বাসে অতিরিক্ত ভাড়া, ক্ষুব্ধ যাত্রীরা

বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন কর্তৃপক্ষের (বিআরটিএ) নির্ধারিত নতুন ভাড়ার তালিকা বাসে টাঙানো না থাকায় রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ করছেন যাত্রীরা। এ নিয়ে প্রায় প্রতিটি বাসেই বাস শ্রমিকদের সঙ্গে বাগবিতণ্ডায় জড়াচ্ছেন যাত্রীরা। তাদের অভিযোগ, ‘নতুন ভাড়ার চার্ট না আসার কারণে হেলপাররা ইচ্ছেমতো ভাড়া আদায় করছেন।’ এতে ক্ষোভ জানিয়েছেন যাত্রীরা।

সোমবার (৮ আগস্ট) রাজধানীর মিরপুর, গাবতলী, আসাদগেট, ফার্মগেটসহ বিভিন্ন এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, রাজধানীর বিভিন্ন সড়কে গত দুই দিনের তুলনায় বাসের সংখ্যা কিছুটা বেশি। তবে ‘ভাড়া নিয়ে মধ্যবিত্ত শ্রেণির ওপর জুলুম চালানো হচ্ছে’ বলে অভিযোগ করেন অনেকেই।

আসাদ গেট এলাকায় আজিজুল ইসলাম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘বাধ্য হয়েই আমাদের গণপরিবহনে চলতে হয়। আর তাদের দাবি অনুযায়ী অতিরিক্ত ভাড়া দিয়েই চলাচল করতে হচ্ছে। আমরাতো কোণঠাসা হয়ে পড়ছি।’ এ নিয়ে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানান বিভিন্ন রুটের যাত্রীরা। তারা বলছেন, আয় না বাড়লেও প্রতিটি ক্ষেত্রেই ব্যয় প্রতিনিয়ত বেড়েই চলেছে।

বাস যাত্রী রেজা বলেন, ‘তেলের দাম বেড়েছে তার পরিপ্রেক্ষিতে একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ ভাড়াও বেড়েছে। তাতেও কোনও আপত্তি নেই। কিন্তু বাসের হেলপাররা অতিরিক্ত ভাড়া দাবি করছেন এবং তারা তাদের চাহিদা অনুযায়ী বিভিন্ন রোডে ১০ থেকে ১৫ টাকা বেশি নিচ্ছে। এসব বিষয়গুলো কি কারও নজরে পড়ছে না।’

বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের চাকরিজীবী শাহীন বলেন, ‘ভাড়ার চার্ট যেন দ্রুত প্রতিটি বাসে রাখা হয় এবং সে অনুযায়ী যেন ভাড়া আদায় করা হয়, যাত্রী হিসেবে আমাদের এটাই চাওয়া। একদিকে ভাড়া বেড়েছে আর সে কারণেই আজ যেন ভোগান্তিতে না পড়তে হয় এ বিষয়টি যেন সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ নজরে আনেন।’

বাসের জন্য অপেক্ষারত সুজন বলেন, ‘বাস ভাড়া বাড়ার পর সরকারের কিংবা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের যে ধরনের নজরদারির প্রয়োজন ছিল; সেই নজরদারি ঘাটতি রয়েছে। কোথাও কর্তৃপক্ষ কিংবা মালিক সমিতির পক্ষ থেকে কোনোধরনের অভিযান পরিচালনা করতে দেখিনি।’

রাজধানীর একটি কলেজের শিক্ষার্থী জানান, ‘তেলের দাম বাড়ার পর থেকে আমরা যারা শিক্ষার্থী রয়েছি, তাদের ভোগান্তি আরও বেড়ে গেছে। হাফ ভাড়া নেওয়ার কথা থাকলেও অনেক ক্ষেত্রেই তারা হাফ ভাড়া না নিয়ে বেশি ভাড়া দাবি করছে।’

বিভিন্ন কোম্পানির বাসে এখনও চলছে ‘ওয়েবিল সিস্টেম’। আর ওয়েবিলের কথা বলেও অনেকে অতিরিক্ত ভাড়া চাইছেন। মোহাম্মদপুর থেকে আব্দুলাহপুরগামী পরিস্থান ও প্রজাপতি গাড়িতে কলেজগেট যাচ্ছিলেন নাইমা আখতার। তার সঙ্গে আসাদ গেট এলাকায় বাগবিতণ্ডা চলছিলো বাসের হেলপারের। তিনি ওয়েবিলের দোহাই দিয়ে বাস ভাড়া দাবি করছেন ১৫ টাকা। ওই যাত্রী বলেন, ‘যতটুকু পথ যাত্রী তার দূরত্ব দুই কিলোমিটারেরও একটু বেশি। প্রতি কিলোমিটারে ২ টাকা ৫০ পয়সা হিসাবেও ভাড়া ৫-৬ টাকার বেশি না। সর্বনিম্ন ভাড়া হিসাবে ১০ টাকা নিতে পারে। অথচ নেওয়া হচ্ছে ১৫ টাকা। এটা এক প্রকার জুলুম।’

এ বিষয়ে হেলপারের কাছে জানতে চাইলে তিনি কোনও জবাব না দিয়ে শুধু বলেন, ‘ভাড়া বেড়েছে।’   

‘রবরব পরিবহনের’ হেলপার শাজাহান উল্টো যাত্রীদের উপর দোষ চাপান। তিনি বলেন, ‘ভাড়া বেড়েছে। আমরা হিসাব করে কিলোমিটার প্রতি ভাড়া নিচ্ছি। কিন্তু যাত্রীদের সাথে তা নিয়ে তর্ক-বিতর্ক হচ্ছে। অনেক সময় যাত্রীরা গায়ে হাত তুলছেন।’ এখনও ভাড়ার চার্ট তারা পাননি বলে দাবি করেন।

এদিকে, বিআরটিএর পক্ষ থেকে বাড়তি ভাড়া আদায়ের বিষয়টি তদারকির জন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার ধারাবাহিকতায় গাবতলীতে পরিচালিত হয় ভ্রাম্যমাণ আদালতের অভিযান। আদালত ১০ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট মোহাম্মদ জুবের আলম বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, আমরা মাঠে রয়েছি। যাত্রীদের বিভিন্ন অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আমরা ব্যবস্থা নিচ্ছি। 

আদালত ৩ এর নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট সাজ্জাদুল হাসান রাজধানী বনানী এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। এর আগে তিনি মহাখালী বাস টার্মিনাল এলাকায় অভিযান পরিচালনা করেন। তিনি বলেন, সরকার নির্ধারিত অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে যে ধরনের ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন আমরা সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নিচ্ছি।