‘জাতীয় কবি’র গেজেট চেয়ে হাইকোর্টে রিট

বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলামকে ‘জাতীয় কবি’ হিসাবে ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশের নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্ট রিট দায়ের করা হয়েছে।

বুধবার (২২ জুন) হাইকোর্টের সংশ্লিষ্ট শাখায় সুপ্রিম কোর্টের ১০ আইনজীবীর পক্ষে আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন এ রিট দায়ের করেন। পরে তিনি বলেন, বিচারপতি ফারাহ মাহবুব ও বিচারপতি এস এম মনিরুজ্জামনের হাইকোর্ট বেঞ্চে আবেদনটির ওপর শুনানি হতে পারে।

রিট আবেদনকারী অন্যান্য আইনজীবীরা হলেন মোহাম্মদ মিসবাহ উদ্দিন, মো. জোবায়দুর রহমান, আল রেজা মো. আমির, মো. রেজাউল ইসলাম, কে এম মামুনুর রশিদ, মো. আশরাফুল ইসলাম, শাহীনুর রহমান, মো. রেজাউল করিম এবং মো. আলাউদ্দিন।

রিট আবেদনে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব, বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক এবং নজরুল ইনস্টিটিউটের নির্বাহী পরিচালককে বিবাদী করা হয়েছে।

পরে রিট আবেদনকারী আইনজীবী মো. আসাদ উদ্দিন সাংবাদিকদের জানান, দেশের আপামর জনগণ এমনকি ছোট্ট শিশুটিও জানে বাংলাদেশের জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম। কিন্তু বাস্তবে এটির কোনও দালিলিক ভিত্তি নেই। মৌখিকভাবে তিনি জাতীয় কবি হিসেবে পরিচিত হলেও লিখিতভাবে রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। বলা হয়ে থাকে, ১৯২৯ সালের ১৫ ডিসেম্বর কলকাতার আলবার্ট হলে একটি সংবর্ধনা অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। সেখানে সর্বভারতীয় বাঙালিদের পক্ষ থেকে কবিকে জাতীয় সংবর্ধনা দেওয়া হয়। অনুষ্ঠানে নেতাজি সুভাষ চন্দ্র বসু, শেরে বাংলা এ কে ফজলুল হকসহ গুরুত্বপূর্ণ অনেকে উপস্থিত ছিলেন। ওই সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে নজরুলকে ‘জাতীয় কবি’ হিসাবে ঘোষণা করা হয়। সেই থেকে মুখে মুখে তিনি জাতীয় কবি হয়ে আছেন। কিন্তু আজ পর্যন্ত সরকারিভাবে তাকে জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষণা করে কোনও প্রজ্ঞাপন বা গেজেট প্রকাশ করা হয়নি।

তিনি আরও বলেন, স্বাধীনতার পর ১৯৭২ সালের ২৪ মে বঙ্গবন্ধুর উদ্যোগে কবিকে বাংলাদেশে আনা হয়। বসবাসের জন্য সরকারের পক্ষ থেকে ধানমন্ডিতে তাঁকে একটি বাড়ি দেওয়া হয়। বাংলা সাহিত্য ও সংস্কৃতিতে অবদানের জন্য ১৯৭৪ সালের ৯ ডিসেম্বর ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় তাকে ডি-লিট উপাধিতে ভূষিত করে। এরপর ১৯৭৬ সালে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব দিয়ে সরকারি আদেশ জারি করা হয়। ১৯৭৬ সালের ২১ ফেব্রুয়ারি তাঁকে ‘একুশে পদক’ দেওয়া হয়।

কিন্তু স্বাধীনতার ৫০ বছর এবং কবির মৃত্যুর ৪৫ বছর পেরিয়ে গেলেও জাতীয় কবির রাষ্ট্রীয় আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতির বিষয়ে কোনও যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া হয়নি। যদিও ইতোপূর্বে নজরুল ইনস্টিটিউটের পক্ষ থেকে সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে দু’-একবার চিঠি পাঠানো হয়েছিল। কিন্তু সেটি কোনও আলোর মুখ দেখেনি।

রিট আবেদনে বলা হয়েছে, বাংলাদেশের দুটি আইনে জাতীয় কবি হিসাবে নজরুলের নাম উল্লেখ করা হয়েছে। বিভিন্ন সরকারি আয়োজনে তাকে জাতীয় কবি হিসেবে উল্লেখও করা হয়। কিন্তু সবই পরোক্ষ স্বীকৃতি। এমন স্বীকৃতি কালের পরিবর্তনে মুছে যেতে পারে।

বাংলাদেশে প্রচলিত অন্যান্য জাতীয় পুরস্কার ও পদক প্রদানে অনিবার্য কিছু আনুষ্ঠানিকতা অনুসরণ করতে হয়। সম্মাননাপত্র, পদক ইত্যাদি প্রদান করা হয়। কিন্তু কাজী নজরুল ইসলামের জাতীয় কবি ঘোষণায় এমন কোনও আনুষ্ঠানিকতার তথ্য বা প্রমাণ নেই।

কাজী নজরুল ইসলাম আমাদের ইতিহাসের অবিচ্ছেদ্য অংশ। ইতিহাস ও জাতীয় স্বীকৃতি কখনও অলিখিত থাকতে পারে না। অলিখিত ইতিহাস ও তথ্য সময়ের বিবর্তনে বিলীন হয়ে যায়। এছাড়া নজরুলকে জাতীয় কবি হিসাবে ঘোষণার দাবিতে কবি পরিবারের পক্ষ হতে বারবার অনুরোধ হয়েছে। নজরুল গবেষক এবং সাহিত্য-সংস্কৃতি সংশ্লিষ্টদের পক্ষ থেকেও অনেক দাবি জানানো হয়েছে। কিন্তু অদ্যাবধি এ বিষয়ে সরকারের পক্ষ থেকে দৃশ্যমান কোনও উদ্যোগ নেওয়া হয়নি। তাই দেশের সচেতন নাগরিক এবং উচ্চাদালতের আইনজীবী হিসাবে রিট আবেদন দায়ের করা হয়েছে বলে আইনজীবী জানিয়েছেন।