পুলিশের সহায়তায় ট্রেনচাপা থেকে বাঁচলো শিশু রিকশাচালক

রবিবার রাত সোয়া ১০টা। রাজধানীর কাওরানবাজারের এফডিসি রেলগেটে হঠাৎ চিৎকার। কমলাপুরমুখী ট্রেন আসছিল রেললাইন ধরে। সিগন্যালের নিরাপত্তাবেষ্টনীও দেওয়া ছিল। কিন্তু এরই ফাঁকে একটি ব্যাটারিচালিত রিকশা পার হতে গিয়ে আটকে গেল রেললাইনের ওপর।

ঘটনায় হতবিহ্বল চারপাশের মানুষ। সবাই সজোরে ডাকছিল রিকশাচালকের প্রাণ রক্ষায়। পাশেই দাঁড়ানো ছিল তেজগাঁও থানার টহল পুলিশের ভ্যান। কনস্টেবল রকিবুল দৌড়ে এসে প্রাণপণে চেষ্টা করলেন রিকশাসহ চালককে রেললাইন থেকে সরাতে। কিন্তু তিনি পারলেন না।

ওদিকে সর্বোচ্চ গতিতে ধেয়ে আসছে ট্রেন। শেষে চালক শিশুটিকে সরিয়ে নিতে সক্ষম হলেন তিনি। আর হর্ন বাজাতে বাজাতে আসা দুরন্তগতিতে চলা ট্রেন রিকশাটিকে হিঁচড়ে নিয়ে গেল অন্তত ২০০ গজ। তিন চাকার রিকশাটি ততক্ষণে দুমড়েমুচড়ে শেষ।

ঘটনাস্থলে থাকা তেজগাঁও থানা পুলিশের উপপরিদর্শক (এসআই) সালেহীন মিল্লাত তাওফিক বললেন, আমরা নিয়মিত ডিউটিতে ছিলাম। একপর্যায়ে আমরা রেললাইনে পাশে টহল দিতে দাঁড়াই। এর মধ্যেই ঘটে এই ঘটনা। আজ রকিবুলের কারণে শিশুটি বেঁচে গেল।

Train2

রিকশাচালক শিশু শাহীন তখনো বিমর্ষ। মুখে কোনও কথা আসছিল না তার। ট্রেন চলে গেলে ভিড় জমে উৎসুক মানুষের। নিজের অস্বস্তি কাটানোর চেষ্টার মধ্যেই জানালেন, তার নাম শাহীন। রিকশাটি নন্দিপাড়া এলাকার। এর বেশি কিছু বলার ছিল না শাহীনের। আয়ের একমাত্র উৎসটিকে চোখের সামনেই ধ্বংস হতে দেখে চোখ তার ছলছল করছে। থরথর কাঁপছিল তার ছোট শরীর। এসআই তাওফিক তাকে বিশ্রামের জন্য পাশে বসান। 

এ ঘটনার কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, চোখের সামনেই এ দুর্ঘটনাটি ঘটে গেল। এতো অল্প সময় ছিল যে রিকশাটিকে দুর্ঘটনার হাত থেকে রক্ষা করা গেল না কিছুতেই। ট্রেনের ধাক্কায় স্লিপারে আগুনের ফুলকি ছড়িয়ে চোখের পলকে রিকশাটি শেষ হয়ে গেল। তবে রিকশাচালক বেঁচে যাওয়ায় তাদের চেহারায় স্বস্তিও দেখা গেল।

কাওরানবাজার রেলক্রসিংয়ের গেটম্যান কবির জানান, রেলগেট ঠিকমতোই বন্ধ ছিল। কোনো একফাঁকে রিকশাটি রেললাইনের ওপর উঠে যায়। দ্রুতগতির আন্তনগর এক্সপ্রেস চলে আসায় দুর্ঘটনা ঠেকানো সম্ভব হয়নি। দুর্ঘটনাকবলিত রিকশাটির ধ্বংসাবশেষ গেটম্যানের হেফাজতে রাখা হয়েছে। রেল কর্তৃপক্ষের তদন্ত শেষে পরবর্তী পদক্ষেপ নেওয়া হবে বলে তিনি উল্লেখ করেন। 

সরেজমিনে রাত সাড়ে ১০টার পর আরও একাধিক ট্রেন যাওয়ার সময় রেলক্রসিংয়ের কারওয়ান বাজারমুখী দ্বিতীয় রেলগেটটি খোলা থাকতে দেখা যায়।