ছিঁচকে চোর থেকে দুর্ধর্ষ ডাকাত সর্দার সাদ্দাম

বয়স মাত্র ৩০। ছোটবেলা থেকেই ছিঁচকে চুরি করে বেড়াতো সে। একাধিকবার জেলও খেটেছে, কিন্তু অপরাধ কর্মকাণ্ড থেকে বের হয়ে আসেনি। বরং ছিঁচকে চোর থেকেই সে বনে গেছে দুর্ধর্ষ ডাকাত নেতা। সিএনজি-চালক পেশার আড়ালে সে একটি ডাকাত দল তৈরি করেছিল। রাজধানী ঢাকার আশপাশের বিভিন্ন এলাকায় ডাকাতি করে বেড়াতো তারা। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। সোমবার (২০ জুন) রাতে মোহাম্মদপুরের ঢাকা উদ্যান এলাকা থেকে সেই ডাকাত সর্দার সাদ্দাম হোসাইনকে অস্ত্রসহ গ্রেফতার করেছে ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিম। মঙ্গলবার (২১ জুন) তাকে আদালতে সোপর্দ করে একদিনের রিমান্ডে নেওয়া হয়েছে।

ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের তেজগাঁও জোনাল টিমের অতিরিক্ত উপ-পুলিশ কমিশনার শাহাদত হোসেন সুমা জানান, সাদ্দাম একটি ডাকাত দলের সর্দার। সে তার সহযোগীদের নিয়ে ঢাকার আশপাশের এলাকায় নিয়মিত ডাকাতি করে বেড়াতো। এর আগে গত মাসের শেষ দিকে এই দলের আরও কয়েকজন সদস্যকে গ্রেফতার করা হয়। তখন থেকেই ডাকাত সর্দার সাদ্দাম পলাতক ছিল।

গোয়েন্দা কর্মকর্তারা জানান, ডাকাত দলের সর্দার সাদ্দাম মাঝির গ্রামের বাড়ি ভোলার রাজাপুর এলাকায়। ছোটবেলায় স্থানীয় একটি মাদ্রাসায় পড়াশোনা করেছে সে। এরপর বাবা-মায়ের সঙ্গে ঢাকার কামরাঙ্গীরচরের ঝাউচর এলাকায় বসবাস শুরু করে। এখানে থেকেই সে চুরি-ডাকাতিতে জড়িয়ে পড়ে। এখন তার বাবা-মা ও ভাইয়ের পরিবার গাজীপুরের কাশিমপুর এলাকায় বাস করে।

জব্দ করা অস্ত্রসহ গোয়েন্দা হেফাজতে সাদ্দাম হোসাইনগোয়েন্দা সূত্র জানায়, সাদ্দামের নেতৃত্বে ডাকাত চক্রটি রাজধানীর চারপাশের বিভিন্ন এলাকার প্রবাসী ও ধনী ব্যক্তিদের বসতবাড়ি টার্গেট করে ডাকাতি করে বেড়াতো। সিএনজি-চালক, রঙমিস্ত্রিসহ বিভিন্ন পেশার আড়ালে তারা টার্গেট করা ব্যক্তির বাসা রেকি করে আসতো। তারপর রাতে সিএনজি নিয়েই ডাকাতি করতে বের হতো। সাধারণত সিএনজিতে সহযোগীদের নিয়ে যাত্রীবেশে এক এলাকা থেকে আরেক এলাকায় যাতায়াত করতো। ফলে সড়কে চেকপোস্টে তাদের সন্দেহ করতো না পুলিশ।

এর আগে গ্রেফতার হওয়া সাদ্দামের দুই সহযোগী সুজন ও ইব্রাহীম জানিয়েছে, তাদের দলনেতা সাদ্দাম অনেক বাকপটু। কোনও বাসায় ডাকাতি করার উদ্দেশে বের হওয়ার আগে তারা একটি নির্দিষ্ট জায়গায় এক হয়ে নিজেদের মোবাইল ফোন রেখে যেতো। ডাকাতি শেষে তারা আবার সিএনজিযোগে সেই জায়গায় মিলিত হয়ে টাকা-পয়সা ভাগবাটোয়ারা করে নিতো।

গ্রেফতার সাদ্দাম জানিয়েছে, গত ২৪ ফেব্রুয়ারি ধামরাইয়ের কুশুড়া টোপেরবাড়ি এলাকার বীর মুক্তিযোদ্ধা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত সোহরাব হোসেনের বাড়িতে ডাকাতি করেছে তারা। একই রাতে তারা পাশের আরেকটি বাসায় ডাকাতি করতে গিয়ে স্থানীয় লোকজনের ধাওয়া খেয়ে পালিয়ে যায়। গত ২৫ এপ্রিল মধ্যরাতে কেরানীগঞ্জের ঘোষকান্দা গ্রামের বাসিন্দা সানাউল্লাহর বাড়িতেও তার দল ডাকাতি করেছে। ওই ঘটনায় বাধা পেয়ে তার দলের সদস্যরা গুলিও ছুড়েছিল।

গোয়েন্দা পুলিশের এক কর্মকর্তা জানান, সাদ্দাম স্বল্প শিক্ষিত হলেও অনেক চতুর। তথ্য-প্রযুক্তি সম্পর্কেও সে ওয়াকিবহাল। কোনও বাসায় ডাকাতির আগে সিসিটিভি ক্যামেরা আছে কিনা, নিশ্চিত হয়ে নেয়। সিসিটিভি ক্যামেরা থাকলে ডাকাতি শেষে তারা ক্যামেরার ডিভিআর খুলে নিয়ে যায়। তার অন্যান্য সহযোগীকে গ্রেফতারে অভিযান চালানো হচ্ছে।