পদোন্নতি পেতে অধ্যাপক তাহেরকে খুন করান মহিউদ্দিন

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ছিলেন নিহত ড. এস তাহের আহমেদ। তিনি জীবিত থাকলে একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন কোনোদিন ‘অধ্যাপক’ হতে পারবেন না— এমন আশঙ্কা থেকেই তাহেরকে শিক্ষক মহিউদ্দিন খুন করেন বলে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ।

বুধবার (১৪ সেপ্টেম্বর) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বধীন আপিল বিভাগের সইযের পর প্রকাশিত ৬৮ পৃষ্ঠার পূর্ণাঙ্গ রায়ে এই পর্যবেক্ষণ তুলে ধরা হয়েছে।

এর আগে হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে করা আপিলের শুনানি শেষে গত ৫ এপ্রিল প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বধীন আপিল বিভাগ এ রায় ঘোষণা করেন।

রায়ে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূ-তত্ত্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক ড. এস তাহের আহমেদ হত্যা মামলায় একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলমের ফাঁসির আদেশ বহাল রাখেন আপিল বিভাগ। পাশাপাশি দুই আসামি নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সম্বন্ধি আব্দুস সালামের যাবজ্জীবন দণ্ডও বহাল রাখেন আদালত।

আদালতে আসামিদের পক্ষে শুনানি করেন আইনজীবী এস এম শাহজাহান ও ব্যারিস্টার ইমরান এ. সিদ্দিক। তাহেরের পরিবারের পক্ষে শুনানিতে ছিলেন অ্যাডভোকেট নাহিদ সুলতানা যুথি। আর রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন তৎকালীন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল বিশ্বজিৎ দেবনাথ।

প্রসঙ্গত, ২০০৬ সালের ১ ফেব্রুয়ারি রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের কোয়ার্টারের ম্যানহোল থেকে উদ্ধার করা হয় নৃশংসভাবে হত্যার শিকার অধ্যাপক তাহেরের মৃতদেহ। ৩ ফেব্রুয়ারি নিহতের ছেলে সানজিদ আলভি আহমেদ রাজশাহী মহানগরীর মতিহার থানায় অজ্ঞাতনামা ব্যক্তিদের আসামি করে একটি হত্যা মামলা দায়ের করেন।

অধ্যাপক তাহের হত্যা মামলায় ২০০৮ সালের ২২ মে রাজশাহীর দ্রুত বিচার আদালত ৪ জনকে ফাঁসির আদেশ ও ২ জনকে বেকসুর খালাস দেন। খালাসপ্রাপ্ত চার্জশিটভুক্ত ২ আসামি হলেন— রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রশিবিরের তৎকালীন সভাপতি মাহবুবুল আলম সালেহী ও আজিমুদ্দিন মুন্সী। ২০০৭ সালের ১৭ মার্চ এই ৬ জনকে অভিযুক্ত করে চার্জশিট দিয়েছিল পুলিশ।

পরে নিয়ম অনুযায়ী ডেথ রেফারেন্স (মৃত্যুদণ্ড নিশ্চিতকরণ) হাইকোর্টে আসে। পাশাপাশি আসামিরা আপিল করেন। সেসব আবেদনের শুনানি শেষে ২০১৩ সালের ২১ এপ্রিল অধ্যাপক ড. এস তাহের হত্যা মামলায় দুই আসামির ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল এবং অন্য দুই আসামির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেন হাইকোর্ট।

ফাঁসির দণ্ডাদেশ বহাল রাখা হয়েছে যে দুই আসামির তারা হচ্ছেন— একই বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড. মিয়া মোহাম্মদ মহিউদ্দিন ও নিহত ড. তাহেরের বাসার কেয়ারটেকার মো. জাহাঙ্গীর আলম। যে দু’জনের ফাঁসির দণ্ড কমিয়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডাদেশ দেওয়া হয়েছে তারা হচ্ছেন— মো. জাহাঙ্গীর আলমের ভাই নাজমুল আলম ও নাজমুল আলমের সমন্ধি আব্দুস সালাম।

পরে হাইকোর্টের সিই রায়ের বিরুদ্ধে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগে আপিল দায়ের করা হয়।