ট্যানারি বন্ধের ব্যবস্থা নিতে বিব্রত মন্ত্রণালয়

সংসদীয় কমিটি মাত্রাতিরিক্ত দূষণ সৃষ্টির দায়ে সাভারে ট্যানারি শিল্প বন্ধ করতে একাধিকবার সুপারিশ করলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। সর্বশেষ রবিবার (১৭ জুলাই) অনুষ্ঠিত সংসদীয় কমিটির বৈঠকে কিছুটা পিছু হটে বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার সুপারিশ করা হয়েছে। অবশ্য সংসদীয় কমিটি দাবি করেছে, তারা তাদের কঠোর অবস্থান থেকে পিছ পা হয়নি। তবে বন ও পরিবেশ মন্ত্রণালয় হয়তো সরকারের আরেকটি মন্ত্রণালয়ের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে বিব্রতবোধ করছে।

পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত স্থায়ী কমিটির বৈঠক শেষে কমিটির সভাপতি সাবের হোসেন চৌধুরী এমন তথ্য জানান।

এদিকে পরিবেশ অধিদফতর ট্যানারি শিল্প এলাকার ধলেশ্বরী নদীর পানি পরীক্ষা করে সেখানে মাছসহ জলজ প্রাণীর জন্য প্রয়োজনীয় অক্সিজেনের ঘাটতি ও মাত্রাতিরিক্ত মেটাল ক্রমিয়ামের অস্তিত্ব থাকার কথা জানিয়েছে সংসদীয় কমিটিকে।

কমিটির সভাপতি এ বিষয়ে বলেন, ‘সাধারণত মাছসহ জলজ প্রাণীর বসবাসের উপযোগিতার জন্য পানিতে প্রতি লিটারে ২০০ মিলিগ্রাম অক্সিজেন থাকার কথা। কিন্তু ধলেশ্বর নদীতে তার তুলনায় দুই থেকে আড়াইগুণ কম অক্সিজেন আছে। বিপরীতে জলজ প্রাণী ও জীববৈচিত্র্যের জন্য ক্ষতিকর মেটাল ক্রমিয়ামের সহনীয় মাত্রা প্রতি লিটারে দুই মিলিগ্রাম। কিন্তু ওই নদীতে সেটা রয়েছে ৫ থেকে ৭ মিলিগ্রাম। ফলে ধলেশ্বরী নদী এখন মাছসহ জলজ প্রাণীর জন্য খুবই ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।’

তিনি জানান, শিল্প মন্ত্রণালয় আগামী তিন থেকে ছয় মাসের মধ্যে অক্সিজেনের মাত্রা বাড়ানো ও ক্রমিয়াম কমিয়ে আনার চেষ্টা করবে বলে প্রতিশ্রুতি দিয়েছে। আমরা বলেছি, ব্যর্থ হলে এর জন্য দায়ী ইউনিটগুলো চালু রাখতে দেবো না। দরকার হলে বিদ্যুৎ বন্ধ করে দেওয়া হবে।

আপনারা অতীতে কয়েক দফায় ট্যানারি বন্ধের সুপারিশ করেছেন, কেন তা বাস্তবায়ন হলো না? এখন বিদ্যুৎ বিচ্ছিন্ন করার কথা বলছেন, তার মানে আপনারা কি সুপারিশ থেকে পিছিয়ে এসেছেন? এমন প্রশ্নের জবাবে সাবের হোসেন বলেন, ‘আমরা এখনও কঠোর অবস্থানে। তবে আমরা মন্ত্রণালয়ের পজিশন কিছুটা বুঝি, আরেকটা মন্ত্রণালয়কে বলতে হয়তো তারা বিব্রত। আমাদের অবস্থান ও আইন সবার জন্য সমানভাবে প্রয়োগ করতে হবে। ব্যক্তির ক্ষেত্রে ব্যবস্থা হবে, আর সরকার বলে ব্যবস্থা নেবো না, সেটা তো হয় না। অবশ্য তারা অনেক যুক্তি দেখায়—এটা শিল্প, কর্মসংস্থান-বৈদেশিক মুদ্রা। কিন্তু আমার তো জনস্বাস্থ্য ও পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যও গুরুত্বপূর্ণ।’

এ প্রসঙ্গে তিনি আরও বলেন, ‘দুই বছর ধরেই আমরা শিল্প মন্ত্রণালয়কে বলেছি। কী কী ব্যবস্থা নিতে হবে, তার ৫/৬টি সুপারিশ আমরা করেছি। কিন্তু তার একটিও বাস্তবায়ন করেনি। তারা শুধু বলে— করছি, করবো, আগামীতে করবো। এটা হবে না। এখন আমরা একটি চূড়ান্ত অবস্থানে যাচ্ছি। এটা করতে হবে।’

এদিকে সংসদ সচিবালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়—বৈঠকে ইটভাটার মাধ্যমে সৃষ্ট বায়ুদূষণকারী ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে আর্থিক জরিমানার পাশাপাশি কারাদণ্ডের বিধান কার্যকর এবং সরকারি সব অবকাঠামো নির্মাণে ২০২৫ সালের মধ্যে শতভাগ ব্লক ইটের ব্যবহার বাধ্যতামূলক করার করণীয় সম্পর্কে মতামত গ্রহণে পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে আগামী সভায় আমন্ত্রণ জানানোর জন্য সুপারিশ করা হয়।

সাবের হোসেন চৌধুরীর সভাপতিত্বে সংসদ ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে কমিটির সদস্য পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তনমন্ত্রী মো. শাহাব উদ্দিন, নাজিম উদ্দিন আহমেদ, জাফর আলম, মো. রেজাউল করিম বাবলু, খোদেজা নাসরিন আক্তার হোসেন ও মো. শাহীন চাকলাদার অংশগ্রহণ করেন।