কিশোর অপরাধীর ডাটাবেজ করছে ডিএমপি

কিশোর অপরাধীদের এলাকাভিত্তিক তালিকা করে একটি ডাটাবেজ তৈরির সিদ্ধান্ত নিয়েছে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি)। নাগরিকদের এ সম্পর্কিত তথ্য দিয়ে সহযোগিতা করার অনুরোধ জানিয়েছ তারা। এর ফলে পুলিশের সংশ্লিষ্টরা কিশোর অপরাধ কমে আসবে বলে মনে করছেন।

ডিএমপির একাধিক থানা ও বিভাগের কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে এ বিষয়ে জানা গেছে।

গত কয়েক বছরে ঢাকায় কিশোর অপরাধীদের কারণে খুন, ছিনতাই, চাঁদাবাজি, ধর্ষণ, অপহরণের অনেক ঘটনা ঘটেছে। একটি ঘটনার পর পুলিশের সাঁড়াশি অভিযান শুরু হলে কিছু দিন ভাটা পড়ে, পরে আবারও সক্রিয় হয়ে ওঠে কিশোর গ্যাং।

পুলিশ জানিয়েছে, প্রাপ্তবয়স্ক অপরাধীরা কিশোরদের ব্যবহার করে অপরাধ করায়। তারা মারামারি, জমি দখল, প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে দল বড় করা, হিরোইজম দেখানো, ভয়ভীতি এবং এদের কেউ কেউ আবার মাদকের ব্যবসা নিয়ন্ত্রণ করতেও এই কিশোর গ্যাংয়ের জন্ম দিয়েছে।

শুধু কী তাই—টিকটক ও নাটক-সিনেমার আড়ালে অপরাধ করার জন্যও এই গ্যাং বানানো হচ্ছে বলে বিভিন্ন সময়ে গোয়েন্দাদের তথ্যে উঠে এসেছে।

ডিএমপি সূত্রটি আরও জানিয়েছে, কোনও কিশোর গ্যাং সদস্য এই পথ থেকে ফিরে ভালো হবে জানাতে পারলে তার নাম পরে তালিকা থেকে মুছে দেওয়া হবে। তবে এই সুযোগে থাকবে কিছু শর্ত। যা একজন কিশোর অপরাধীকে মেনে চলতে হবে। কথা দিয়ে আবারও অপরাধে জড়ালে তখন আর রেহাই থাকবে না। ঢাকার এলাকাভিত্তিক তালিকা প্রস্তুতের জন্য জনসাধারণের সাহায্য চেয়েছে ডিএমপি। যেকোনও এলাকার যে কেউ এই তালিকা প্রস্তুতের জন্য সংশ্লিষ্ট থানার পুলিশকে তথ্য দিতে পারবেন। কিন্তু সেই তথ্য হতে হবে সঠিক ও নির্ভুল।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, ইতোমধ্যে এই তালিকা তৈরির কাজ এগিয়ে নিতে নিজ নিজ থানা এলাকায় পুলিশের বিট অফিসারকে তথ্য দিয়ে সাহায্য করতে জনসাধারণকে বলা হচ্ছে। যিনি তথ্যটি দেবেন তার নাম অবশ্যই গোপন থাকবে। তবে অযথা বিভ্রান্ত করার চেষ্টা না করার অনুরোধও করা হয়েছে। তথ্য সরবরাহকারী ব্যক্তির কাছে এমন প্রমাণ থাকতে হবে, ওই কিশোর গ্যাংটি জনজীবনে বিশৃঙ্খলা তৈরি করছে।

গত ৫ বছরে খোদ ঢাকাতেই প্রায় অর্ধশতাধিক খুনের ঘটনা ঘটেছে। এলাকার নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখা, ধাওয়া পাল্টা-ধাওয়া, প্রতিপক্ষকে কুপিয়ে জখম, অস্ত্রের মহড়ার ঘটনাও কম ঘটেনি।

ঢাকায় গত ৫ বছরে র‍্যাব ও পুলিশের হাতেই অন্তত কয়েক সহস্রাধিক কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য গ্রেফতার হয়েছে। এদের প্রত্যেকের বয়স ১২ থেকে ১৭ বছর। রাজধানীসহ সারা দেশে র‍্যাবের হাতে শুধু ২০২১ সালে ২৯০ জন কিশোর অপরাধী অস্ত্রসহ গ্রেফতার হয়েছে।

ডিএমপির অতিরিক্ত উপ-কমিশনার নাদিয়া ফারজানা জানিয়েছে, গত কয়েক বছরে অনেক কিশোর গ্যাং সদস্যকে আটক ও গ্রেফতার করা হয়েছে। কিন্তু তাদের দৌরাত্ম্য থামছে না। বিষয়টি সমাধানের পথ খুঁজতেই কিশোর গ্যাংয়ের ডাটাবেজ তৈরি করা হচ্ছে। যে কেউ এলাকাভিত্তিক তথ্য গোপনে পাঠিয়ে দিতে পারবেন। তথ্য যাচাই-বাছাই করে তাদের মনিটর করবে পুলিশ ও গোয়েন্দারা।

তিনি আরও জানান, কেউ চাইলেই গ্যাং থেকে বের হয়ে আসতে পারবে। তবে বিষয়টি পুলিশকে অবগত করতে হবে যে সে গ্যাং থেকে বের হয়ে গেছে। বের হয়ে গেলে তার নামটাও ডেটাবেজ থেকে ডিলিট করে দেওয়া হবে।

সম্প্রতি বিষয়টি নিয়ে ডিএমপির এক মাসিক সভায় জোরালো আলোচনা করা হয়েছে। এরপর প্রতিটি থানার সংশ্লিষ্টকে এ নিয়ে কাজ করার নির্দেশ দেওয়া হয়।

ডিএমপির যুগ্ম কমিশনার (ক্রাইম) বিপ্লব বিজয় তালুকদার বলেন, 'আমরা ঢাকার বিভিন্ন এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের একটি ডাটাবেজ তৈরি করছি। সেই ডাটাবেজে কিশোর গ্যাংয়ের কোনও সদস্য গ্রেফতার হলে সে কী ধরনের অপরাধ করেছে তার বিস্তারিত তথ্য থাকবে।'