বিদেশে প্রশিক্ষণ নিলেও কর্মস্থলে অ্যাম্বুলেন্স-মরচুয়ারিভ্যান চালান না তারা

আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্পের আওতায় ২০১৮ সালে মালয়েশিয়া থেকে ১৪টি বিশেষায়িত অ্যাম্বুলেন্স ও মরচুয়ারিভ্যান (লাশবাহী গাড়ি) কিনেছিল রাজধানীর দুই সিটি করপোরেশন। যানগুলো পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন (ডিএনসিসি) থেকে সাতজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয় মালয়েশিয়ায়। কিন্তু তাদের কেউই কর্মস্থলে ওইসব বিশেষায়িত ও দামি যানবাহন চালান না।  যানগুলো চালানোর জন্য নির্ধারিত কোনও চালক নেই, যখন যে পারে চালায়।

সিটি করপোরেশন সূত্র বলছে, ২০১৮ সালের ডিসেম্বরে ও ২০১৯ সালের জানুয়ারিতে পাঁচ দিন করে মালয়েশিয়ায় প্রশিক্ষণ নেন ডিএনসিসি’র সহকারী সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মো. এনায়েত হোসেন, ফুড অ্যান্ড স্যানিটেশন কর্মকর্তা আবদুল খালেক মজুমদার, উপসহকারী প্রকৌশলী মোহাম্মদ  আবদুল হান্নান খান, মো. নাজমুল হুদা ও মোহাম্মদ আমিনুর রহমান চৌধুরী, প্রধান  নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচালক আমির হোসেন ও  সচিবের গাড়িচালক  ইসরাফিল হোসেন।

জানা যায়, ঢাকায় দুর্যোগের মোকাবিলার ২০১৫ সালে ৮১২ কোটি টাকার আরবান রিজিলিয়েন্স প্রকল্পে দুই সিটি করপোরেশনের জন্য পাঁচটি করে ১০টি অত্যাধুনিক অ্যাম্বুলেন্স ও দুটি করে চারটি লাশবাহী গাড়ি সংগ্রহ করে দুই সিটির ১০টি জোনে ভাগ করে দেওয়া হয়।

প্রকল্প কর্তৃপক্ষ জানায়,  অত্যাধুনিক সুবিধা থাকায় গাড়িগুলো পরিচালনা ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য উত্তর সিটি থেকে মোট সাতজনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়।

উত্তর সিটির মিরপুর-১০ অঞ্চলের আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা আবেদ আলী জানিয়েছেন, তার অঞ্চলের অ্যাম্বুলেন্সটি তুহিন নামের বিদ্যুৎ বিভাগের এক কর্মী চালাচ্ছেন।

এ বিষয়ে প্রধান  নির্বাহী কর্মকর্তার গাড়িচালক আমির হোসেন  বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন,‘আমাদেরকে অফিসিয়ালভাবে দেখার জন্য নিয়ে গেছে। আমাদের চালানোর কথা ছিল না। এগুলো যে কেউ চালাতে পারে।

কী প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে জিজ্ঞাসা করা হলে তিনি বলেন, ‘আমাদেরকে শুধু দেখাইছে— এটা সুইচ, কেমনে চলে, এইসব। অ্যাম্বুলেন্সের যে সিস্টেমটা— এগুলো দেখাইছে শুধু।’

সহকারী সমাজকল্যাণ কর্মকর্তা মো. এনায়েত হোসেন বলেন, ‘ট্রেনিং না আমরা কারখানা পরিদর্শনে গেছিলাম। আমরা মরচুয়ারি ভ্যান-ট্যান দেখে আসছি।আমাদের ড্রাইভার গেছিল। এসব বিষয়ে তাদের সাথে আলাপ করলে ভাল হবে।’ 

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক কর্মকর্তা বলেন,  ‘এ ধরনের প্রশিক্ষণের আসলে দরকার নেই। কারণ সিটি করপোরেশন কোনও গাড়ির রক্ষণাবেক্ষণের কাজ করে না, যখন নষ্ট হয় টেন্ডারের মাধ্যমে মেরামত করা হয়।’

এ ব্যাপারে প্রকল্পের তৎকালীন প্রকল্প পরিচালক তারিক বিন ইউসুফ বলেন, ‘আমরা প্রকল্প থেকে মনোনয়ন চেয়েছি।কর্তৃপক্ষ তাদের মনোনীত করেছে।’

এ বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ‘এই ঘটনা সিটি করপোরেশনে প্রাতিষ্ঠানিক অব্যবস্থাপনা ও অনিয়ম এবং এর ফলে মূল্যবান সম্পদ ও জনগণের অর্থের অপচয়ের এক প্রকট উদাহরণ। যাদের প্রভাব ও অনুমোদনের ভিত্তিতে প্রশিক্ষণের নামে এ ধরনের স্বেচ্ছাচারী সিদ্ধান্ত হয়েছিল, নিরর্থক প্রশিক্ষণ সম্পন্ন হয়েছে, এবং চূড়ান্ত বিবেচনায় জনগণের অর্থের অপচয় হয়েছে, তাদের কঠোর জবাবদিহি নিশ্চিত করতে যদি সিটি করপোরেশন ব্যর্থ হয় তবে ধরে নিতে হবে, প্রতিষ্ঠানের শীর্ষ পর্যায়ের যোগসাজশেই এই অনিয়ম হয়েছে’।