কয়েক দফা গাড়ি বদলে ঢাকায় আসতো ইয়াবার চালান

কক্সবাজার থেকে সরাসরি না এনে কয়েক দফা পরিবহন বদলে রাজধানীতে ঢুকছে ইয়াবা। গত চার বছর ধরে সক্রিয় এমন এক চক্রকে সম্প্রতি গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর ঢাকা মেট্রো উত্তরের একটি দল।

চক্রের সদস্যদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে চাঞ্চল্যকর সব তথ্য। জানা গেলো, ইয়াবা বিক্রিতে তাদের কাস্টমাররা থাকে নির্দিষ্ট। অপরিচিত কারও কাছে তারা মাদক বিক্রি করতো না। এমনকি তারা অন্য পেশাতেও জড়িত ছিল।

জিজ্ঞাসাবাদে জানা গেছে, এ চক্রের মূলহোতা ছিল মো. মহসিন (৩২)। ঢাকা ও ফতুল্লায় ২২ ও ২৩ জুলাই অভিযান চালিয়ে তাকেসহ মোট সাতজনকে গ্রেফতার করেছে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতর।

অন্য গ্রেফতারকৃতরা হলো— রফিক উল্লাহ (২২), সরওয়ার কামাল (২৩), ইমরান হোসেন (৩০), মিরাজ শেখ (৩৩), প্রান্ত ভট্টাচার্য (২৫) ও মামুনুর রশিদ মিম (২১)।

এ সময় তাদের কাছ থেকে ১১ হাজার ২০০ পিস ইয়াবা, ২০০ গ্রাম আইস ও মাদক বিক্রির তিন লাখ ২০ হাজার টাকা জব্দ করা হয়।

অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, গ্রেফতারকৃত ৭ জন একই সিন্ডিকেটের সদস্য। তবে তারা বিভিন্ন পেশায় নিয়োজিত।

গ্রেফতারকৃত রফিক উল্লাহ ছিল রাজধানীর হাতিরঝিলের মুদি দোকানি। কামাল কাজ করতো শ্রমিক হিসেবে। মহসিন বিভিন্ন জায়গায় টি-শার্ট ও বেল্ট ফেরি করতো। মিরাজ শেখ চালাতো অটো-রিকশা, প্রান্ত ভট্টাচার্য হানিফ পরিবহনের সুপারভাইজার, মামুনুর রশিদ কাজ করতো ইলেকট্রিশিয়ান হিসেবে এবং ইমরান হোসেন ছিল ফুটপাতের ব্যবসায়ী।

গ্রেফতারকৃত সাত জনের মধ্যে দুজনের বাড়ি কক্সবাজারে।

অভিযান সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, কক্সবাজার থেকে আসা ইয়াবা চালান বিভিন্ন হাত ঘুরে রাজধানীতে মহসিনের কাছে আসতো। তাদের নির্ধারিত কাস্টমার ছিল ১৫-২০ জন। তাদের ধরতেও অভিযান চালানো হবে।

মাসে তিন-চারটি চালান আনতো এ চক্র। প্রতিটি চালানে থাকতো ৫ হাজার পিস ইয়াবা। রাজধানীতে এনে বাসায় স্টক করে পরে সরবরাহ করতো।

গ্রেফতারকৃতদের বরাত দিয়ে মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের কর্মকর্তারা বলছেন, কক্সবাজার বা টেকনাফ থেকে ঢাকায় মাদক নিয়ে আসতে ওরা লোকাল বাস ব্যবহার করতো। ভেঙে ভেঙে আসতো। কক্সবাজার থেকে বাঁশখালী হয়ে চট্টগ্রামে পৌঁছাতো আগে। চট্টগ্রাম থেকে লোকাল বাসে ফেনী এবং সেখান থেকে বাস বদলে কুমিল্লায় আসতো। কুমিল্লা থেকে লোকাল বাসে করে নারায়ণগঞ্জ নামতো ওরা। নারায়ণগঞ্জ থেকে লোকাল বাসে করে রাজধানীর নির্ধারিত বাসায় পৌঁছে দিতো মাদক।

মাদক আড়াল করতে সঙ্গে রাখতো বাজারের ব্যাগ।

মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদফতরের ঢাকা মেট্রো উত্তরের সহকারী পরিচালক মেহেদী হাসান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, অভিযান টের পেয়ে ওরা ইয়াবাগুলো সরিয়ে ফেলার চেষ্টা করেছিল। আমরা বাসা তল্লাশি করে রান্নাঘরের সিঙ্কের নিচে ইয়াবা উদ্ধার করি।

তিনি আরও জানান, গ্রেফতারকৃত সাত জনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন থানায় মামলা রয়েছে। আগেও কয়েকবার তারা জেল খেটেছে।