কবে চালু হবে প্যানিক বাটন?

ডাকাতি কিংবা নারী হয়রানি প্রতিরোধে প্রতিটি বাসে প্যানিক বাটন চালুর কথা থাকলেও তা কার্যকর হয়নি। এতে রাজধানীসহ বিভিন্ন মহাসড়কে বেড়ে চলেছে ডাকাতির ঘটনা। এমনকি ডাকাত চক্রের সদস্যরা ঘটাচ্ছে ধর্ষণের মতো অপরাধও। বাসের চালক-হেলপাররাও অনেক ক্ষেত্রে নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকার সুযোগ নিয়ে হয়রানি করছে নারী যাত্রীদের।

বিশেষ করে দূরপাল্লার বাসে যাত্রীর নিরাপত্তায় কার্যকর ব্যবস্থা চালু না হওয়ায় হতাশা জানিয়েছে বিভিন্ন নারী সংগঠন। ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলছেন, প্যানিক বাটনে মাসিক একটি চার্জ ধার্য থাকায় বাস কর্তৃপক্ষ সেটা নিয়ে পদক্ষেপ নিচ্ছে না।

বাস মালিক সংগঠনের নেতারা বলছেন, ডিভাইসের দাম বেশি হওয়ায় সেটা বাসে যুক্ত করা যাচ্ছে না।

গত ২ আগস্ট রাতে কুষ্টিয়া থেকে ঢাকাগামী ঈগল পরিবহনের একটি বাসে ডাকাতির সময় এক নারী সংঘবদ্ধ ধর্ষণের শিকার হন। ডাকাত দলের সদস্যরা অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে বাসের প্রতিটি যাত্রীকে। একপর্যায়ে ওই নারীকে ধর্ষণ করে বাস রেখে পালিয়ে যায় তারা।

পুলিশ এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে এখন পর্যন্ত তিন জনকে গ্রেফতার করেছে।

এছাড়া রাজধানীতেও বিভিন্ন সময় বাসের ড্রাইভার ও হেলপারদের দ্বারা যৌন নির্যাতনের শিকার হচ্ছেন নারী যাত্রীরা। গত ২৪ জুলাই রাতে ধানমন্ডি থেকে আজিমপুর যেতে বিকাশ পরিবহনের একটি বাসে ওঠেন এক নারী যাত্রী। একপর্যায়ে তিনি তন্দ্রাচ্ছন্ন হয়ে পড়েন। পরে দেখতে পান বাসে আর কোনও যাত্রী নেই, পাশের সিটে বসে আছে হেলপার।

সেই হেলপার তাকে যৌন হয়রানির চেষ্টা করে। রেহাই পেতে তাকে ধাক্কা দিয়ে বাস থেকে নামতে গেলে পেছন থেকে তার মুখ চেপে ধরে হেলপার।

ভুক্তভোগী নারী চালককে বাস থামাতে বললেও সে না থামিয়ে এগোতে থাকে। একপর্যায়ে বাস থেকে লাফিয়ে পড়েন ওই নারী।

চলতি বছরের ২২ জানুয়ারি গোল্ডেন লাইন পরিবহনে ঢাকা থেকে ফরিদপুর যাচ্ছিল দুই কিশোরী। পথে বাসের সুপারভাইজরের যৌন হয়রানির শিকার হয় তারা। পরে তাদের অভিযোগের ভিত্তিতে সেই সুপারভাইজারকে আটক করে পুলিশ।

প্যানিক বাটন

মহাসড়কে ডাকাতি কিংবা যৌন হয়রানি প্রতিরোধে প্রতিটি বাসের চালকের পাশে একটি প্যানিক বাটন রাখার সিদ্ধান্ত হয়। যেকোনও অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে প্যানিক বাটনে চাপ দিলেই সহায়তা মিলবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর। বাটনে চাপ দিলেই স্বয়ংক্রিয়ভাবে স্থানীয় পুলিশ সুপার, ৯৯৯, নিকটস্থ থানা এবং সংশ্লিষ্ট বাস কর্তৃপক্ষের মোবাইলে অ্যালার্ম চলে যাবে। পরে বাসটির অবস্থান শনাক্ত করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী দ্রুত ব্যবস্থা নিতে পারবে।

যা বলছে পুলিশ

ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার শফিকুল ইসলাম বলেন, প্যানিক বাটনের সহায়তা নেওয়ার জন্য প্রতি মাসে প্রতিটি বাসে নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দিতে হয়। এই ফি দিতে অনেকেই চায় না।

ঢাকার বাইরে প্যানিক বাটন কার্যক্রম কী অবস্থায় রয়েছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, আমার মনে হয় না এ নিয়ে বেশি কিছু হয়েছে।

মহাখালী বাস টার্মিনাল মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আব্দুল মালেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, প্যানিক বাটন নামের একটি ডিভাইস গাড়িতে বসাতে ডিএমপি কমিশনারের পক্ষ থেকে একটি প্রতিষ্ঠান আমাদের সঙ্গে যোগাযোগ করেছিল। তাদের ডিভাইসের অনেক দাম। সে কারণে ওটা বসানো সম্ভব হয়নি। আমরা চাই সরকারিভাবে ডিভাইসটি দেওয়া হোক। যেন গাড়ির নিবন্ধন নেওয়ার সময় ডিভাইসটি যুক্ত থাকে। পরে আমরা মাসে মাসে যে ফি আসে তা দিতে পারবো।

এছাড়া মহাসড়কে নিরাপত্তার জন্য দায়িত্বরত হাইওয়ে পুলিশকে আরও কার্যকর উদ্যোগ নিতে হবে বলেও জানান তিনি।

 

নারী নেত্রীরা হতাশ

বাংলাদেশ জাতীয় মহিলা আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট সালমা আলী বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, গণপরিবহনে যাত্রী নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারছে না দায়িত্বে থাকা প্রতিষ্ঠানগুলো। সরকারকে আরও কার্যকর ভূমিকা নিতে হবে।

বিশেষ করে নারী নিরাপত্তার বিষয়টি গণপরিবহনে সবসময় উপেক্ষিত থেকে যায় উল্লেখ করে হতাশা প্রকাশ করেন তিনি।

 

যা বলছে হাইওয়ে পুলিশ

হাইওয়ে পুলিশ গাজীপুরের অতিরিক্ত পুলিশ সুপার নাজমুস সাকিব খান বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, মহাসড়কে কোনও অপ্রীতিকর ঘটনা যেন না ঘটে সেই লক্ষ্যে আমরা কাজ করে যাচ্ছি। আমাদের সাধ্যমতো জনবল সড়কে মোতায়েন রয়েছে।

তিনি আরও বলেন, মহাসড়কে দ্রুতগতির বাস চলাচলের সময় ভেতরে কী হচ্ছে তা অনেক সময় বোঝা যায় না। এছাড়া রাস্তার চেকপোস্ট বসিয়ে গাড়ি চেক করলে মহাসড়কে যানজট সৃষ্টি হওয়ার আশঙ্কাও থেকে যায়। এসব বিবেচনায় প্রযুক্তিগত কোন কোন বিষয়ে নজর দেওয়া যায় সে অনুযায়ী কাজ করছি।