পুলিশ কমিশনার তারিক মুহাম্মদ বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ভুয়া ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে পড়ার বিষয়টি আমরা অবগত হয়েছি। যারা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত ছবিগুলো এডিট এবং আগের ভিডিও পোস্ট করে সিলেট-সুনামগঞ্জের বন্যার ছবি ও ভিডিও বলে চালিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করছে তাদের বিষয়গুলো আমরা খতিয়ে দেখছি। জড়িতদের চিহ্নিত করে দ্রুত আইনের আওতায় নিয়ে আসা হবে। কোনও তথ্য যাচাই-বাছাই না করে নিশ্চিত না হয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে শেয়ার না করার পরামর্শ দেন তিনি।

সাইবার বিশেষজ্ঞ তানভীর হাসান জোহা বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, বেশ কয়েকটি ছবি ও ভিডিও সম্পর্কে আমরা ফরেনসিক করেছি। সম্প্রতি বন্যার সঙ্গে এসব ছবির সম্পৃক্ততা নেই। ছবিগুলো অনেক আগের পোস্ট করা। পাতিলের ভেতর দুই শিশুর বসে থাকার যে ছবিটি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভাইরাল হয়েছে সেটির ফরেনসিক আমরা করেছি। ছবিটির পারিপার্শ্বিক অবস্থা পর্যবেক্ষণ করে দেখা গেছে সিলেটের বন্যার সঙ্গে এটির কোনও সম্পৃক্ততা নেই। এ জাতীয় ছবি যাতে না ছড়ায় সেদিকে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে।