এএসপি আনিসুল হত্যা মামলা: পুনর্তদন্তের প্রতিবেদন জমা ২ নভেম্বর

রাজধানীর আদাবরে মাইন্ড এইড হাসপাতালের কর্মচারীদের মারধরে পুলিশের সিনিয়র এএসপি আনিসুল করিম শিপন নিহতের ঘটনায় দায়ের হওয়া হত্যা মামলায় পুনর্তদন্ত প্রতিবেদন পেছালো। প্রতিবেদন জমা দেওয়ার জন্য আগামী ২ নভেম্বর পরবর্তী দিন ধার্য করেছেন আদালত।

সোমবার (৩ অক্টোবর) মামলাটি পুনর্তদন্ত প্রতিবেদন দাখিলের দিন ধার্য ছিল। কিন্তু মামলার তদন্ত সংস্থা পুলিশ ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন (পিবিআই) প্রতিবেদন দাখিল করতে না পারায় ঢাকা মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মইনুল ইসলাম প্রতিবেদন দাখিলের জন্য নতুন এ দিন ধার্য করেন।

গত ৮ মার্চ ঢাকার চিফ মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট (সিএমএম) আদালতে মামলার তদন্ত কর্মকর্তা ও আদাবর থানার পরিদর্শক মো. ফারুক মোল্লা জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার ডা. আব্দুল্লাহ আল মামুন ও হাসপাতালটির পরিচালক আরিফ মাহমুদসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে অভিযোগপত্র দাখিল করেন।

অভিযোগপত্রে আসামি ডা. নুসরাতের নাম না আসায় আনিসের বাবা ফাইজুদ্দীন আহম্মেদ মামলাটি পুনরায় তদন্তের আবেদন করেন। পরে আদালত আবেদন মঞ্জুর করে আবারও পিবিআইকে তদন্ত করে প্রতিবেদন দাখিলের নির্দেশ দেন।

অভিযোগপত্রে অপর আসামিরা হলেন, ফার্মাসিস্ট তানভীর হাসান, কর্মকর্তা সাখাওয়াত হোসেন, সাজ্জাদ আমিন, ফাতেমা খাতুন, হাসপাতালের সমন্বয়ক রেদোয়ান সাব্বির, হাসপাতালের কর্মচারী মাসুদ খান, জোবায়ের হোসেন, তানিফ মোল্লা, সজীব চৌধুরী, অসীম কুমার পাল, লিটন আহম্মেদ, সাইফুল ইসলাম ও চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন।

অভিযোগপত্রে বলা হয়, এএসপি আনিসুল করিম সময়মতো বিভাগীয় পদোন্নতি না পাওয়ায় তিনি হতাশাগ্রস্ত হয়ে পড়েন। ঘটনার তিন থেকে চার দিন আগে চুপচাপ হয়ে যান। বিষয়টি পরিবারের জন্য দুশ্চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়ায়। তখন এএসপি আনিসুল করিমকে মনোচিকিৎসক দেখানোর সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়। ঘটনার আগের দিন আনিসুল করিমের একজন ভগ্নিপতি জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের রেজিস্ট্রার চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুনের সঙ্গে মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করেন। তখন তিনি রোগীর স্বজনদের পরামর্শ দেন, সরকারি মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটের চিকিৎসা ব্যবস্থা তেমন উন্নত না। রোগীকে সেবা করার মতো পর্যাপ্ত জনবল সেখানে নেই। তাই রোগীকে আদাবরের মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি করা হলে চিকিৎসা ভালো হবে। তিনি নিয়মিত সেখানে চেম্বার করেন।

এরপর ৯ নভেম্বর সকাল ৮টার সময় এএসপি আনিসুল করিমকে জাতীয় মানসিক স্বাস্থ্য ইনস্টিটিউটে নিয়ে আসা হয়। চিকিৎসক আবদুল্লাহ আল মামুন আনিসুল করিমকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে ভর্তি করার পরামর্শ দেন। নিজে হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহমুদ জয়কে ফোন দেন। পরে বেলা সাড়ে ১১টার সময় আনিসুলকে মাইন্ড এইড হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। সেখানে নিয়ে আসার পর সবার সঙ্গে স্বাভাবিক আচরণ করেন। তবে বেলা ১১টা ৪০ মিনিটের সময় হাসপাতালের পরিচালক আরিফ মাহমুদ সিগারেট খাওয়ার কথা বলে আনিসুলকে হাসপাতালের দোতলায় নিয়ে যান। আরিফ ছাড়াও রেদোয়ান, মাসুদ খান, জোবায়ের, তানভীর, তানিফ, সজীব, অসীম, লিটন ও সাইফুল চিকিৎসা দেওয়ার কথা বলে দ্বিতীয় তলার একটি কক্ষে আনিসুলকে নিয়ে যান। কক্ষে নিয়ে যাওয়ার পরপরই আনিসুলকে মারধর করে ফেলে দেওয়া হয়। তখন আসামি মাসুদ খান ও তানভীর হাসান রোগীর পিঠের ওপর চেপে বসেন। আর অসীম আনিসুলের দুই হাত পিঠ মোড়া দিয়ে বেঁধে ফেলেন। সজীব আনিসুলের ঘাড়ে কনুই দিয়ে আঘাত করেন। তানিফ মোল্লা ঘাড় ও মাথায় আঘাত করেন ও আনিসুলের মাথার ওপর চেপে বসেন। লিটন, জোবায়ের ও সাইফুল রোগীর পা ও শরীর চেপে ধরে রাখেন। এর কিছুক্ষণ পর আনিসুল করিম নিস্তেজ হয়ে পড়েন।

এ ঘটনায় পরের দিন (১০ নভেম্বর) সকালে আদাবর থানায় নিহতের বাবা ফয়েজ উদ্দিন বাদী হয়ে মামলাটি দায়ের করেন।

এএসপি আনিসুল করিম শিপন ৩১তম বিসিএস পুলিশে নিয়োগপ্রাপ্ত কর্মকর্তা ছিলেন।