গণপিটুনি রোধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির অভিমত হাইকোর্টের

গণপিটুনিতে মানুষের মৃত্যুর ঘটনা রোধে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের বিষয়ে অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট। রবিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) বিচারপতি মো. রেজাউল হাসান ও বিচারপতি মো. আতাবুল্লাহর সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ স্বতঃপ্রণোদিত হয়ে এসব পর্যবেক্ষণ দেন।

রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় ছেলেধরা সন্দেহে তাসলিমা বেগম রেণুকে নির্মমভাবে পিটিয়ে হত্যার পর তিন বছর পেরিয়ে গেছে। তবে এখনও বিচার শেষ না হওয়ার বিষয়টি হাইকোর্টের নজরে আসে।

পরে এই মামলার ন্যায়বিচার নিশ্চিতে বিচারকাজ নিয়মিত তদারকি ও সাক্ষী হাজিরে যথাযথ পদক্ষেপ গ্রহণ করার জন্য সংশ্লিষ্ট আদালতের পিপি ও তদন্ত কর্মকর্তাকে নির্দেশ দিয়েছেন আদালত। একইসঙ্গে গণপিটুনিতে মানুষ নিহতের ঘটনা রোধে অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতে অভিমত দিয়েছেন হাইকোর্ট।

আদালত বলেছেন, গণপিটুনির নামে মধ্যযুগীয় বর্বরতায় মানুষ হত্যার লাইসেন্স দেওয়া হবে সমাজের যে কোনও মানুষের জন্য আতঙ্ক ও অনিরাপত্তার কারণ। প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে এরূপ ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হবে না। সর্বোপরি দুটি নিরপরাধ শিশুকে (রেণুর সন্তান) মাতৃহারা করার শাস্তি নিশ্চিত হওয়া অপরিহার্য।

পর্যবেক্ষণে হাইকোর্ট আরও বলেছেন, ভিকটিম (রেণু) পালিয়ে যাচ্ছিলেন না। তার হেফাজতে কোনও শিশুকে পাওয়া যায়নি। সে সময় কোনও অভিভাবক সন্তান হারানোর অভিযোগ না করা সত্ত্বেও আসামিরা বেআইনিভাবে দলবদ্ধ হয় এবং উসকানিমূলক স্লোগান দিয়ে স্কুলের প্রধান শিক্ষিকার কক্ষে অবৈধভাবে প্রবেশ করে। তারা ভিকটিমকে টেনে-হিঁচড়ে বের করে নিয়ে আসে। কোনও রকম অপরাধ না করা সত্ত্বেও তাকে বলপূর্বক আটক করে এবং আত্মরক্ষায় অক্ষম এ অসহায় মায়ের বাঁচার আকুতিকে উপেক্ষা করে তার শরীরে নির্মম ও নিষ্ঠুরভাবে উপর্যুপরি ও ক্রমাগত এমনভাবে আঘাত করে, যার উদ্দেশ্য ছিল তার মৃত্যু নিশ্চিত করা। ভিকটিমের মৃত্যু নিশ্চিত করার অভিন্ন উদ্দেশ্য বাস্তবায়নের প্রমাণ রয়েছে। সেজন্য প্রকৃত অপরাধীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত না হলে এ ঘটনার পুনরাবৃত্তি এবং আইন নিজের হাতে তুলে নেওয়ার প্রবণতা রোধ করা সম্ভব হবে না।

এছাড়া ন্যায়বিচার নিশ্চিত করার লক্ষ্যে এই মামলা চলাকালে সাক্ষীদের যথারীতি ও যথাসময়ে উপস্থিতি নিশ্চিত করাসহ প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও তদারকির জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চেয়ে রুল জারি করেছেন হাইকোর্ট। আগামী আট সপ্তাহের মধ্যে ঢাকার জেলা প্রশাসককে এই রুলের জবাব দিতে বলা হয়েছে। একইসঙ্গে আদেশের এই অনুলিপি সংশ্লিষ্ট আদালত, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সচিব, আইন মন্ত্রণালয় সচিব ও পুলিশ মহাপরিদর্শককে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছেন হাইকোর্ট।

এর আগে ২০১৯ সালের ২০ জুলাই সকালে রাজধানীর উত্তর বাড্ডায় মেয়েকে ভর্তি করতে স্থানীয় একটি স্কুলে যান তাসলিমা বেগম রেণু (৪০)। এ সময় তাকে ছেলেধরা সন্দেহে গণপিটুনিতে হত্যা করা হয়। ঢাকার ষষ্ঠ অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ আদালতে অভিযুক্ত ১৩ আসামির বিরুদ্ধে বিচারকাজ তিন বছরেও শেষ হয়নি। বিচারকাজ শেষ না হওয়া নিয়ে প্রতিবেদন হাইকোর্টের নজরে আসে। এরপরই এ বিষয়ে পর্যবেক্ষণ দিয়েছেন আদালত।