চলতি বছরের এপ্রিল মাসে টিপ পরাকে কেন্দ্র করে তেজগাঁও কলেজের থিয়েটার অ্যান্ড মিডিয়া স্টাডিজ বিভাগের প্রভাষক লতা সমাদ্দারকে হেনস্তা করার ঘটনায় অভিযুক্ত পুলিশ সদস্য নাজমুল তারেক দাবি করেছেন, কোনও প্রকার সাক্ষ্য-প্রমাণ ছাড়াই তাকে মিথ্যে অভিযুক্ত করা হয়েছে। বহিস্কৃত এই পুলিশ সদস্য সরকারের কাছে তার চাকরি ফেরত চয়েছেন।
মঙ্গলবার (৩০ আগস্ট) জাতীয় প্রেস ক্লাবের সামনে অবস্থান কর্মসূচি থেকে তিনি এ দাবি করেন। এসময় তিনি প্রভাষক লতা সমাদ্দারের শাস্তি দাবি করেন।
নাজমুল তারেক বলেন, ‘‘মূল ঘটনা হলো, সেদিন আমি উল্টা পথে মোটরসাইকেল চালিয়ে আসার সময় উনার (লতা সমাদ্দার) সঙ্গে আমার ধাক্কা লাগে। ওই সময় তিনি মোবাইলে কথা বলছিলেন। ধাক্কা লাগার সঙ্গে সঙ্গেই তিনি আমাকে উদ্দেশ করে বলেন— ‘এই বাস্টার্ড তুই উল্টা পথে আসলি কেন?’ আপনারা জানেন, কেউ যদি বিশেষ করে পুলিশ সদস্যকে উল্টো পথে যেতে দেখলে, সবাই ক্ষিপ্ত হয়ে ওঠে। তিনি সেই সুযোগটাই কাজে লাগিয়ছেন।’’
তিনি বলেন, ‘‘আমি মূলত উল্টো পথে আসায় অপরাধবোধের কারণে ঘটনাস্থলে বিষয়টাকে গুরুত্ব না দিয়ে, তার কাছে ক্ষমা চেয়ে দ্রুত চলে যাওয়ার চেষ্টা করি। কিন্তু তিনি আমার সোল্ডার ধরে টান দিয়ে বাইকসহ আমাকে ফেলে দেন। একজন পুলিশ সদস্যকে এভাবে টান দিয়ে ফেলে দেওয়াটা অন্যায়। আর এই বিষয়টাকে লুকানোর জন্য তিনি ‘টিপকাণ্ড’ সাজিয়েছেন।’’
নাজমুল তারেক বলেন, ‘এই ঘটনায় প্রথমে দুই সদস্য-বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি করা হয়। কমিটি টিপ বিষয়ে কোনও প্রমাণ পায়নি। কিন্তু অ্যাডিশনাল এসপি রহিমা আক্তার লাকি স্যার বিভাগীয় মামলায় আমাকে ভিডিও ফুজেটের মাধ্যমে প্রমাণ করেছেন যে, আমি অপরাধী। কিন্তু কী সেই ভিডিও ফুটেজ, যার মাধ্যমে আমাকে দোষী প্রমাণিত করা হলো। আমি চাই, জনগণের কাছে পরিষ্কার করুক— কোন ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে আমাকে অপরাধ করতে দেখেছেন। শুধুমাত্র বাইকে যাওয়া ভিডিও ফুটেজ দিয়ে তো প্রমাণ করতে পারে না আমি অপরাধী। ঘটানস্থলের ভিডিও ফুটেজ লাগবে।’
বহিষ্কৃত এই পুলিশ সদস্য বলেন, ‘‘যে দারোগা সিসি ক্যামেরা অ্যানালাইজ করেছেন, তাকে আমি জেরা করেছি, ঘটনাস্থল পর্যাবেক্ষণ করে আমাকে কী অবস্থায় দেখেছেন। উনি লিখেছেন, ‘ঘটনাস্থল সেজান পয়েন্টের কাছাকাছি মেইন রোডে মেট্রোরেলের পিলারের কাছে কোনও সিসি ক্যামেরা না থাকায় ভিডিও ফুটেজ পাওয়া যায়নি। আমি অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যকে আইডিয়াল হসপিটালের দিকে যেতে দেখেছি। সেই ভিডিও ফুটেজ পেয়েছি।’ তাহলে কোন ভিডিও ফুটেজের মাধ্যমে প্রমাণ হলো আমি অপরাধী।’’
ঘটনার এত দিন পর কেন এই দাবি নিয়ে এসেছেন জানতে চাইলে নাজমুল তারেক বাংলা ট্রিবিউনকে বলেন, ‘চলতি মাসের ১১ তারিখ আমাকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়। এতদিন আমার পক্ষে চাকরির নিয়ম অনুসারে ডিপার্টমেন্টের বিরুদ্ধে যাওয়া সম্ভব হয়নি। এখন আমি পুরোপুরি পুলিশের বাইরে।’
এসময় চাকরি ফেরতের দাবি জানিয়ে নাজমুল তারেক বলেন, ‘আমি জাতির কাছে এই লতা সমাদ্দারের বিচার চাই।’
প্রসঙ্গত, চলতি ২ এপ্রিল রাজধানীর গ্রিন রোডের বাসা থেকে কলেজে যাওয়ার পথে উত্ত্যক্তের শিকার হন তেজগাঁও কলেজের প্রভাষক ড. লতা সমাদ্দার। তিনি অভিযোগ করেন, ‘‘হেঁটে কলেজের দিকে যাওয়ার সময় হুট করে পাশ থেকে মধ্যবয়সী, লম্বা দাড়িওয়ালা একজন- ‘টিপ পরছোস কেন’ বলেই বাজে গালি দেন তাকে। ওই মধ্যবয়সী ব্যক্তির গায়ে পুলিশের পোশাক। ঘটনার প্রতিবাদ জানালে এক পর্যায়ে তার পায়ের ওপর দিয়েই বাইক চালিয়ে চলে যান সেই ব্যক্তি।’পরবর্তীতে এ ঘটনায় শেরেবাংলা নগর থানায় একটি অভিযোগ দায়ের করেন তিনি।
ঘটনার দুদিন পর ৪ এপ্রিল তেজগাঁও থানা পুলিশ অভিযুক্ত নাজমুল তারেককে শনাক্ত করে। এ ঘটনা প্রকৃত কারণ অনুসন্ধানে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়।
৯ এপ্রিল ডিএমপি কমিশনার শফিকুল ইসলাম জানান, রাজধানীর ফার্মগেট এলাকায় কলেজ শিক্ষিকাকে টিপ নিয়ে কটূক্তি এবং ইভটিজিংয়ের অভিযোগের প্রাথমিক সত্যতা পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, ‘প্রাথমিকভাবে এ ঘটনার প্রমাণ পাওয়া গেছে। অভিযোগের পাওয়া গেছে মর্মে তদন্ত কমিটি একটি প্রতিবেদন দিয়েছে। অভিযুক্ত প্রটেকশন বিভাগের কনস্টেবল নাজমুল তারেকের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা দায়ের করা হবে। তাকে শোকজ করা হবে। এজন্য যে প্রক্রিয়া অনুসরণ করা প্রয়োজন তাই করা হবে।’
এরপর বিভাগীয় তদন্ত কমিটির প্রতিবেদনের ভিত্তিতে গত ১১ আগস্ট নাজমুল তারেককে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়।