সাংবাদিক তোয়াব খান আর নেই

একুশে পদক পাওয়া বর্ষীয়ান সাংবাদিক, দৈনিক বাংলার সম্পাদক তোয়াব খান আর নেই। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর। বার্ধক্যজনিত জটিলতায় অসুস্থ হয়ে পড়লে তাকে রাজধানীর ইউনাইটেড হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। শনিবার (১ অক্টোবর) বেলা ১২টা ৪০ মিনিট কর্তব্যরত চিকিৎসক তাকে মৃত ঘোষণা করেন। দৈনিক বাংলার নির্বাহী সম্পাদক শরিফুজ্জামান পিন্টু এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।

তোয়াব খানের মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। শোক বার্তায় তিনি বলেছেন, ‘মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন তোয়াব খান। স্বাধীনতার পর তিনি দৈনিক বাংলার সম্পাদক, প্রধান তথ্য কর্মকর্তা, প্রেস ইন্সটিটিউট অব বাংলাদেশ-এর মহাপরিচালক এবং দৈনিক জনকণ্ঠসহ গণমাধ্যমের বিভিন্ন ক্ষেত্রে দেশপ্রেম এবং নিষ্ঠার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করেন। আজীবন সংগ্রামী এ গুণী সাংবাদিক তার স্বীয় কর্মের মাধ্যমে স্মরণীয় হয়ে থাকবেন।’

প্রধানমন্ত্রী তোয়াব খানের আত্মার মাগফিরাত কামনা করেন এবং তার শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান।

এই শব্দযোদ্ধার মৃত্যুতে গভীর শোক ও দুঃখ প্রকাশ করেছেন সেতুমন্ত্রী ও বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদেরও। তিনি এক শোকবার্তায় তোয়াব খানের শোকসন্তপ্ত পরিবারের সদস্যদের প্রতি গভীর সমবেদনা জানান এবং তার বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করেন। 

বরেণ্য এই সাংবাদিকের মৃত্যুতে শোক জানিয়ে জাতীয় ক‌বিতা প‌রিষদের সভাপ‌তি ও ঢাকা বিশ্ববিদ‌্যালয়ের প্রো-ভাইস চ‌্যা‌ন্সেলর ড. মুহাম্মদ সামাদ বলেছেন, ‘বাংলা‌দে‌শের সংবাদপত্র জগ‌তের উজ্জ্বল তোয়াব খা‌নের অবদান জা‌তি শ্রদ্ধার স‌ঙ্গে স্মর‌ণে রাখ‌বে।’

মুক্তিযুদ্ধে বিজয়ের পর ‘দৈনিক পাকিস্তান’ থেকে বদলে যাওয়া দৈনিক বাংলার প্রথম সম্পাদক ছিলেন তোয়াব খান। ১৯৭২ সালের ১৪ জানুয়ারি দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব গ্রহণ করেছিলেন তিনি।

১৯৫৩ সালে সাপ্তাহিক জনতার মাধ্যমে সাংবাদিকতায় তোয়াব খানের হাতেখড়ি। এরপর দৈনিক সংবাদে কাজ করেন।

১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত তৎকালীন প্রধানমন্ত্রী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেসসচিব ছিলেন তোয়াব খান। দেশের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও প্রেস ইনস্টিটিউট অব বাংলাদেশের (পিআইবি) মহাপরিচালকের দায়িত্ব পালন করেছেন তিনি।

দৈনিক বাংলায় যোগ দেওয়ার আগে দৈনিক জনকণ্ঠের উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই সাংবাদিক। ২০১৬ সালে একুশে পদকে ভূষিত হন তিনি। এরপর গত বছরের ৬ অক্টোবর নতুন ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন তিনি।

মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রে শব্দসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন তোয়াব খান। তখন তার আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচারিত হয় ‘পিন্ডির প্রলাপ’ নামের একটি অনুষ্ঠান।